রিসিভার
(Receiver) হলো আদালত কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন কর্মকর্তা যাকে সম্পত্তি দখল বা হেফাজত এবং সম্পত্তি
পরিচালনার অধিকার প্রদান করা হয়।
রিসিভার
(Receiver) কিঃ
রিসিভার হল আদালত কতৃক নিযুক্ত কর্মকর্তা যিনি মামলা চলাকালীন সময়ে বিরোধীয়
সম্পত্তির তত্বাবধায়ন করেন।
মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রিসিভার নিয়োগ করা হয়। রিসিভার নিয়োগ আদালতের
বিবেচনামুলক ক্ষমতা।
যিনি মামলা চলাকালীন সময়ে কিংবা আদালত কর্তৃক ডিক্রী প্রদানের পরে বাদীর আবেদনক্রমে আদালত তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪৪ ধারার
বিধান অনুসারে নালিশী সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করতে পারেন তাকে
রিসিভার বলে।
৪৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, রিসিভার নিয়োগ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তব্য এবং
দায়-দায়িত্ব ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
নোটঃ
ক) আদালতের নিকট সংগত এবং সুবিধাজনক মনে হলে দেওয়ানী কার্য-বিধির ৪০ নম্বর
আদেশের ১ নম্বর বিধির উপ-বিধি মোতাবেক নিম্নলিখিত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারবেনঃ
খ) দেওয়ানী কার্য-বিধির ৫১ ধারা অনুযায়ী আদালত প্রয়োজন মনে করিলে ডিক্রির পুর্বে বা পরে রিসিভার নিয়োগ করিতে পারিবেন।
আদালত রিসিভার সংক্রান্ত কি কি ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারবেনঃ
১) ডিক্রীর পূর্বে বা পরে কোন সম্পত্তির রিসিভার নিয়োগ;
২) সম্পত্তির দখল বা জিম্মাদারী হতে কোন ব্যক্তিকে বা রিসিভারকে অপসারণ করতে পারে
৩) উক্ত সম্পত্তি রিসিভারের দখলে, জিম্মাদারী কিংবা ব্যবস্থাপনা অর্পণ; এবং
৪) বিরোধী সম্পত্তি প্রসঙ্গে মামলা দায়ের, আত্মপক্ষ সমর্থন, এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন,
খাজনা ও মুনাফা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ যথাবিহীত ব্যয় ও বিলি-বন্টনের ব্যবস্থার ব্যাপারে
সম্পত্তির মালিকের অনুরুপ ক্ষমতা কিংবা আদালত যেরুপ উপযুক্ত মনে করেন সেরুপ ক্ষমতা
অর্পণ।
এখানে আরোও বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে সম্পত্তির দখল ও জিম্মাদারী হতে অপসারণের
ব্যাপারে মামলায় কোন একটি পক্ষের অধিকার না থাকলে আদালত অনুরুপ ব্যক্তিকে অপসারণের
ক্ষমতা লাভ করবেন না।
রিসিভার নিয়োগ আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল হলেও উক্ত ক্ষমতা
বিচারকীয়ভাবে এবং সুবিবেচনার দ্বারা প্রয়োগ করতে হবে। পক্ষসমূহের অধিকার সংরক্ষণ অথবা
কোন ক্ষতির হাত হতে মামলার বিষয়বস্তুকে রক্ষা করার জন্য তাকে নিয়োগ করা হয়।
কাজেই একজন রিসিভার আদলতের কর্মকর্তা, পক্ষসমূহের প্রতিনিধি বা স্বত্ব নিয়োগী নয়। যে আদালত তাকে নিয়োগ
করেন সে আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি মামলা দায়ের করতে পারেন না বা তার বিরুদ্ধে মামলা
দায়ের করা যায় না। রিসিভারের তত্ত্বাবধানে কোন সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করা হলে তিনি
উক্ত নিলাম খরিদ করতে পারবেন না।
দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ নম্বর আদেশের ৩ নম্বর
বিধিতে একজন রিসিভারের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ নম্বর আদেশের ৩ নম্বর বিধিতে একজন রিসিভারের কর্তব্য
সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ বিধি অনুসারে একজন রিসিভারের কর্তব্য নিম্নরুপঃ
১) সম্পত্তি বাবদ প্রাপ্ত আয়ের যথাযথ হিসাব দানের জন্য আদালত কর্তৃক নির্ধারিত
জমানত (যদি থাকে) দাখিল;
২) আদালকত কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে ও নির্দিষ্ট সময়ে হিসাব দাখিল;
৩) আদালতের নির্দেশ মত তার নিকট হতে পাওনা টাকা পরিশোধ; এবং
৪) তার স্বেচ্ছাকৃত ত্রুটি কিংবা গুরুতর অবহেলার দরুন সম্পত্তির কোন ক্ষতি হলে
সেজন্য দায়ী থাকা।
রিসিভারের ত্রুটি বা অবহেলার কারণে সম্পত্তির কোন ক্ষতি হলে রিসিভারের সম্পত্তি
বিক্রি করে উক্ত সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ করতে হবে।
উপরের আলোচনাটি পর্যবেক্ষণ করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, রিসিভার সংশ্লিষ্ট
সকলের সুবিধার জন্য নিযুক্ত করা হয়; তিনি আদালত এবং মামলা মোকদ্দমার সকল পক্ষের প্রতিনিধি।
সম্পত্তি যেমন আছে তেমন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন রিসিভার নিয়োগ করা হয়। আদালত সমস্ত
পক্ষের সম্মতিতে একটি বিশেষ মামলাতে রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন।