ইজমেন্ট রাইট বা সুখাধিকার:
ইজমেন্ট বা সুখাধিকার বলতে এমন এক সুবিধাভোগী স্বত্বের অধিকারকে বুঝায় যা দ্বারা কোনো জমির মালিক বা দখলকার তা জমির সুবিধাজনক ভোগের জন্য অপর কোনো ব্যক্তির জমির উপর দিয়ে কিছু করতে বা করা অব্যাহত রাখতে, কোনো কিছু নিবৃত্ত করতে বা নিবৃত্ত অব্যাহত রাখতে পারে । (১৯৮২ সালের
ইজমেন্ট রাইট এক্ট এর ৪ ধারা)
ব্যবহার সিদ্ধ বা সুখাধিকার অর্জন সম্পর্কে ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি শান্তিপূর্ণভাবে এবং প্রকাশ্যভাবে কোনো ব্যক্তির ভূ-সম্পত্তি বাঁধাহীন ভাবে ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ২০ বৎসর কাল ধরে ভোগ দখল করে থাকলে তাতে তার পথ চলার অধিকার জনিত স্বত্ব অর্জিত হয় ।
ব্যবহার সিদ্ধ বা সুখাধিকার অর্জনের জন্য কোন কোন উপাদানের উপস্থিতি আবশ্যক অথবা তামাদি আইনে কিভাবে ইজমেন্ট এর অধিকার অর্জন করা যায়:
তামাদি আইনের ২৬ ধারাটি বিশ্লেষণ করলে প্রতিয়মান হয় যে, ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার অর্জন করতে হলে নি¤œ বর্ণিত শর্তাবলী পূরণ করতে হয়:
- ১) প্রকাশ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করতে হবে।
- ২) অনুরূপ ভোগ দখল অধিকার হিসাবে করতে হবে।
- ৩) কোন রকম বাধা কিংবা আপত্তি ব্যতীত উক্ত ভোগ দখল করে যেতে হবে।
- ৪) অনুরুপ ভোগ দখল ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক হলেও চলবে।
- ৫) সাধারণ সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ বছর এবং সরকারী সম্পত্তির বেলায় ষাট বছর অনুরূপ ভোগ দখল করতে হবে।
- ৬) তামাদির সময় সমাপ্ত হবার দু’বছর সময়ের মধ্যেই ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার সম্পর্কিত মামলা দায়ের করতে হবে
ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারী সম্পত্তি এবং সাধারণ সম্পত্তি অর্জনের জন্য কতদিন সময় লাগে: ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারী সম্পত্তি ক্ষেত্রে ৬০ বছর এবং সাধারণ সম্পত্তি অর্জনের জন্য ২০ বছর সময় লাগে।
ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার নষ্ট হতে কতদিন সময লাগে:
দুই বছর পর্যন্ত একাধিকক্রমে ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার প্রয়োগ বাধা প্রাপ্ত হয়ে থাকলে তার বিলুপ্তি ঘটে থাকে।
উল্লেখ্য যে, ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার লাভ করতে সময় প্রয়োজন হয় বিশ বছর এবং উক্ত অধিকার লোপ পেতে সময়ের প্রয়োজন হয মাত্র দুই বছর। তাছাড়া ইজমেন্ট আইন বা ব্যবহারসিদ্ধ আইনের বিধান মতে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার বিলুপ্ত হয়।
২৭ ধারায় বলা হয়েছে যে,ব্যবহার জনিত অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দখলকার যদি জীবনস্বত্বে বা ৩ বছরের অধিককালের ইজারা স্বত্বে দখলকার হয়, তবে ২৬ ধারানুযায়ী মেয়াদ গণনার সময় জীবন স্বত্বাধিকারী বা ইজারা স্বত্বের অধিকারী যতদিন দখলকার ছিলেন সে সময়টা বাদ যাবে এবং সম্পূর্ণ স্বত্বের মালিক সংশ্লিস্ট জমির দখল নেওয়ার পর ৩ বছরের মধ্যে ব্যবহারজনিত অধিকারীকে বাধা প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার জনিত অধিকারীর কোন দাবী টিকবে না।
কখন নির্ধারিত সময় থেকে দেরি করলেও মামলা বা আপীল করা যাবে-
খরসরঃধঃরড়হ অপঃ, ১৯০৮ এর ৬ ধারা কিছু ক্ষেত্রে কোন মামলা বা আপীলের জন্য নির্ধারিত সময় দেরি করার বা সময় গণনাতে দেরি করার বৈধতা দিয়েছে। এগুলো নিম্নরূপঃ
- ১। যদি মামলা বা কার্যধারা দায়ের করার কিংবা ডিংক্রী জারির জন্য দরখাস্ত দাখিলের অধিকারী ব্যক্তি, যে সময় হতে তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হইবে, সেই সময় নাবালক, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি থাকে, সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি তার উক্ত অপারগতার অবসান হবার পর, অপারগতা না থাকলে, প্রথম তফসিলের তৃতীয় স্তম্ভে অথবা ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৪৮ ধারায় বর্ণিত যে মেয়াদের মধ্যে সে ওটা করতে পারতো, সেই মেয়াদের মধ্যে মামলা বা কার্যধারা দায়ের কিংবা দরখাস্ত দাখিল করতে পারবে।
- ২। যদি অনুরূপ কোনো ব্যক্তি, যে সময় হইতে তামাদির মেয়াদ গণনা করিতে হইবে, সে সময় উপরে বর্ণিত যেই কোনো দুইটি অপারগতার অবসান হইবার পূর্বেই সে আরেকটি অপারগতায় পতিত হয়, সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি তাহার উভয় অপারগতার অবসান হইবার পর, অপারগতা না থাকিলে, উপরে বর্ণিত যে মেয়াদের মধ্যে সে ওটা করতে পারতো, সেই মেয়াদের মধ্যে মামলা দায়ের কিংবা দরখাস্ত দাখিল করতে পারবে।
- ৩। যদি অনুরূপ কোনো ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত তাহার অপারগতা অব্যাহত থাকে, সেইক্ষেত্রে তাহার আইনানুগ প্রতিনিধি ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর অপারগতা না থাকিলে উপরে বর্ণিত যে মেয়াদের মধ্যে ওটা করা যেতো, সেই মেয়াদের মধ্যে মামলা দায়ের কিংবা দাখিল করতে পারবে।
- ৪। যদি উপরোক্ত ব্যক্তির মৃত্যু তারিখে তাহার আইনানুগ প্রতিনিধি অনুরূপ কোনো অপারগতায় পতিত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের ক্ষেত্রেও (১) ও (২) উপধারায় বিধৃত বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।