অধ্যাদেশ এক ধরণের বিশেষ আইন। তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতির একক কতৃত্বে প্রণীত হয়।
অধ্যাদেশ কি |
আমাদের দেশে একটি আইন প্রণয়নের নিয়ম হচ্ছে,
একজন সংসদ সদস্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আনীত প্রস্তাব, বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন।
এরপর এই বিলের উপর সংসদে বিশদ আলোচনা হবে। আলোচনা পর্যালোচনা শেষে বিলটির উপর ভোটাভুটি হবে। একটি বিল পাশ হওয়ার জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন পড়ে।
বিলটির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের পর স্পিকার সেটি মাননীয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তাঁর কাছে প্রেরণ করবেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বিলটি জাতীয় সংসদের একটি আইন হিসেবে সরকারি গেজেটে ছাপা হবে ।
এই হচ্ছে, আইন প্রণয়নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, একটি আইন প্রণয়নের জন্য সংসদের অধিবেশন বহাল থাকা আবশ্যক।
কিন্তু দেশে যদি সংসদের অধিবেশন বহাল না থাকে কিংবা সংসদ যদি ভেঙ্গে যায়, সেই অবস্থায় দেশে যদি এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, যেটি মোকাবেলার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সংবিধান প্রদত্ত একক ক্ষমতাবলে কোনো অধ্যাদেশ জারী করতে পারেন যা সরকারি গেজেটে মুদ্রিত হয়।
এ অধ্যাদেশের আইনের সমপরিমাণ ক্ষমতা থাকে।
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতা সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে,
৯৩। (১) কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করিতে পারিবেন এবং জারী হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোন অধ্যাদেশে এমন কোন বিধান করা হইবে না,
(ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না;
(খ) যাহাতে এই সংবিধানের কোন বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়; অথবা
(খ) যাহার দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোন অধ্যাদেশের যে কোন বিধানকে অব্যাহতভাবে বলবৎ করা যায়।
আধ্যাদেশের অপব্যবহার:
অধ্যাদেশের সবচেয়ে নোংরা, সবচেয়ে অন্যায় প্রয়োগ ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ২৬শে সেপ্টম্বর।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থা থেকে শাস্তি এড়াবার ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশে “ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ” বা দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। তৎকালীন দখলদার রাষ্ট্রপতি, বাংলার ইতিহাসের দ্বিতীয় মীর জাফর খ্যাত খন্দকার মোশতাক আহমেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন।