তামাদি আইন বা Limitation Act কাকে বলে:
মামলা দায়েরের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া থাকে ঐ নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলে আর মামলা করা যায না ঐ নির্দিষ্ট সময়সীমাকে তামাদি আইন বলে।
তামাদি একটি আরবী শব্দ এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন কিছু বিলুপ্ত হওয়া কিংবা বাধা প্রাপ্ত হওয়া। মূলত ১৯০৮ সালের তামাদি আইন একটি পদ্ধতিগত আইন। এই আইন একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে কোন আইনগত অধিকারের বিলুপ্তি ঘটায়। কতদিনের মধ্যে কোন মামলার আপীল , রিভিউ বা রিভিশনের জন্য আদালতে দরখাস্ত পেশ করতে হবে। কখন বিলম্ব মৌকুফ করা যাবে ইত্যাদি বিষয় তামাদি আইনে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
তামাদি আইন বা Limitation Act হচ্ছে কোন সম্পত্তির উপর থেকে মালিকানার দ্বন্দ্বকে শেষ করে পক্ষগন যেন তাহাদের মধ্যে পারষ্পারিক বিরোধ অনেক বছর যাতে চলাতে না পারে সেজন্য তামাদি আইনের সৃষ্টি। তামাদি আইন বা Limitation Act সকল প্রকার প্রতারণা মুলক কাজ বন্ধ করে দেয়। কোন মামলার দরখাস্ত কতদিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে কতদিনের মধ্যে আপিল করা যাবে। কোন সময় মামলা করতে দেরি হবার পরও আদালত মামলার দরখাস্ত গ্রহন করতে পারেন এসব বিষয় সহ ইত্যাদি বিষয় তামাদি আইন বা Limitation Act নির্দিষ্ট করে দেয়। তাই দাবী বা অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তামাদি আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই আইন কোন ব্যক্তির তাহার স্বত্ব বা অধিকারের জন্য কতদিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে পারবে তার সময় নির্দিষ্ট করে দেয়। একবার এর সময়সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে আর মামলা করা যায় না। মামলা মোকদ্দমা করার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কোন মামলা ৩ বৎসর আবার কোন মামলা ১২ বৎসর মেয়াদের মধ্যে করতে হয়। মামলার মত আপীলেরও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। তামাদি আইনের প্রথম তফসিলে উক্ত নির্ধারিত সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তামাদি আইন বলতে এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন কে বোঝায় যে আইন দ্বারা সকল প্রকার দাবী বা স্বত্বের দ্বন্দ্বকে অবিরাম গতিতে বৃদ্ধি যা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে বরং তা চিরদিনের জন্য নিস্পত্তি করায় সাহায্য করে এরুপ ব্যবস্থাকে তামাদি আইন বলে।
বিলম্বের জন্য অনেকেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের শরনাপন্ন হতে পারেন না। আইনের সূত্র হচ্ছে বিলম্ব ন্যায় বিচারকে প্রতিহত করে” । আইনের অরো একটি নিয়ম হচ্ছে, যে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন নয়, আইন তাকে সহায়তা করে না।
আইন সচেতনতার এবং অবহেলার কারণে মানুষের অধিকার আদায় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। নিষ্ঠুর তামাদি আইনের প্রবল বাধা আর অতিক্রম করা যায় না। সময় একবার অতিবাহিত হয়ে গেলে আর তা ফিরে পাওয়া যায না, মামলা মোকদ্দমা আধিক্য কমাতে এবং নাগরিকদেরকে নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট করতেই তামাদি আইনের জন্ম। এজন্য অনেকে বলে থাকেন তামাদি আইন জবর দখলকে সমর্থন করে। কারণ নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে জবর দখল কারীর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা না করলে সংশ্লিষ্ট জমিতে জবর দখরকারীর একপ্রকার শক্তিশালী বিরুদ্ধ শর্ত জন্ম নেয়। যার ফলে তাকে আর উচ্ছেদ করা যায় না। বৈধ মালিক তার মালিকানা স্বত্ব হারায়।
সাধারণত কোন একটি বিষয়ে নালিশের উদ্ভব হলে অর্থাৎ কোন ব্যাপারে মামলা করার প্রয়োজন দেখা দিলে প্রশ্ন জাগে মামলাটি কখন করবো। আবার অনেকে মনে করেন- করবো এক সময় বলে বসে থাকেন। কিন্তু না ,কখন মামলা দায়ের করতে হবে সে প্রশ্নে সমাধান দিয়েছে তামাদি আইন। আর যারা মনে করেন যে করবো এক সময় তাদের সাবধান করেছে এ আইন। যে কোন সময় আপনার কেবল খুশিমত আপনি আপনার দাবীর সপক্ষে মামলা দায়ের করতে পারেন না, সব কিছুর যেমন একটি নিয়ম আছে , আইন আছে, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রেও সময়ের সেই নিয়ম বেধে দিয়েছে তামাদি আইন। তামাদি আইন মানুষকে সাবধান করেছে যে , একটি বিশেষ সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে আর মামলা করা যায় না।
দেশের প্রচলিত আইন এবং সরকার এটাই আশা করেন যে. প্রতিটি নাগরিক তাদের অধিকার সম্বন্ধে সদা জাগ্রত এবং সচেতন থাকবে। কেই তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিকারের জন্য আদালতে উপস্থিত না হয় , তবে সেই রকম ব্যক্তিকে আইন আদালত সাহায্য করবে না।
তামাদি আইন ধরেই নেই যে দাবী যার সত্য , সে তার দাবী আদায়ে তৎপর থাকবে।
মামলা মোকদ্দমার সময় সীমা বিষয়ে কোন বাধা নিষেধ না থাকলে দীর্ঘদিন পরে আমাদের নানাভাবে মামলা মোকদ্দমা জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকতো।
বিষয়টি নিয়ে সর্বদা চিন্তান্বিত থাকতে হতো, সে কারণে মানবিক শান্তি বিত হতো।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হেতু প্রয়োজনীয় সাক্ষী এবং নির্ভর যোগ্য সাক্ষ্যের অভাব হতো ফলে বিচারকের পক্ষে কোন বিষয় সঠিকভাবে নিস্পত্তি করা কঠিন হয়ে পড়তো। কোন সময়সীমা বাধা না থাকলে মামলা মোকদ্দমা কোন দিন শেষ হতো না।
তামাদি আইন ক্ষতি গ্রস্থ’ পক্ষকে মামলা আপীল, দরখাস্ত রিভিশন ও রিভিউ নির্ধারিত সীমার মধ্যে দাখিল করা নির্দেশ দিয়েছে।
নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে না করলে প্রতিপক্ষ আপত্তি উত্থাপন করুক বা না করুক তামাদি আইনের নির্ধারিত নিয়মে আদালতে সেটা ডিসমিস করে দিবেন।
কোন বিশেষ ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ যত রুঢ়ই মনে হোক না কেন আদালতের এই আইনের বিধান মেনে চলতে হবে।