ধারাবাহিকভাবে হোমিসাইডের ক্রাইমসিন প্রসেস ইনভেস্টিগেশন পোস্ট করা হবে। অসংখ্য বই ঘাটাঘাটি করে লেখা, আশাকরি গুরুত্বপূর্ণ বা বড়সর কোন ভুলভ্রান্তি হবেনা। লেখার সুবিধার্থে ইনভেস্টিগেশন প্রসেসগুলোকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে দিচ্ছিঃ
I. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
II. ক্রাইমসিনের প্রাথমিক কাজ।
III. কাগজপত্র তৈরি ও কার্যপ্রণালী এবং এভিডেন্স কালেকশন প্রসেস।
IV. মৃতদেহ অপসারণ এবং ফটোগ্রাফি রেকর্ড।
V. ভিকটিমের প্রোফাইল গঠন ও সাক্ষী।
VI. সর্বশেষ প্রক্রিয়া।
I. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
১. গ্লাভস
২. ফ্লাশলাইট
৩. টর্চলাইট
৪. ডিজিটাল ক্যামেরা সাথে এক্সট্রা ব্যাটারী। ভিডিও করার প্রয়োজন হয় তাই এক্ষেত্রে ডিএসএলআর বেটার। তবে সাথে এক্সট্রা পোলারয়েড ক্যামেরা ও ফ্লিম রাখতে হবে।
৫. ক্যামেরা লেন্সঃ ৩৫ এমএম।
৬. রেডিও, সেলফোন। বাহিরের দেশে পেজার ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে ওয়্যারলেস রেডিও আর সেলফোনের ব্যবহার বেশি।
৭. মেজরমেন্ট ইনস্ট্রমেন্ট। গজ ফিতা, স্কেল / রুলার।
৮. নোটবুক। বর্তমান প্রেক্ষিতে মোবাইলের নোটবুক ভালো তবে মোবাইলে ডাটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৯. কলম, মার্কার, পেন্সিল।
১০. বডি ব্যাগ এবং বডি ব্যাগ ট্যাগ।
১১. নিজের অফিসিয়াল আইডেন্টিফিকেশন। বিজনেস কার্ড।
১২. হাতঘড়ি।
১৩. এভিডেন্স কালেকশন ইকুপমেন্ট, ব্লাড স্যাম্পল কালেকশন টিউব, ব্লাড স্যাম্পল টেস্ট কিট, সিরিঞ্জ ও সুই।
১৪. বিভিন্ন আকৃতির কাগজের ব্যাগ, এনভেলাপ।
ক্রাইমসিন ইনভেস্টিগেশনঃ (হোমিসাইড) |
১৫. বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টিকের ব্যাগ, এনভেলাপ।
১৬. এভিডেন্স টেপ (এভিডেন্স মার্কিং কাজে ব্যবহার করা) এবং এভিডেন্স সিল।
১৭. রেইনকোট, ছাতা। একসেট এক্সট্রা ড্রেস, শার্ট, প্যান্ট, জুতা, মোজা সব সহ।
১৮. মেডিক্যাল ইকুপমেন্ট। ফার্ষ্ট এইড কিট।
১৯. ডিসপোজেবল পেপার। জাম্পস্যুট, হেয়ার কভার, ফেস সিল্ড।
২০. থার্মোমিটার।
২১. ওয়াটারলেস হ্যান্ডওয়াশ।
২২. ক্রাইমসিন টেপ (মুভিতে এই হলুদ রঙের টেপ প্রচুর ব্যবহার করা হয়)।
২৩. লোকাল ম্যাপ।
২৪. লেটেন্ট প্রিন্ট কিট।
২৫. গানশট এনাইসিস কিট। (EDS/SEM)
২৬. বুট। (খারাপ আবহাওয়ার উপযোগী)
২৭. হ্যান্ড লেন্স (ম্যাগনিফাই গ্লাস)
২৮. গ্যাস মাস্ক।
২৯. বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট।
৩০. টেপ রেকর্ডার।
৩১. হ্যান্ড টুলস। বোল্ট কাটার, ক্রু ড্রাইভার, হাতুড়ি, বেলচা, ব্রাশ, শাবল, লক পিকিং ইকুপমেন্ট।
৩২. পোকামাকড় দমন করার জন্য স্পে, ক্যাপ।
৩৩. বহন করা সবকিছুর লিস্ট।
