তামাদি আইন সর্ব প্রথম ১৭৯৩ সালে ইংরেজিতে প্রবর্তন করা হয়। ১৮৫৯ সালে পূনাঙ্গ আইন করা হয়।১৮৬৩ সালে এটিকে নতুন করে বিধিবদ্ধ করা হয়।পরবর্তীতে ১৮৫৯ সালের তামাদি আইনের পরিবর্তে ১৮৭১ সালে তামাদি আইন প্রবর্তন করা হয়।
১৮৭১ সালের তামাদি আইনে সরকার কর্তৃক যে কোন মোকদ্দমা দায়েরের সময় ছিল ৬০ বৎসর। পরবর্তীতে ১৮৭১ সালের তামাদি আইনের পরিবর্তে ১৮৭৭ সালে তামাদি আইন প্রবর্তন করা হয়। সর্বশেষ ১৯০৮ সালে তামাদি আইন প্রবর্তন করা হয়।
বর্তমান তামাদি আইনঃ-
তামাদি আইন ১৯০৮ সালের ৯ নং আইন । আইনটি ১৯০৮ সালের ৭ ই আগস্ট প্রণীত হয়।এটি কার্যকর হয় ১৯০৯ সালের ১ লা জানুয়ারী। এটি একটি পদ্ধতিগত আইন।তামাদি আইনের মোট ধারা ৩২ টি , ৩ টি ধারা বাতিল করা হয়েছে এবং বলবৎ রয়েছে ২৯ টি ধারা।তামাদি আইনের মোট অনুচ্ছেদ রয়েছে ১৮৩ টি। মোট তফসিল ৩ টি ( ২য় ও ৩য় তফসিল বাতিল করা হয়েছে।বর্তমানে বলবৎ আছে ১ টি তফসিল।
বি:দ্র: [ মনে রাখতে হবে বাতিল আর বিলুপ্ত এক নয় সুতরাং যদি বলা থাকে ওমুক নম্বর ধারা বাতিল করা হয়েছে তার পরেও কিন্তু মোট ধারা গণনা করার সময় সেই ধারাকে গণনা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না সে হিসেবে তামাদি আইনের ৩২ টি ধারার মধ্যে ৩ টি ধারা বাতিল করার পরেও বলতে হবে তামাদি আইনের মোট ধারা ৩২ টি। যদি সেই ৩ টি ধারা বিলুপ্ত করা হতো তাহলে আমরা মোট ধারা বলতাম ২৯ টি।
তামাদি আইন
তামাদি আইন ১৯০৮ A to Z Key points
তামাদি আইন ১৯০৮এর বিস্তারিত আলোচনাঃ-
অধ্যায়-০১
ধারা-১ সংক্ষিপ্ত শিরােনাম, কার্যকারিতার সীমা ও প্রবর্তন (Short title, extent and Commencement); ধারার মূলকথাঃ
প্রাথমিক বিষয়(Preliminary) ধারা ১ থেকে ২ পর্যন্ত।এটি ১৯০৮ সালের ৯ নং আইন।এটি কার্যকর হয় ১৯০৯ সালের ১লা জানুয়ারী। আইনটি সমগ্র বাংলাদেশে প্রযােজ্য।
ধারা-২ : সংজ্ঞাসমূহ (Definitions): এই ধারায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলাের সংজ্ঞা:
দরখাস্তকারী (applicant)
সরল বিশ্বাস (good faith)
বিনিময় পত্র (bill of exchange)
বাদী (plaintif)
মুচলেকা (bond)
অঙ্গীকার পত্র (promissory note)
বিবাদী (defendant]
মামল[suit]
ব্যবহারস্বত্ব [easement)
অছি (trustee)
বিদেশ (foreign country)
অধ্যায়-০২
ধারা: (৩-১১) (মামলা, আপীল ও দরখাস্তের তামাদি(Limitation of Suits. Appeals and Applications)
ধারা-৩। তামাদি মেয়াদ শেষে দায়েরকৃত মামলা ইত্যাদি খারিজ (Dismissal of suits, etc, Instituted, etc, after period of Limitation): তামাদির মেয়াদ শেষে দায়ের কৃত দেওয়ানী মােকদ্দমা খারিজ হবে। বিবাদী পক্ষ প্রশ্ন উত্থাপন না করলেও খারিজ হবে। এই ধারা অনুযায়ী তামাদির বিষয়বস্তু ৩ টি। যথাঃ ১) মামলা; ২) আপীল ও। ৩) আবেদনপত্র ।। [নােটঃ এই ধারার বিধান আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।
