সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা ঘোষণামুলক মামলা এবং ডিক্রি, ৪৩ ধারা ঘোষণামুলক ডিক্রির ফলাফল, ৪৪ ধারা রিসিভার নিয়োগ
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭ এর ৪২ ও ৪৩ ধারা মোতাবেক
ঘোষণামুলক মামলা বা Declaratory Suit এর বিষয়াবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হইয়াছে।
ঘোষণামূলক
মামলা:
বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী কোন আইগত পরিচয় Legal
Character বা যে কোন প্রকার সম্পত্তির স্বত্ব
যদি কোন বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী অস্বীকার করে বা অস্বীকারের আগ্রহ প্রকাশ করে উক্ত
ক্ষেত্রে বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী ঘোষণামুলক
মামলা দায়ের করিতে পারিবেন।
ঘোষণামুলক মামলায় আদালত সন্তষ্ট হইলে ঘোষণা বা প্রতিকার
প্রার্থীকে অধিকার বা সম্পত্তির ঘোষণা দিবেন।
উদাহরণঃ
ক মারা যাওয়ার পর খ ক এর পুত্র মর্মে দাবী করেন। খ
এর এরুপ দাবী ক এর অনান্য ওয়ারীশগণ অস্বীকার করেন। উক্ত ক্ষেত্রে খ উপযুক্ত আদালতে
ক এর পুত্র মর্মে ৪২ ধারা মোতাবেক ঘোষণামুলক মামলা দায়ের করিবেন।
ঘোষণামুলক
ডিক্রি কিঃ
ঘোষণামুলক মামলায় বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী অধিকার
বা স্বত্বর যে ঘোষণা চেয়ে যে মামলা করেন আদালত উক্ত ঘোষণা মঞ্জুর করায় হল ঘোষণামুলক ডিক্রি।
উদাহরণঃ
খ ঘোষণামুলক মামলা দায়ের করার পর আদালত সাক্ষ প্রমানে
যদি সন্তষ্ট হন তাহলে খ কে ক এর পুত্র মর্মে ঘোষণা প্রদান করিবেন। আদালত কতৃক উক্ত
৪৩ ধারা মোতাবেক ঘোষণা প্রদান হল ঘোষণামুলক ডিক্রি।
মর্যাদা বা অধিকার ঘোষনা সম্পর্কে আদালতের ইচ্ছাধীন
বিবেচনামুলক ক্ষমতা অথবা আনুসংগিক প্রতিকারের জন্য এই মামলা করা হয়।সহজভাবে বলা যায়
যে,কোন ব্যক্তির আইঙ্গত পরিচয়, মর্যাদা বা কোন সম্পত্তিতে তার কোন অধিকার যদি থাকে
, অপর কোন ব্যক্তি তা অস্বীকার করে বা করতে চায়, তখন সেই ব্যক্তি তার অধিকারপ্রতিষ্ঠা
করার জন্য এই মামলা করতে পারে। আদালত সে অনুযায়ী প্রতিকার দিবে। এটি ই ঘোষনা মুলক মোকদ্দমা
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা সমুহে ঘোষণামূলক
মামলার বিধান করা হয়েছে । ৪২ ধারায় দায়েরকৃত ঘোষণামূলক মামলায় যে ডিক্রী প্রদান করা
হয় তাকে ঘোষণামূলক ডিক্রী বলে ।
উদাহরণঃ
ক মারা যাওয়ার পর খ ক এর পুত্র মর্মে দাবী করেন। খ
এর এরুপ দাবী ক এর অনান্য ওয়ারীশগণ অস্বীকার করেন। উক্ত ক্ষেত্রে খ আদালতে ক এর পুত্র
মর্মে ঘোষণামুলক মামলা দায়ের করিবেন।
নোটঃ যে ক্ষেত্রে বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী স্বত্ব ঘোষণা ছাড়াও অনান্য প্রতিকার প্রাথণা করিতে পারিতেন, উক্ত
ক্ষেত্রে বাদী বা প্রতিকার প্রার্থীকে উক্ত
অনান্য প্রতিকার প্রাথণা না করিলে, আদালত কোনরুপ ঘোষণা প্রদান করিবেন না।
নোটঃ
- ৪২ ধারার ‘ঘোষনামুলক মোকদ্দমা’ আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা ঘোষণামুলক মামলা বা ঘোষণামুলক ডিক্রী পাওয়ার
শর্তাবলীবা উপাদানঃ
- (১) বাদীর কোন আইনগত পরিচয় বা সম্পত্তিতে স্বত্ব থাকতে হবে । যেমনঃ বিবাহ, তালাক, দত্তক, স্বত্ব দাবী ইত্যাদি।
- (২) স্বত্বের অধিকার আইন থেকে সৃষ্টি হতে হবে । চুক্তি থেকে সৃষ্টি হলে চলবে না ।
- (৩) বিবাদী এই আইনগত সম্পত্তিতে অধিকার করবে বা অস্বীকার করার আগ্রহ প্রকাশ করবে ।
- (৪) যে ক্ষেত্রে বাদী শুধু মাত্র তার সত্তের ঘোষণা ছাড়া অন্য কোন প্রতিকার চাইতে পারতেন, বাদীকে উক্ত প্রতিকার চাইতে হবে ।
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা ঘোষণামুলক মামলা কোর্ট ফি কতঃ
- ক) কোর্ট ফিঃ ফিক্সড কোর্ট ফি (৩০০ টাকা)
নোটঃ ঘোষণা ও স্বত্ব চাইলে কোর্ট ফি হবে – এডভলেরম
কোর্ট ফি।
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা ঘোষণামুলক মোকদ্দমার তামাদিঃ
- ক) ঘোষণামুলক মোকদ্দমার তামাদিঃ কাল ৬ বছর ১ম তফসীলের ১২০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক।
নোটঃ ৪২ ধারায় ঘোষণামুলক মামলা ও ৩৯ ধারায় দলিল বাতিলের মামলা করিলে তামাদি
৩ বছর।
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা ঘোষণামুলক ঘোষনামুলক মোকদ্দমা কতটি ক্ষেত্রে করা যায়ঃ
ঘোষনামুলক মোকদ্দমা কতটি ক্ষেত্রে করা যায় ২ টি ক্ষেত্রে করা হয়-
- ১) স্বত্ব ও মর্যাদার অধিকার এর ক্ষেত্রে;
- ২) পদের অধিকারের ক্ষেত্রে;
এ মোকদ্দমায় ডিক্রিজারির প্রয়োজন নেই।
নোটঃ
- ক) ৮ ধারার ‘স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব অর্জনের মামলা’ করতে হলে ৪২ ধারা অনুসরণ করতে হয়।
- খ) ৪২ ধারার ‘ঘোষনামুলক মোকদ্দমায়’ ৮ ধারার কোন প্রয়োজন নেই।
- গ) ৪২ ধারার ‘ঘোষনামুলক মোকদ্দমায় ‘ আনুসঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া বাধ্যতামূলক যদি তা চাওয়া না হয় তবে আদালত কোন প্রতিকারই মুঞ্জুর করবেন না
- গ) ৪২ ধারার ‘ঘোষনামুলক মোকদ্দমায় ‘ আনুসঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া বাধ্যতামূলক যদি তা চাওয়া না হয় তবে আদালত কোন প্রতিকারই মুঞ্জুর করবেন না তাহা বাধ্যতামুলক।
- ঘ) ঘোষনামুলক মোকদ্দমা কে বিজ্ঞাপনী মোকদ্দমাও বলা হয়।
ঘোষণামূলক
ডিক্রী এবং জারী মামলা:
- ক) যদি ঘোষণামুলক ডিক্রী হয়, সে ক্ষেত্রে জারী মামলার প্রয়োজন নেই ।
- খ) যে সকল ঘোষণামুলক ডিক্রী শুধুমাত্র পক্ষগনের অধিকার ঘোষণা করে তা নিজে নিজেই সম্পাদনযোগ্য এবং জারী মামালার প্রয়োজন পরেনা ।
- গ) অন্যদিকে যদি আনুষঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া হয় এবং উহার উপর ডিক্রী হয় তাহলে আনুষঙ্গিক প্রতিকারের বিরুদ্ধে জারী মামলা করে বাস্তবায়ন করা যায় । যেমন সত্তের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলায় বাদীর তর্কিত জমিতে সত্ত্ব আছে এই মর্মে ডিক্রী হলে দখল ফেরত পাবার জন্য (বাদি বিবাদী দখল ফেরত না দেয় ) ডিক্রীজারী মামলা করতে হবে ।
নোটঃ
- ক) ঘোষণামুলক মামলা বা ডিক্র আদালতের ইচ্ছাধীন বিবেচনামুলক
ক্ষমতা।
সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা ঘোষণামুলক মামলা:
খ) প্রতিবেশী বা গ্রামবাসীর রাস্কায় চলাচলের অধিকার
গ) মৃত ব্যক্তির সম্মত্তির দখলেল অধিকার
ঘ) বিবাহ, তালাক ঘোষণা।
ঘোষণামুলক মামলায় অনান্য প্রতিকারঃ
- ক) যে ক্ষেত্রে বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী ঘোষণামুলক
মামলায় অনান্য প্রতিকার চাইতে পারতো কিন্তু অনান্য প্রতিকার চান নিউক্ত ক্ষেত্রে আদালত
কোন রুপ ঘোষণা প্রদান করিবেন না।
২)
কোন প্রতিকারও প্রদান করিবেন না।
- খ) যে ক্ষেত্রে বাদী বা প্রতিকার প্রার্থী ঘোষণামুলক
মামলায় অনান্য প্রতিকার চাইতে পারতো উক্ত ক্ষেত্রে
অনান্য প্রতিকার প্রার্থণা করা বাধ্যতামুলক।
কে ঘোষণামুলক
মামলা দায়ের করিতে পারেঃ
- ক)
যে কোন ব্যক্তি যিনি উক্ত অধিকারের দাবীদার
- খ)
কোন সম্পত্তির স্বত্বর অধিকারী ব্যক্তি
- গ)যাহার
কোন রুপ পরিচয় বা অধিকার অস্বীকার করা হইয়াছে বা অস্বীকার করার উদ্দোগ গ্রহণ করিয়াছেন।
ঘোষণামূলক
ডিক্রী এবং জারী মামলা:
- ক) যদি ঘোষণামুলক ডিক্রী হয়, সে ক্ষেত্রে জারী মামলার প্রয়োজন নেই ।
- খ) যে সকল ঘোষণামুলক ডিক্রী শুধুমাত্র পক্ষগনের অধিকার ঘোষণা করে তা নিজে নিজেই সম্পাদনযোগ্য এবং জারী মামালার প্রয়োজন পরেনা ।
- গ) অন্যদিকে যদি আনুষঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া হয় এবং উহার উপর ডিক্রী হয় তাহলে আনুষঙ্গিক প্রতিকারের বিরুদ্ধে জারী মামলা করে বাস্তবায়ন করা যায় । যেমন সত্তের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলায় বাদীর তর্কিত জমিতে সত্ত্ব আছে এই মর্মে ডিক্রী হলে দখল ফেরত পাবার জন্য (বাদি বিবাদী দখল ফেরত না দেয় ) ডিক্রীজারী মামলা করতে হবে ।
নোটঃ
- ক) ৪২ ধারার ‘ঘোষনামুলক মোকদ্দমা’ আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
আদালত এমন কোনো ঘোষণা প্রদান
করবেন না যেখানে বাদী শুধু সত্ব ঘোষণা ছাড়াও আরো প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারতেন কিন্তু
তা করেন নাই আলোচনা কর।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ও ৪৩ ধারা সমূহ ঘোষণামূলক মামলা বিধান করা হইয়াছে। ৪২ ধারাতে বলা হয়েছে তাদের কোনো আইনগত পরিচয় বা সম্পত্তির সত্ব যদি কেউ অস্বীকার করে বা অস্বীকার করার আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে বাদী আদালতে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারবেন।
আদালত সন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে স্বত্ব
আছে মর্মে ঘোষণা দিতে পারেন।
এই ধারায় আরো বলা আছে যে ক্ষেত্রে বাদি শুধু তার
স্বত্ব ঘোষণা ছাড়া অন্য কোন প্রকার ঘোষণা চাইতে পারেন, সেখানে বাদিকে তা চাইতে হবে
এবং তাহ বাধ্যতামূলক। যদি না চান তাহলে আদালত কোন প্রকার ঘোষণামূলক ডিগ্রি প্রদান করবেন
না।
কারণ এক্ষেত্রে ঘোষণামূলক ডিগ্রি প্রদান করলে পরে
আবার নতুন করে মামলার উৎপত্তি হতে পারে তাই মামলার অধিকত্য নিস্তার করার জন্য এ ধরনের
বিধান করা হয়েছে।
যেমন কেউ যদি নিজ মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে মালিকানা অস্বীকার পুর্বক বেদখল হন। তিনি শুধু ঘোষণামুলক মামলা দায়ের করলে চলবে না তাকে এই মামলায় স্বত্ব ও দখলের ঘোষণা চাইতে হবে।
নোটঃ