৩৪. বোল্ট ব্যাগ / ডুফেল ব্যাগ (উপরোক্ত সবকিছু বহন করার জন্য)।
II. ক্রাইমসিনের প্রাথমিক কাজঃ
ক. পরিচয় ও নিরাপত্তা।
খ. অপরাধ সংগঠনের স্থান পরীক্ষণ।
গ. মৃত্যু নিশ্চিতায়ন।
ঘ. ব্রিফিং।
ঙ. এরিয়া চেকওভার।
চ. সমন্বয় সাধন।
ছ. আইন।
প্রতিধাপের কার্যপ্রণালী যথাসম্ভব সংক্ষিপ্তে যথাক্রমে দেওয়া হলোঃ
ক. পরিচয় ও নিরাপত্তাঃ ইনভেস্টিগেটর কে তদন্ত স্থলে এসে সর্বপ্রথম নিজের পরিচয় দিতে হবে, সাথে সাথে তার পার্টনারের পরিচয় নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে এই কাজটা সবসময় চার্জে যে ইনভেস্টিগেটর থাকবে তাকে দিতে হবে। সাথে সাথে সেখানকার ইনচার্জ ওসি / ইন্সপেক্টরকে খুঁজে নিতে হবে।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. অপরাধ সংগঠিত স্থানের ইনচার্জকে খুঁজে বের করা।
২. নিজের পরিচয় দেওয়া ও আইডি কার্ড দেখানো। সাথে সাথে কোন এজেন্সি থেকে এসেছে তা মুখে উল্লেখ করা (জানা থাকলেও)।
৩. পার্টনারের পরিচয় প্রদান।
৪. ইনভেস্টিগেশনের ইকুপমেন্টগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং উপযুক্ত স্থানে রাখা।
৫. রেকি করা। কারন চারদিক না ঘুরে দেখলে স্থানের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবেনা। এছাড়া বাংলাদেশের পাবলিক ক্রাইমসিনে খুব বেশি ঘুরঘুর করে। তাদের অসচেতনতার কারনে দূর্ঘটনা ঘটা এবং প্রমান নষ্ট হওয়া অসম্ভব না।
৬. গনমাধ্যম যথাযথ দূরে অবস্থান নিয়েছে কিনা নিশ্চিত করা।
খ. অপরাধ সংগঠনের স্থান পরীক্ষণঃ মূলত উপরের লেখা কাজগুলোর সাথে সাথে এ অংশের কাজ শুরু হয়। এই অংশের মূল টার্গেট হচ্ছে ক্রাইমসিনের সেফটি নিশ্চিত করা। কোন ধরনের হতাহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটবে না এটা নিশ্চিত করাটাই এ অংশের মূল লক্ষ্য।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. ক্রাইমসিনের বাউন্ডারি দেওয়ার জন্য বেরিয়ার শিটের ব্যবহার করা।
২. গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পার্কের কাছে ঘটনা ঘটলে সেখানের পুরো এরিয়া খালি করা। সম্ভব চারদিকের অন্তত ছয়শো মিটার খালি রাখা গুরুত্বপূর্ণ (ডায়া, নট রেডিয়াস)।
৩. প্রটেকটিভ ডিভাইস ব্যবহার। বায়ো কেমিক্যাল ক্ষেত্রে গ্যাস মাস্ক, প্রয়োজনে বায়োহ্যাজার্ড প্রটেকশন স্যুট ব্যবহার করা।
৪. পশুপাখি দূরে সরানো। কুকুরও অনেক প্রমান নষ্ট করতে পারে। আমি একটা ছবি দেখছিলাম যেখানে লাশ ফেলে যাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে বন্য প্রানী লাশের মাঝখানের অর্ধেক খেয়ে ফেলেছিলো। পড়ে দেখা গিয়েছিলো সেটা কুকুরের কাজ ছিলো।
৫. ক্রাইমসিনের প্রবেশকৃত সবার পাসের ব্যবহার এবং নিশ্চিত করা। যেমন দমকল বাহিনীর প্রয়োজন হলে তাদের জন্য পাস থাকে এবং সেটার ব্যবহার যেন হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। ক্রিমিন্যালের প্রয়োজন হলে সে দমকল বাহিনীর পোশাক পরে প্রবেশ করতে পারে। ব্লাক মার্কেটে এসব সহজপ্রাপ্য। সুতরাং এ বিষয় নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ।
৬. প্রয়োজন হলে এন্টি বোম্বিং স্কোয়াড ব্যবহার করা। এটা অবশ্যই ইনভেস্টিগেটরের ক্রাইমসিনে প্রবেশের পূর্বে পরীক্ষা করাতে হবে।
৭. ক্রাইমের জন্য সেখানকার ট্রাফিকে কোন সমস্যা না হয় ও ডেডবডি অপসারণ করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রয়োজন অনুসারে পদক্ষেপ তখনই নিতে হবে। সব কাজেই সময় লাগে, তাই ক্রাইমসিনে প্রবেশের পূর্বে সেসব ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে মনোযোগ নষ্ট করার জন্য ট্রাফিক আর মানুষের ভিড় যথেষ্ঠ।
৮. পয়জন গ্যাস আছে কিনা নিশ্চিত করা।
গ. মৃত্যু নিশ্চিতায়নঃ ক্রাইমসিনে প্রবেশের পর প্রথম কাজ হচ্ছে ডেডবডির কাছে যাওয়া এবং মৃত্যু নিশ্চিত করা। যদিও লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তবুও লাশ পরীক্ষা করে মৃত্যু ঘোষনা করতে হবে।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. লাশ খুঁজে বের করা।
২. পালস চেক, শ্বাস পরীক্ষা, রিগর মর্টিস পরীক্ষা এবং রিফ্লেক্স চেক।
৩. পূর্বে যে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে তার সাথে কথা বলা এবং তার রিপোর্ট, ডকুমেন্ট গ্রহণ। ডকুমেন্টে যেন মৃত্যুর প্রাথমিক কারন (সম্ভাব্য), সময় ও তারিখ উল্লেখ থাকে।
৪. আর হ্যাঁ, মৃত্যু ঘোষনা যেন মিস না হয়। কারন মূল ইনভেস্টিগেটর মৃত্যু ঘোষনা না দেওয়া পর্যন্ত অটোসপি করার জন্য অনুমোদন পাবে না। লাশ মরে পঁচে গেলেও না।
ঘ. ব্রিফিংঃ ইনভেস্টিগেটর কে অবশ্যই তদন্তের কাজের সহযোগী টিমকে আনতে হবে এবং তাদের নির্দেশনা দিতে হবে। কে কোন এজেন্সির সেটাও জেনে নিতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, মর্গে নেওয়ার জন্য মিনিভ্যান ও কর্মচারী, ফরেনসিক টিম, ফটোগ্রাফি করার দায়িত্ব কাদের উপর এসব জানা থাকতে হবে এবং তাদের থেকে কিভাবে রিপোর্ট সংগ্রহ হবে সেটা পরিষ্কারভাবে জানতেই হবে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট নিশ্চিত করাও জরুরি।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. অপরাধ সংগঠন হওয়া স্থান ম্যাপের কোথায় জানা, সেখানের প্রবেশ করার স্থান ও ইমার্জেন্সি এক্সিট (যদি থাকে) সম্পর্ক নিশ্চিত হওয়া।
২. অপরাধ সংগঠন হওয়ার স্থানের ডকুমেন্ট তৈরী করা। উদাহরণঃ ঠিকানা, ম্যাপে স্থান, বিল্ডিংয়ের ঠিকানা, কাছাকাছি বিল্ডিং বা পরিবেশ সম্পর্কে ধারনা।
৩. কোন ধরনের অপরাধ সেটা নিশ্চিত করা। খুন নাকি আত্মহত্যা? সন্দেহজনক মৃত্যু নাকি স্বাভাবিক?