ধারা-৪। আদালত বন্ধ থাকা অবস্থায় যখন তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় (Where court is closed when period expires): তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার দিন আদালত বন্ধ থাকলে পুনরায় খােলার দিন মামলা, আপীল বা আবেদনপত্র দায়ের করা যাবে।
ধারা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
আদালত লম্বা ছুটিতে থাকলে ক্ষেত্রবিশেষ আদালতের সেরেস্তা খােলা থাকে। সেক্ষেত্রে মামলা, আপীল বা আবেদনপত্র উক্ত সেরেস্তায় দায়ের করতে হবে।তবে ২ (দুই) টি ক্ষেত্রে অত্র ধারার সুবিধা পাওয়া যাবে না।
যথা (১) কৌশলের আশ্রয় নিয়ে আদালত পুনরায় খােলার দিন জাবেদা নকল চেয়ে আবেদন করলে এবং (২) আদালত পুনরায় খােলার দিন ভুল আদালতে মামলা দায়ের করলে।
ধারা-৫। ক্ষেত্র বিশেষে মেয়াদ বৃদ্ধিকরণ (Extension of period in certain cast:-
অলীল, রিভিউ, রিভিশন ইনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মায়ের করতে না পারলে সরকারী ৫ ধারার বিধান মতে বিজ্ঞ আদালতকে লম্বা করার মতো কারণ উল্লেখ পূর্বক মেয়াদ বৃদ্ধি বা বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যে ক্ষেত্রে ৫ ধারার বিধান প্রযােজ্য। ক) আপীলের দরখাস্তে। খ) আশীল করার অনুমতি প্রার্থনার সৱখাস্তে। গ) রিভিউ এর দরখাস্তে। ঘ) রিভিশনের দরখাস্তে। এবং ও) অন্য কোন আইনের যেখানে তাখাদিৱ ৫ ধাৱা প্ৰযোজ্য করা হয়েছে ।
লিমিটেশন এ্যাক্ট ১৯৫৮ এর ৫ ধারা স্যূটের বা মূল মামলা যেমন স্বত্ব ঘােষণা, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দায়ের
করার মেয়াদের ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে না।
৫ ধারায় তামাদি মওকুফের জন্য আবেদন মঞ্জুর করা আদালতের স্বেচ্ছোধীন ক্ষমতা। অর্থাৎ তামাদি মওকুফ করতে আদালত বাধ্য নয়।
ধাৱা ৬ থেকে ৯ আইনগত অপারগতা (Legal Disability):-
তামাদি আইনের ৬, ৭, ৮ এবং ১৯ ধারায় আইনগত অপারগতার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। যে ব্যক্তির মামলা করার অধিকার সৃষ্টি হয়েছে সে যদি উক্ত সময় মামলা করতে আইনগতভাবে অপরাগ থাকে, তাহলে তার মামলা করার তামাদির মেয়াদ কিভাবে গণনা করা হবে তা ৬ থেকে ৯ ঘাৱা পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
ধারা-৬। বৈধ অপারগতা (Legal disability): আইনগত অপারগতা বলতে নিমর্নিত ৩ টি বিষয়কে বুঝায় । যথা
১) নাবালক; ২) উনাদ বা পাগল; ও ৩) জড়বুদ্ধ বা নির্বোদ।
৬ ধারার বিধান কেবলমাত্র মামলা এবং আবেদনপত্রের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য এবং আবেদনপত্র হতে হবে কেবলমাত্র ডিক্রি কার্যকরকরণের আবেদন। ৬ ধারার বিধান শুধুমাত্র মামলা এবং ডিক্রি কার্যকর করার জন্য আবেদনপত্রের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য ।
মামলা করার অধিকারী কোন ব্যক্তি যে সময়ে সে মামলা করার অধিকারী হয় উক্ত সময়ে সে নাবালক উন্মাদ বা জড়বুদ্ধ থাকলে তার মামলা করার তামাদির মেয়াদ গণনা করা শুরু হবে যখন তার এই আইনগত অপরাগতা অর্থাৎ নাবালকত্ব উন্মাদ বা জড়বুদ্ধতার অবসান হবে।
ধারা-৭: কতিপয় বাদী অথবা দরখাস্তকারীর একজনের অপারগতা (Disability of one of several plaintiffs of applicants):
যৌথভাবে অধিকারী কয়েক ব্যক্তির একজন যদি অপারােগ হয় এবং ঐ একজনকে বাদ দিয়ে যদি দায়িত্ব সম্পাদনের সুযােগ থাকে তবে তামাদির মেয়াদ চলমান থাকবে। যেক্ষেত্রে দায়িত্ব সম্পাদনের মত কেহই থাকবে না সেক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ স্থগিত থাকবে।
৬ ও ৭ ধারার আইনগত অপরাগতার ব্যতিক্রম
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আইনগত অপরাগতার কারণে তামাদি স্থগিত থাকবে না। অর্থাৎ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ৬ এবং ৭ ধারার বিধান প্রযােজ্য হবে না।
১) অগ্রক্রয়ের মামলা এবং | ২) আইনগত অপরাগতা শেষ হওয়ার পর তিন (৩) বছরের বেশী সময় তামাদি থাকবে না অর্থাৎ আইনগত অপরাগতা শেষ হওয়ার তিন (৩) বছর পর মামলা দায়ের করলে উক্ত মামলা খারিজ হবে।
তামাদি আইন
তামাদি আইন ১৯০৮ A to Z Key points
ধারা-৮: বিশেষ ব্যতিক্রম (Special exceptions):-
অগ্রক্রয়ের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এবং আইনগত অক্ষমতা অবসানের পরে ৩ বৎসর অতিক্রম হলে ৬ এবং ৭ ধারার বিধান কার্যকর হবে না।
ধারা-৯: সময়ের অবিরাম চলন (Continuous running of time):-
তামাদির সময় একবার চলতে শুরু করলে কোন অক্ষমতা বা অসমর্থতা একে থামাতে পারে না। তবে কোন পাওনাদারের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কোন দেনাদারের উপর ন্যস্ত থাকলে তামাদির সময় স্থগিত থাকে।
ধারা-১০: প্রকাশ্য অছি এবং তাহাদের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা (Suits against express trustees and their representatives):-
বি:দ্র: ট্রাষ্ট বা তার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করতে হলে তা কখনাে তামাদি দ্বারা বারিত হবে না।
ধারা -১১: বৈদেশিক চুক্তির উপর মামলা (Suits on foreign contracts):-
বিদেশে সম্পাদিত চুক্তির উপর বাংলাদেশে যেইসব মামলা দায়ের করা হয়,সেইক্ষেত্রে তামাদি সংক্রান্ত বিধি গ্রাহ্য হইবে। বিদেশী কোনাে আইনে তামাদি সংক্রান্ত বিধি জবাব স্বরূপ গ্রাহ্য হইবে না।
অধ্যায়-০৩
ধারা ১২-২৫। utamins can total (Computation of Period of Limitation:-
ধারা-১২: আইনানুগ কার্যধারায় যেই পরিমাণ সময় গণনা হইতে বাদ দিতে হইবে(Exclusion of time in legal proceedings):
কতিপয় সময় বাদ দিয়ে তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হবে। যথাঃ মেয়াদ আরম্ভ দিন অর্থাৎ কোন মামলা আপীল বা দরখাস্তের জন্য নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ গণনা করতে, যেদিন থেকে উক্ত মেয়াদ আরম্ভ হবে, সেদিনটি বাদ দিতে হবে।
রায় ঘােষণার দিন] নকল গ্রহণ করতে যে সময় ব্যয়িত সময় অর্থাৎ আপীল, আপীলের অনুমতি দরখাস্ত অথবা রায় পুনরীক্ষণের দরখাস্তের জন্য নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হবে, যেদিন উক্ত রায় ঘােষণা করা হয়েছে সেদিনটি এবং যে ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশ সম্পর্কে আপীল করা হবে বা পুনরীক্ষণের প্রার্থনা করা হবে, তার নকল গ্রহণ করতে যে সময় ব্যয়িত হবে, তা বাদ দিতে হবে।
যে ক্ষেত্রে ডিক্রি সম্পর্কে আপীল বা পুনরীক্ষণের প্রার্থনা করা হয়, সেক্ষেত্রে যে রাযের উপর উক্ত ডিক্রি প্রতিষ্ঠিত সেই রায়ের নকল উত্তোলনের জন্য যে সময় ব্যয় হবে তা বাদ দিতে হবে।রােয়েদাদ নামঞ্জুর করার দরখাস্তের জন্য রােয়েদাদের নকল পেতে যে সময় বাদ দিতে হবে।
ধারা-১৩:- বাংলাদেশ এবং অন্যান্য কয়েকটি এলাকা হইতে বিবাদীর অনুপস্থিতকালীণ (defendants absence ) সময় গণনা হইতে বাদ [exclusion) দিতে হইবে:-
বিবাদী যতদিন বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থান করবে ততদিন তামাদির মেয়াদ গণনা স্থগিত থাকবে।
ধারা -১৪:- এখতিয়ারবিহীন আদালতে সদুদ্দেশ্যমূলক কার্যধারায় [bonafide proceeding] যেই সময় গণনা হইতে বাদ দিতে হইবে:-
মূল কথা: শুধুমাত্র মূল মামলা এবং আপীল সৎ উদ্দেশ্যে এখতিয়ারবিহীন আদালতে দায়ের করলে এবং বিচারাধীন থাকলে উক্ত দিনগুলাে । তামাদির মেয়াদ গণনায় বাদ দিতে হবে।
অর্থাৎ এখতিয়ারবিহীন আদালতে সৎ উদ্দেশ্যে দায়ের করা করা স্যুট বা মূল মামলা বা আপীল কার্যধারায় ব্যয়িত সময় গণনা থেকে বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ ১৪ ধারা অনুযায়ী তামাদিও সময় বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুইটি শর্তপূরণ করতে হবে;
এখতিয়ারবিহীন আদালতে মূল মামলা বা আপীল দায়ের করেছে।
উক্ত মূল মামলা বা আপীল সৎ উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছিল।
যখন উক্ত মূল মামলা বা আপীলটি এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে দায়ের করতে হবে, তখন উপরের দুইটি শর্ত সাপেক্ষে উক্ত মূল মামলা বা আপীল যত দিন উক্ত এখতিয়ারবিহীন আদালতে বিচারাধীন ছিল, সেই দিনগুলো মূল মামলা বা আপীল দায়েরের তামাদির মেয়াদ থেকে বাদ দিয়ে গণনা করতে হবে । ১৪ ধারা শুধুমাত্র মূল মামলা এবং আপীলের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।
ধারা-১৫:- কার্যক্রম স্থগিত [proceedings are suspended) থাকাকালীন সময় বাদ দিতে হইবেঃ-
কোন আদালত কর্তৃক কোন কার্যধারা স্থগিত রাখা হলে উক্ত দিনগুলাে তামাদির মেয়াদ গণনায় বাদ দিতে হবে।
ধারা-১৬:-.ডিক্রী জারির বিক্রয় রদ করিবার কার্যধারা মূলতী (Proceedings to set aside) থাকাকালীন সময় বাদ দিতে হইবে:-
ডিক্রী জারির নিলাম রদের জন্য দায়েরকৃত কার্যধারা যতদিন চলিয়াছে, তাহা উক্ত মেয়াদ গণনা হইতে বাদ দিতে হইবে।
ধারা-১৭:- মামলা করিবার অধিকার অর্জনের পূর্বে মৃত্যুর ফলাফল (Effect of death before right to sue accrues:
মামলা করার অধিকার লাভের পূর্বে মৃত্যু হলে। যেখানে উক্ত ব্যক্তি জীবিত থাকলে একটি মামলা করার অধিকারী হতাে সেখানে আইনগত প্রতিনিধি যেদিন যােগ্যতা অর্জন করবে।
