আইন জানুন
এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে। আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তির যদি এক স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের মধ্যে শেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ ধারা ৬ মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সকল বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো ১) বর্তমান স্ত্রীর বন্ধাত্য, ২) শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা, ৩) দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা, ৪) দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন, ৫) মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি।
স্ত্রীর অধিকার লংঘনে আইনী প্রতিকার:
কোন পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি বিনা দ্বিতীয় বিবাহ করেন তবে তিনি অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেন মোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণ আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারনে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে পিতা আইনত বাধ্য। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে। এছাড়াও অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ হলে ১ বৎসর পর্যন্ত জেল ও ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড কিংবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। পাশাপাশি দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ৪৯৪ এর বিধান মতে, স্বামী যা স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিবাহ করেন তবে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে যার মেয়াদ সাত বৎসর পর্যন্ত হতে পারে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা উচিত, বহু বিয়ের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।
বহু বিবাহের আইনগত দিক:
মুসলিম পাবিরারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী পূর্বাহ্নে সালিশী পরিষদের নিকট হতে লিখিত অনুমতি না নিয়ে কোন পুরুষ একটি বিবাহ বলবৎ থাকাকালে আর একটি বিবাহ করতে পারবে না এবং পূর্বানুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোন বিবাহ হলে তা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ মালের ৫২ নং আইন মোতাবেক রেজিষ্ট্রী হবে না)।
১. বিয়ের অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এং আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণ এবং বর্তমানে স্ত্রী বা স্ত্রীগণের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করতে হবে।
২. আবেদনপত্র পাঠাবার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী ও তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণকে তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবে এবং সালিশী পরিষদ যদি মনে করে যে, প্রস্তাবিত বিবাহটি প্রয়োজন ও ন্যায়সঙ্গত তা হলে কোন শর্ত থাকলে সে সাপেক্ষে প্রার্থীর বিবাহের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারে।
৩. আবেদনপত্র সম্পর্কে সিদ্ধান্তকালে, সালিশী পরিষদ এ সিদ্ধান্তের কারণ সমূহ লিপিবদ্ধ করবে এবং কোন পক্ষ নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের পুনর্বিচারের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং এতে সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং এর বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
৪. বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের প্রাপ্য মুয়াজ্জল বা মু-অজ্জল দেনমোহরের টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবে। সে টাকা ওইরূপে পরিশোধ করা না হয় তা হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব রূপে আদায় করা হবে।
বহু বিবাহেরে ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবের দায়-দায়িত্ব:
১. বহু বিবাহের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সাহেব স্বামীকে অনুমতি দিতেও পারে আাবার নাও দিতে পারে।
২. যদি কোন স্বামী সালিশী পরিষদের মাধ্যমে অনুমতি পেয়ে যায় তাহলে চেয়ারম্যান সাহেব তাকে স্মারক নং- সহ দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি প্রদান করবে।
৩. অনুমতি ব্যতিত স্বামী বহু বিবাহ করলে চেয়ারম্যান সাহেব তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমান স্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।
৪. সালিশী পরিষদের অনুমতি ব্যতিত কোন ব্যক্তি যদি অন্য একটি বিবাহ করে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।
বহু বিবাহের ক্ষেত্রে কাজী সাহেবের দায়-দায়িত্ব:
• বিবাহটি বরের বহু বিবাহ কিনা তা যাচাই করবে।
• সালিশী পরিষদের লিখিত অনুমতি আছে কিনা তা দেখবে।
• সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাজী সাহেব যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারে আবার সন্দেহ হলে বিবাহটি নাও রেজিষ্ট্রী করতে পারে।