৪. সেখানের উইটনেসকে জিজ্ঞাসাবাদ। শত্রু আছে কিনা বা মৃত্যুর কারন কি হতে পারে সেগুলোর সম্ভাব্য কারন শোনা।
৫. প্রাথমিক উইটনেস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ।
ঙ. এরিয়া চেকওভারঃ আমার কাছে এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে হয় একারনে যে এই অংশ থেকে প্রমান সংগ্রহ মূলত করা হয়। যদি সাক্ষী গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর কিন্তু এই অংশের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি। মূলত অপরাধ সংগঠন হওয়া স্থানের চারপাশ ঘুরে দেখা এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা এই অংশের কাজ।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. বাউন্ডারি শিটের ভিতরে চারদিকে হাটা।
২. খুনি বা অপরাধী কোন স্থান থেকে প্রবেশ করেছে বা বের হয়েছে মার্ক করা।
৩. দেখা যায় এমন কিছু যা প্রমাণ হতে পারে সেটা সংরক্ষণ করা। (এভিডেন্স সংগ্রহ করার পদ্ধতি নিয়ে পরবর্তীতে লিখবো)
৪. প্রমান সংগ্রহ করার পূর্বে অবশ্যই ছবি তোলা এবং প্রমান সংগ্রহ করার পরেও সে স্থানের ছবি তোলা। (কি ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে এবং লেন্স সেটা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)
৫. অপরাধ সংগঠনের স্থান দূর থেকে দেখা। প্রয়োজনে ছবি তুলে রাখা।
চ. সমন্বয় সাধনঃ সকল প্রমান সংগ্রহ করা, সেগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে সংগ্রহ এবং উপযুক্ত ফরেনসিক পরীক্ষা করা। এসব সিরিয়ালি হচ্ছে এটা নিশ্চিত করাই সমন্বয় অংশের কাজ।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. খুনের স্থান ও ইনভেস্টিগেটরের আগমনের সময় সব উল্লেখ করা ডকুমেন্ট তৈরি।
২. কোন ধরনের এভিডেন্স পরীক্ষার বা সংগ্রহের জন্য কোন এজেন্সিতে পাঠানো হবে সেটা জানা এবং পরীক্ষার জন্য যথাযথ স্থানে পাঠানো (যদি এভিডেন্স ইনভেস্টিগেটরকেই সংগ্রহ করতে হয়)।
৩. এভিডেন্স চিন্হিত, সংগ্রহ ও যথাযথ নিরাপত্তার সাথে যথাযথ কন্টেনারে সংরক্ষণ করা হয়েছে নিশ্চিত করা। এবং নেম লেভেল (কন্টেনারের গায়ে নির্দিষ্ট স্থানে নাম লেখা থাকে) লাগানো হয়েছে কিনা খেয়াল রাখা।
৪. এভিডেন্স কোথায় থেকে (স্থান) সংগ্রহ করা হয়েছে, কোন সময়ে কি অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়েছে ডকুমেন্ট করা।
৫. সাক্ষী, প্রতিবেশীর ঠিকানা নাম ও তাদের যোগাযোগের নম্বর সংগ্রহ এবং ডকুমেন্ট করা।
ছ. আইনঃ লাশ সংগ্রহ করা থেকে সেখানকার যাবতীয় কর্মকান্ড সেই স্থানের আইন মেনে করা হচ্ছে কিনা সেটা লক্ষ রাখা এবং পোস্ট মর্টেম করার প্রয়োজন হলে পরিবারকে জানানো, দরকার হলে অনুমতি নেওয়া। কারন ধর্মের জন্য বিষয়টা ক্ষেত্রবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও সিরিয়াস কেসে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়না, তবে সন্দেহজনক কেসে পরিবারের লিখিত অনুমতি লাগে আইন অনুসারে।
কর্মপদ্ধতিঃ
১. কোন বাসাবাড়ির সার্চ করার দরকার হলে সার্চ ওয়ারেন্ট সংগ্রহ করা।
২. স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তজাতিক আইন মান্য করা।
৩. মেডিক্যাল পরীক্ষকের অনুমোদন নিশ্চিত করা।