সেদিন থেকেই তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে; যেখানে উক্ত ব্যক্তি জীবিত থাকলে তাহার বিরুদ্ধে অন্য কোন ব্যক্তি একটি মামলা করার অধিকারী হতাে সেখানে আইনগত প্রতিনিধি থাকলে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে সময়ে উক্ত সময় থেকেই তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে; উল্লেখিত কোন বিধানই অগ্রক্রয়াধিকার কার্যকরীকরণের মামলার ক্ষেত্রে বা স্থাবর সম্পত্তির দখল লাভের ক্ষেত্রে কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে ভােগকৃত কোন সম্পত্তির দখল লাভের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে না ।
ধারা ১৮-১৯ :- প্রতারণা এবং লিখিত প্রাপ্তি স্বীকারের ফলাফল:-
Effect of Fraud & Acknowledgement in writing তামাদি আইনের ১৮ ধারায় প্রতারণার ফলাফল এবং ১৯ ধারায় লিখিত প্রাপ্তি স্বীকারের ফলাফল নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে।
ধারা-১৮ প্রতারণার ফলাফল (Effect of Fraud):
যেদিন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সর্বপথম প্রতারণার কথা জানতে পারে, সেদিন থেকে অথবা দলিল গােপন করা হয়ে থাকলে সর্বপ্রথম যেদিন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দলিলটি উপস্থাপন করতে সমর্থ হয় বা অপর পক্ষকে উপস্থাপন করার জন্য বাধ্য করতে পারে, সেদিন থেকে মামলা দায়ের বা দরখাস্ত দাখিলের জন্য নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হবে।
সে সর্বপথম যখন উক্ত প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারে তখন থেকে বা দলিল গােপন করা হয়ে থাকলে সর্বপ্রথম যেদিন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি দলিলটি উপস্থাপন করতে সমর্থ হয় বা অপর পক্ষকে উপস্থাপন িকরতে বাধ্য করতে পারে, সেদিন থেকে মােকদ্দমা দায়ের বা দরখস্ত দাখিলের জন্য নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হবে ।
ধারা -১৯ :- লিখিত প্রাপ্তি স্বীকারের ফলাফল (Effect of acknowledgement in writing):
কোন বিষয়ে তামাদির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই লিখিত ভাবে স্বাক্ষর করে দায় স্বীকার করলে নতুন করে তামাদির সময় শুরু হয়। লিখিত স্বীকারােক্তিতে কোন তারিখ না দেয়া হলে উক্ত তারিখ বা সময় সম্পর্কে মৌখিক সাক্ষ্য দেয়া যাবে কিন্তু বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর বিধান সাপেক্ষে মৌখিক সাক্ষ্য দেয়া যাবে না।
তামাদি আইনের ১৯ ধারায় লিখিতভাবে প্রাপ্তি স্বীকারের [Effect of Acknowledgement in writing] সম্পর্কে আলাচনা :-
শর্তসমূহ:-
একটি প্রাপ্তি স্বীকারের [Acknowledgement] বিবৃতি থাকতে হবে
এমন প্রাপ্তি স্বীকার [Acknowledgement] জন্যে কোন সম্পত্তি বা অধিকারের দায় সম্পর্কে;
তামাদির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এমন প্রাপ্তি স্বীকার হতে হবে;
যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত সম্পত্তি বা অধিকার দাবী করা যায় সেই ব্যক্তি কর্তৃক প্রাপ্তী স্বীকার [Acknowledgc]ent) অবশ্যই লিখিত এবং স্বাক্ষরিত হতে হবে। উপরে উল্লেখিত শর্তে স্বীকৃতি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় থেকে তামাদির মেয়াদ নতুনভাবে গণনা শুরু হবে।
ঋণ ৰা সুদ পরিশােধ ৰা স্থলাভিষিক্ত :-
ধারা-২০ :- উত্তর দায় সংক্রান্ত ঋণ পরিশোধের অথবা সুদ প্রদানের ফলাফল (Effect of payment on accountol debt or 01 interest on legacy):
ঋণ ৰা সুদের ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই আংশিক ঋণ বা সুদ পরিশােধ করলে নতুন করে তামাদির সময় শুরু হয় ।
ধারা-২১:- অক্ষম ব্যক্তির প্রতিনিধি (Agent of person under disability); যথাবিহিতরূপে ‘ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি’ বলিতে অপারগতাগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে-
আইন সম্মত অভিভাবক
কমিটি বা ম্যানেজারকে; অথবা
অনুরূপ অভিভাবক, কমিটি বা ম্যানেজার কর্তৃক স্বীকৃতি স্বাক্ষর করিবার বা অর্থ প্রদান করিবার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বুঝাইবে।
ধারা-২২:-নতুন বাদী বা বিবাদীকে (plaintiff or defendant) কাহারও স্থলাভিষিক্ত ৰা পক্ষভুক্ত ( substituting or adding) করিবার ফলাফল:-
নতুন বাদা বা বিবাদীকে মামলা দায়েরের পর পক্ষভক্ত বা কারাের স্থলাভিষিক্ত করা হলে তাহার ক্ষেত্রে সেই তারিখে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
কিন্তু স্বত্ব স্থানান্তরের ফলে পক্ষভূক্ত বা স্থলাভিষিক্ত হলে অথবা ৰা বিবাদীতে এবং বিবাদীকে বাদীতে পরিণত করা হলে উক্ত বিধান কার্যকর হবে না।
ধারা-২৩:- অবিরাম চুক্তিভঙ্গ বা অন্যায় করা (Continuing breaches and wrongs of contract): তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২৩ ধারায় অবিরাম চুক্তিভঙ্গের ফলাফল সম্পর্কে আলচনা :-
অবিরামভাবে চুক্তি ভঙ্গ বা অনিষ্ট করলে প্রতি মুহুর্তে নতুন তামাদির মেয়াদ শুরু হবে।
উদাহরণ:- ধারের টাকা পরিশাধের তারিখে (ক) চুক্তিভঙ্গ করলাে এবং পরবর্তী একটি তারিখে টাকা পরিশােধের দিন দিলাে। উক্ত তারিখেও সে টাকা পরিধে করতে ব্যর্থ হলাে এবং পুনরায় তারিখ দিলাে। (ক) যতবার চুক্তিভঙ্গ করবে ততবার নতুন করে ধারের টাকা আদায়ের মামলা দায়েরের তামাদির মেয়াদ শুরু হবে।
ধারা-২৪ :- বিশেষ ক্ষতির কারণ না হইলে [not actionable without special damage] যেই কাজের জন্য মামলা করা যায় না, তাহার জন্য ক্ষতিপূরণের [compensation] মামলা:-
যখন কোন কাজ দ্বারা তাৎক্ষনিক কোন ক্ষতি হয় না তবে পরবর্তীতে কোন ক্ষতি হয়। তখন ক্ষতি সংঘটিত হওয়ার সময় থেকে তামাদির মেয়াদ শুরু হবে। ব্যাখ্যা ও আলােচনা: যে কাজের দ্বারা কোন নির্দিষ্ট ক্ষতি সাধিত না হলে কোন মামলার কারণ উদ্ভব হয় না, সে রকম ক্ষতিপূরণের মামলার জন্য যখন ক্ষতি হয়, তখন থেকে তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হবে।
যেহেতু তাৎক্ষণিক কোন ক্ষতি না করে ভূ-গর্ভ থেকে কয়লা খনন ও উত্তোলন করে কিন্তু পরে জমিটির উপরিভাগ ধসে পড়ে ক্ষতি হওয়ায় জমিটির উপরিভাগ ধসে পড়ার তারিখ থেকে তামাদি গণনা শুরু হবে।
