ক)
আপীল কি? কোথায় আপীল দায়ের করতে হয়? কে আপীল দায়ের করতে পারে?
খ) কোন কোন ক্ষেত্রে আপীলের বিধান নাই বা আপীল চলে না?
গ) খালাস এবং অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?
ঘ) আপীল নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আপীল অদালতের ক্ষমতা বর্ণনা কর।
ঙ) আপীলকারীর মৃত্যু হলে আপীলের কি অবস্থা হয়?
আপীল কি:
আপীল হল কোন মামলার রায় যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা তা নির্নয়ের জন্য নিম্ন আদালত হতে মামলাটি
উচ্চতর আদালতে স্থানান্তর করা।
আপীল বলতে বোঝায় নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উর্ধ্বতন আদালতে
যে লিখিত দরখাস্ত বা যে বিচার প্রার্থনা করে তাকেই আপীল বলা হয়।
লাহোর হাইকোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের রায় যথার্থ কিনা তা নির্নয়ের লক্ষে
কোন বিশেষ মোকদ্দমাকে নিম্ন আদালত হতে উচ্চ আদালতে স্থানান্তর করাই হচ্ছে আপীল।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের বিধানের ধারাবাহিকতাই হচ্ছে আপীল।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪০৬ থেকে ৪৩১ ধারা পর্যন্ত আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
দেওয়ানী কার্যবিধির সপ্তম খন্ডে ধারা ৯৬ থেকে ১১২ ধারা পর্যন্ত এবং আদেশ ৪১ থেকে ৪৫
আদেশ পর্যন্ত দেওয়ানী আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত
যে কোন রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে যে কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি উচ্চ আদলতে আপীল করতে পারেন।
তবে, আইনে যে সকল ক্ষেত্রে আপীল করার অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে শুধু সে সকল
ক্ষেত্রে আপীল করা যায়। আইনের প্রশ্নে বা ঘটনার প্রশ্নে বা উভয় ক্ষেত্রে ই আপীল করা
যায়।
আমরা আপীল সম্পর্কে বলতে পারি যে, নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার
পক্ষে যুক্তিসঙ্গত কারন উল্লেখ করে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি কর্তৃক যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন
উচ্চ আদালতে পেশ করা লিখিত দরখাস্তই হলো আপীল।
কোথায় আপীল দায়ের করতে হয়/নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল কোন আদালতে
দায়ের করতে হবে:
ফৌজদারী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলঃ
ক) দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ- ফৌজদারী
কার্যবিধির ৪০৭ ধারা অনুযায়ী, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর কোন ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারে
দন্ডিত কোন ব্যক্তি চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আপীল করতে পারবে। তিনি নিজেই
শুনানী করতে পারেন অথবা অতিরিক্ত চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দিতে পারেন।
খ) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং যুগ্ম দায়রা জজের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ- ফৌজদারী
কার্যবিধির ৪০৮ ধারা অনুযায়ী, যখন কোন ব্যক্তি কোন যুগ্ম দায়রা জজ, মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট
বা কোন প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারে দন্ডিত হয়, তখন সেই ব্যক্তি
দায়রা আদালতে আপীল করতে পারবে।
তবে শর্ত এই যে-
১) যুগ্ম দায়রা জজ পাঁচ বৎসরের অধিক সময়ের কারাদন্ডের আদেশ দিলে, হাইকোর্ট বিভাগে আপীল
করতে হবে।
২) যখন কোন ব্যক্তি কোন মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বা কোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক
দন্ডবিধির ১২৪(ক) ধারায় বর্নিত অপরাধের (রাষ্ট্রদ্রোহিতা) বিচারে দন্ডিত হয়, তখন তাকে
হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে হবে।
গ) দায়রা আদালতের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী, দায়রা
জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক দন্ডিত ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারবে।
ঘ) হাইকোর্ট বিভাগের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলঃ- হাইকোর্ট বিভাগের আদি এখতিয়ারমূলে বিচারে
দন্ডিত কোন ব্যক্তি আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারবে।
দেওয়ানী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলঃ
ক) সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং যুগ্ম জেলা জজের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজের আদালতে
আপীল দায়ের করতে পারবে। তবে যুগ্ম জেলা জজ যদি ৫০০০০০(পাঁচ লক্ষ) টাকার অধিক আর্থিক
এখতিয়ারের কোন মামলায় রায় প্রদান করেন, তাহলে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে।
খ) হাইকোর্ট বিভাগের আদি এখতিয়ারমূলে বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল দায়ের
করতে পারবে।
কে আপীল দায়ের করতে পারে:
নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে যে কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি
উচ্চ আদলতে আপীল করতে পারেন। তবে, আইনে যে সকল ক্ষেত্রে আপীল করার অধিকার নির্ধারিত
করে দেওয়া হয়েছে শুধু সে সকল ক্ষেত্রে আপীল করা যায়। আইনের প্রশ্নে বা ঘটনার প্রশ্নে
বা উভয় ক্ষেত্রে ই আপীল করা যায়।
যে সকল ক্ষেত্রে আপীল চলে নাঃ
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৪১২ ধারা মোতাবেক যে সকল ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বা আসামী দোষ স্বীকার করলে কতিপয় ক্ষেত্রে আপীল চলবে না।ফৌজদারি আইনের ৪১৩ ধারা মোতাবেক তুচ্ছ মামলার ক্ষেত্রে অর্থাৎ যে সব ক্ষেত্রে ৫০/- জরিমানা বা এক মাসের কারাদন্ড হয় সে ক্ষেত্রে আপীল চলবে না।
ফৌজদারি আইনের ৪১৪ ধারা মোতাবেক সংক্ষিপ্ত বিচারের কতিপয় দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলবে না।