মানহানি সংক্রান্ত অপরাধ
আমাদের সমাজে প্রায়ই মানহানি সংক্রান্ত মামলার কথা শুনে থাকি কিন্তু এ সংক্রান্ত আইন বা বিধির অনেক কিছুই আমাদের অজানা। তাই আজ মানহানি বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যার আদ্যপাদ্য নিম্নে দেয়া হলোঃ
মানহানি কি?
কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা তার খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হবে বলে জানা স্বত্বেও বা বিশ্বাস করার কারন থাকা স্বত্বেও, উচ্চারন বা পাঠ করার জন্য উক্ত উদ্দেশ্যে কথা দ্বারা বা চিহ্ন দ্বারা বা দৃশ্যমান বস্তু বা প্রতীক দ্বারা, সেই ব্যক্তি সম্পর্কিত কোন নিন্দাবাদ প্রনয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্ত ব্যতিক্রম সমুহ ব্যতীত, অন্যান্য ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মানহানি করে বা করেছে বলা হবে।
শাস্তিঃ (দন্ডবিধির ৫০০ ধারা) - ২ বছরের কারাদন্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে।
ব্যতিক্রমগুলো
(১) জনকল্যানের জন্য সত্যতার প্রকাশনাঃ কোন ব্যাক্তি সম্পর্কে কোন ঘটনা যদি সত্যি হয় এবং তা যদি জন কল্যাণের জন্য হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে নিন্দাবাদ প্রকাশনা মানহানিকর হবে না।
(২) সরকারি কর্মচারীর সমালোচনাঃ সরকারী দায়িত্ব পালনকালে কোন সরকারী কর্মচারীর আচরণে তার চরিত্র যতটুকু প্রাসঙ্গিক, শুধু ততটুকু তার চরিত্র সম্পর্কে সরল মনে বা সরল বিশ্বাসে কোন মতামত প্রকাশ করলে, সেটা মানহানিকর অপরাধ হবে না।
(৩) কোন সরকারি বিষয় প্রশ্নে যে কোন ব্যাক্তির আচরনঃ কোন সরকারি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোন আচরন এবং সেই আচরনে সেই ব্যাক্তির চরিত্র যদ্দূর পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক, সরল বিশ্বাসে তার সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করলে, সেটা মানহানিকর অপরাধ হবে না।
উদাহরন
“ক” যদি “ঘ” এর আচরন সম্পর্কে কোন মতামত প্রকাশ করে কোন সরকারি প্রশ্নে সরকারের নিকট দরখাস্ত করে, কোন সরকারি প্রশ্নে কোন সভা আহ্বানের রিকুজিশনে স্বাক্ষর দান করে, অনুরুপ সভায় সভাপতির আসন গ্রহন কিংবা যোগদান করে, জনসাধারনের সমর্থন কামনা করে কোন সমিতি গঠন করে বা যোগদান করে, কোন পরিস্থিতিতে জনসাধারনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বসমূহ সুষ্টূভাবে সম্পাদনের জন্য কোন বিশেষ প্রাথীকে ভোটদান করে বা কোন বিশেষ প্রাথীর পক্ষে প্রচার কাজ চালায়, তাহলে “ক” এর কাজ দ্বারা মানহানির অপরাধ হবে না।
(৪) আদালতসমূহের কার্যক্রমের কোন রিপোর্ট প্রকাশ করাঃ কোন আদালতের প্রায় সম্পূর্ণ সত্য কার্যক্রমের রিপোর্ট প্রকাশ করা বা অনুরুপ কোন বিবরণীর ফলাফল প্রকাশ করা মানহানিকর বলে গণ্য হবে না।
(৫) আদালতের সিধান্তকৃত মামলার দোষগুন বা সাক্ষীদের ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের আচরনঃ কোন আদালতের বিচারিত দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলার গুনাগুন সম্পর্কে কিংবা অনুরুপ কোন মামলার সঙ্গে অন্যতম কোন পক্ষ সাক্ষী বা প্রতিনিধি হিসাবে সংশিষ্ট কোন ব্যাক্তির আচরণ কিংবা সেই আচরনের সেই ব্যাক্তির চরিত্র সম্পর্কে সরলমনে বা সরল বিশ্বাসে কোন মতামত প্রকাশ করলে, তা মানহানিকর হবে না।
উদাহরন