ধারা-২৫:- দলিলের ভগ্নিখিত সময়ের গণনা (Computation of time mentioned in instruments) :-
আইনের সাধনকল্পে যাবতীয় দলিল গ্রেগরীয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে প্রণীত বলিয়া বিবেচিত হইবে।
তামাদি আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারার বর্ণনা সমূহ
অধ্যায়-o৪ [ধারা ২৬-২৮) দখলবলে মালিকানা স্বত্ব লাভ (Acquisition of Ownership by Possession)
ধারা-২৬। সুখাধিকার সমূহ অর্জন (Acquisition of right to easements):-
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী যখন কোন জলপথ, আকাশপথ এবং কোন অবকাঠামো শান্তিপূর্ণভাবে উপভােগ করা ছাড়াও ব্যবহার স্বত (Easement) হিসেবে, অধিকার হিসেবে, কোন কোন প্রকার বাধা বিপত্তি ছাড়া এ বছর ধরে ব্যবহার করছে, তখন সেখানে ব্যবহার স্বত (Easement) অধিকার অর্তন হয় ।
আলাে-বাতাসের প্রবেশ ও ব্যবহার বা কোন পথ বা জলস্রোত অথবা কোন পানির ব্যবহার অথবা যে কোন সুখাধিকার অব্যাহতভাবে ৫ বার। (সরকারী সম্পত্তিতে ৬০ বৎসর) ধরে শান্তিপূর্ণ ও প্রকাশ্যে ভােগ করলে পবাধিকার বা সুখাধিকার জানায়।
সরকারি কোন সম্পত্তিতে সুখাধিকার অর্জন করতে হলে উক্ত অধিকার একনাগাড়ে ৬০ বছর ধরে ভােগ করতে হবে। • সরকারি কোন সম্পত্তি ছাড়া অন্যকোন সম্পত্তিতে সুখাধিকার অর্জন করতে হলে উক্ত জমিতে একনাগারে ২০ বছর পরে ভােগ করছে হবে। সুখাধিকার মামলায় ২০ বৎসর বলতে মামলা দায়েরের তারিখের অব্যবহিত পূর্ববর্তী ২ বছরের মধ্যে সমাপ্ত ২০ বসর বুঝাবে। (অর্থাৎ তামাদির সময় ০২ (দুই) বৎসর)।
সুখাধিকারী easements কি?
সুখাধিকার হলাে এমন কোন এক ধরণের অধিকার যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্যকোন ব্যক্তির জমি বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। সুখাধিকার দুইভাবে অর্জন হতে পারে যথা: ১) প্রেসক্রিপশন এর মাধ্যমে (by prescription) ২) সুখাধিকার অর্জন এর মাধ্যমে (by easement) যখন সুখাধিকারসমূহ অর্জন হয় ।
যে ক্ষেত্রে কোন দালানে আলাে বা বাতাসের প্রবেশ ও ব্যবহার সুখাধিকার হিসাবে এবং অধিকার হিসাবে অব্যাহত ভাবে ২০ বসর যাবত শান্তিপূর্ণভাবে ভােগ করা হয়েছে এবং যে ক্ষেত্রে কোন পথ বা জলস্রোত অথবা কোন পানির ব্যবহার অথবা অন্য কোন যে কোন সুখাধিকার (ইতিবাচক, নেতিবাচক যাই হােক না কেন) কোন ব্যক্তি সুখাধিকার ও অধিকার হিসাবে তাতে স্বত্ব দাবী করে অব্যাহতভাবে এবং বিশ (২০) বৎসর যাবত শান্তিপূর্ণভাবে ও প্রকাশ্যে ভােগ করেছেসেক্ষেত্রে অনুরূপ আলাে বাতাসের প্রবেশ ও ব্যবহার পথ জলস্রোত পানির ব্যবহার অথবা অন্য কোন সুখাধির নিরঙ্কুশ ও অলক্ষ্মনীয় অধিকারে পরিণত হবে।
ধারা-২৭:- অধীনস্থ প্রজাসত্ব বা পার্শ্ববর্তী এলাকার ভাবী উত্তরাধিকারীর পক্ষে [favour of reversioner of servient tenement] সময়ের অব্যাহতি : যেইক্ষেত্রে কোন জমি বা পানির সুখাধিকার কোনাে জীবন স্বত্ব বা ৩ বৎসরের অধিক কালের মঞ্জুরকৃত স্বত্ববলে প্রাপ্ত হইয়াছে,বা ভােগ করা গিয়াছে৷