(ক) “ক” যদি বলে, “ঐ মামলায় ‘ঘ’ এর সাক্ষ্য এত পরস্পরবিরোধী যে আমার মনে হয়, ‘ঘ’ হয় বোকা না হয় অসৎ”। ‘ক’ যদি সরল মনে বা সরল বিশ্বাসে এ মত প্রকাশ করে থাকে, তাহলে সে এই বেতিক্রমের আওতার মধ্যে আছে। সে যে মত প্রকাশ করেছে, সে মতে সাক্ষী হিসাবে ‘ঘ’ এর আচরনের সাথে ‘ঘ’ এর যদ্দূর প্রাসঙ্গিক শুধু তদ্দূর পর্যন্ত ‘ঘ’ এর চরিত্র সংক্রান্ত, তার বেশি নয়।
(খ) কিন্তু ‘ক’ যদি বলে ‘ঘ’ ঐ বিচারে যে সাক্ষ্যদান করেছে, তা আমি বিশ্বাস করি না। কেন না, আমি জানি সে সৎ লোক নয়, তাহলে ‘ক’ এ ব্যাতিক্রমের আওতায় থাকবে না। কেন না, ‘ঘ’ এর চরিত্র সম্পর্কে সে যে মত প্রকাশ করেছে, তা সাক্ষী হিসাবে ‘ঘ’ এর আচরণের উপর ভিত্তি করে করা হয়নি।
(৬) সরকারী কাজের গুনাগুনঃ কোন কাজের সরকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জনসাধারনের বিচারের জন্য উপস্থাপিত কোন কাজের গুনাগুন সম্পর্কে কিংবা কাজটিতে সেই কর্তৃপক্ষের চরিত্র যদ্দূর পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়েছে, শুধু তদ্দূর পর্যন্ত কোন মতামত প্রকাশ করলে, তা মানহানিকর অপরাধ হবে না।
উদাহরণ
(ক) যদি কোন ব্যক্তি একটি বই প্রকাশ করে, তাহলে সেই ব্যক্তি বইটি জনসাধারণের বিচারার্থে উপস্থাপন করে।
(খ) যদি কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যভাবে কোন বক্তৃতা দান করে, তাহলে সেই ব্যক্তি বক্তৃতাটি জনসাধারণের বিচারার্থে উপস্থাপন করে।
(গ) কোন অভিনেতা বা গায়ক প্রকাশ্য রঙ্গমঞ্চে অভিনয় বা সঙ্গীত পরিবেশন করলে, সেই অভিনেতা বা গায়ক তার অভিনয় বা গান জনসাধারণের বিচারার্থে উপস্থাপন করে।
(ঘ) ‘ক’, ‘ঘ’ এর প্রকাশিত একটি বই সম্পর্কে বলে- “‘ঘ’ এর বইটি একেবারেই বাজে; ‘ঘ’ অবশ্য একজন দুর্বল ব্যেক্তি; ‘ঘ’এর বইটি অশ্লীল; ‘ঘ’ এর বইটির মান অবশ্যই অশুচি”। ‘ক’ যদি সরল মনে বা সরল বিশ্বাসে এ কথা বলে,তাহলে সে এই ব্যেতিক্রম এর আওতায় আসে, কেন না সে যে মত প্রকাশ করেছে, সে মতটি ‘ঘ’ এর বইয়ে ‘ঘ’ এর চরিত্র যদ্দূর পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়েছে, শুধু তদ্দূর পর্যন্তই তার চরিত্র সম্পর্কিত, তার বেশি নয়।
(ঙ) কিন্তু যদি ‘ক’ বলে, ‘ঘ’ এর বইটি যে অত্যন্ত বাজে ও অশ্লীল, তাতে আমি মোটেই বিস্মিত নই, কেন না ‘ঘ’ অতি দুর্বলচেতা ও উচছৃখল ব্যক্তি”। ‘ক’ এ ব্যতিক্রমের আওতার মধ্যে আসবে না, কেন না ‘ঘ’ এর চরিত্র সম্পর্কে যে মত ব্যক্ত করেছে, সে মতটি ‘ঘ’ এর বইয়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত নয়।
(৭) অপরের উপর আইন সম্মত ক্ষমতা বিশিষ্ট কর্তৃক সরল বিশ্বাসের নিন্দাঃ যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির উপর আইন দ্বারা প্রতিষ্টিত বা সেই অপর ব্যক্তির সাথে সম্পাদিত চুক্তির দ্বারা প্রতিষ্টিত ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব থাকে এবং সেই ব্যক্তি যে বিষয় অনুরুপ আইন সম্মত ক্ষমতা বা সংশিষ্ট সে সব বিষয়ে সরল বিশ্বাস সেই অপর ব্যক্তিকে তিরস্কার করে, তাহলে তা মানহানিকর অপরাধ হবে না।
উদাহরন
যদি কোন বিচারক সরল বিশ্বাসে কোন সাক্ষীর বা আদালতের কোন অফিসারের আচরনের নিন্দা করেন, যদি কোন দফতরের প্রধান কর্মকর্তা সরল বিশ্বাসে তার অধীনস্থ ব্যক্তিদের তিরস্কার করেন, যদি কোন পিতা বা মাতা সরল বিশ্বাসে অন্যান্য সন্তানদের উপস্থিতিতে কোন সন্তানকে তিরস্কার করেন, যদি কোন স্কুল মাষ্টার কোন ছাত্রের পিতা বা মাতার নিকট থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে সেই ছাত্রকে অন্যান্য ছাত্রদের উপস্থিতিতে কোন ছাত্রকে তিরস্কার করেন, তাহলে তিনি এই ব্যেতিক্রমের আওতাভুক্ত হবেন।
(৮) ক্ষমতা বিশিষ্ট ব্যক্তির নিকট সরল অভিযোগ উত্থাপনঃ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন বিষয়ে অভিযোগ সে বিষয়ে যে সেই ব্যক্তির উপর যে সব ব্যক্তির ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব আছে, তাদের কারো নিকট বিশ্বাসে উত্থাপন করা হলে, তা মানহানিকর অপরাধ হবে না।
উদাহরন
যদি ‘ক’ কোন ম্যাজিস্টেটের নিকট সরল বিশ্বাসে ‘ঘ’ এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন করে, যদি ‘ক’ সরল বিশ্বাসে জনৈক চাকর ‘ঘ’ এর আচরনের বিরুদ্ধে ‘ঘ’ এর মালিকের নিকট কোন অভিযোগ উত্থাপন করে, যদি ‘ক’ সরল বিশ্বাসে জনৈক শিশু ‘ঘ’ এর আচরণের বিরুদ্ধে ‘ঘ’ এর পিতার নিকট অভিযোগ উত্থাপন করে, তাহলে ‘ক’ এ ব্যতিক্রমের আওতার মধ্যে আসবে।
(৯) কোন ব্যক্তি কর্তৃক নিজের বা অন্যের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরল বিশ্বাসে কোন নিন্দা আরোপ করাঃ যদি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে কোন নিন্দা আরোপ করা হয় এবং তা যদি আরপকারী সরল বিশ্বাসে নিজের বা অন্য কারো স্বার্থ সংরক্ষণ বা জন কল্যাণ স্বার্থ সংরক্ষনের উদ্দেশে করা হয়, তাহলে তা মানহানিকর অপরাধ হবে না।
উদাহরণ
(ক) জনৈক দোকানদার ‘ক’ তার ব্যবসা পরিচালক ‘খ’ কে বলে, “ ‘ঘ’ এর কাছে নগদ মূল্য ছাড়া কিছু বিক্রি করবে না” কারন ‘ঘ’ এর সততার উপর আমার কোন আস্থা নেই। ‘ক’ যদি তার নিজের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সরল বিশ্বাসে ‘ঘ’ এর চরিত্র সম্পর্কে এ মত ব্যক্ত করে, তাহলে ‘ক’ এ ব্যতিক্রমের আওতার মধ্যে থাকবে।
(খ) জনৈক ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ তার উর্ধ্বতন অফিসারের নিকট একটি রিপোর্ট প্রসঙ্গে ‘ঘ’ এর চরিত্র সম্পর্কে একটি বিরুপ মন্তব্য করেন। এ ক্ষেত্রে যদি বিরুপ মন্তব্যটি সরল বিশ্বাস এবং জনকল্যাণের স্বার্থে করা হয়ে থাকে,তাহলে ‘ক’ এ ব্যতিক্রমের আওতার মধ্যে থাকবে।
(১০)কোন ব্যক্তিকে তার হিতকল্পে বা জনহিতকল্পে হুশিয়ারি দানঃ কোন ব্যক্তিকে সরল বিশ্বাসে অপর কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দেওয়া বা সতর্কীকরণ মানহানি অপরাধ হবে না, যদি যে ব্যক্তিকে সতর্ক করা হল সেই ব্যক্তির কল্যাণাথে কিংবা সেই অপর যে ব্যক্তির সাথে স্বার্থ সংস্লিষ্ট, সেই অপর ব্যক্তির কল্যাণাথে কিংবা জন কল্যাণাথে সতর্ক করা হয়ে থাকে।
মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রন বা খোদাইকরন (ধারাঃ৫০১)
কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন কিছু মুদ্রন বা খোদাই করে, যা অপর কোন ব্যক্তির পক্ষে মানহানিকর বলে সে জানে বা তার সে ধরনের বিশ্বাস করার সঙ্গত কারন আছে, তাহলে তার শাস্তি ২ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দন্ড হতে পারে।
মানহানিকর বলে মুদ্রিত বা খোদাইকৃত বস্তু বিক্রি করা (ধারাঃ৫০২)
কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন কিছু মানহানিকর বিশিষ্ঠ বা খোদাইকৃত বস্তু বিক্রী করে বা বিক্রীর জন্য উপস্থাপন করে, তাহলে তার শাস্তি ২ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দন্ড হতে পারে।
Collected
Ads Area
Maruf Hossen Jewel