সেইক্ষেত্রে উক্ত স্বত্ব বাতিল হইবার পরবর্তী ৩ বৎসরের মধ্যে যদি স্বত্ব লাভের অধিকারী ব্যক্তি অনুরূপ জমি বা পানি সম্পর্কে উক্তরূপ দাবির বিরােধিতা করে, তবে ২০ বৎসর গণনা করিবার সময় উপরােক্ত জীবনস্বত্ব বা মঞ্জুরী বহাল থাকাকালে সুখাধিকার যতদিন ভােগ করা গিয়াছে, ২০ বৎসর হইতে সেই সময় বাদ দিয়া গণনা করিতে হইবে।
ধারা-২৮:- সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্তি (Extinguishment of right to property):
কোন সম্পত্তিতে দখল লাভের জন্য মামলা করার বিষয়ে এই আইনে যে সময়সীমা করে দেয়া হয়েছে, তা অতিবাহিত হবার পর উক্ত সম্পত্তিতে বাদীর অধিকার নষ্ট হয়ে যাবে।
তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বিরুদ্ধ দখল (Adverse Possession) নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে।বিরুদ্ধ দখল (adverse possession) বা ১২ বৎসর দখলে থাকার কারণে স্থাবর সম্পত্তিতে যে স্বত্ব তৈরী হয় তা দখলি (Possession title) নামে পরিচিত।
তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বিরুদ্ধ দখল (Adverse Possession) নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে কোন সম্পত্তিতে দখল উদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা দায়েরের যে তামাদির মেয়াদ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, তা উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেই সম্পত্তিতে বাদীর অধিকার বিলুপ্ত হবে।
তামাদি আইনের ১ তফসিলের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্থাবর সম্পত্তি বেদখলের তারিখ হতে ১২ বৎসরের মধ্যে দখল উদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারায় মামলা দায়ের করতে হয়। যদি বাদী এই নির্ধারিত সময়ে মামলা দায়ের না করে তাহলে ৩ আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী সম্পত্তিতে তার অধিকার সম্পর্ণকলৈ বিলুপ্ত হবে এবং বিবাদীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সম্পত্তিতে বিবাদীর এরুপ দখল লাভ বিরুদ্ধে দখল (Adverse Possession) বলে পরিচিত। অথাৎ বিবাদা ১২ বৎসর যাবৎ স্থাবর সম্পত্তিতে নিরবিচ্ছিন্ন ও বাধাহীনভাবে দখলে থাকলে এবং বাদী ১২ বৎসরের মধ্যে দখল উদ্ধারে কোন আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ না করলে বিবাদী উক্ত সম্পত্তিতে বিরুদ্ধে দখল (Adverse Possession) অর্জন করে।
আইন ১৯০৮ A to Z Key points
তামাদি আইন ১৯০৮ A to Z Key points
অধ্যায়-০৫ ধারা: ২৯-৩২
সংরক্ষণ ও বাতিল (Saving and Repeals)] তামাদি আইনের অপ্রযােজ্যতাঃ ধারা-২৯:-
ব্যতিক্রম (Savings); কতিপয় আইনের ক্ষেত্রে তামাদি আইনের অপযযাজ্যতা , তামাদি আইনের ২৯(২) ধারা অনুযায়ী তামাদি আইনের ৫ ধারা বিশেষ আইনে উল্লেখিত তামাদির জন্য প্রযােজ্য না।
এই ২৯ (২) ধারা অনুযায়ী কোন বিশেষ আইনে কোন মামলা, আপাল বা দরখাস্তের জন্য এই আইনের ধারা ৩, ৪, ৯ থেকে ১৮ ধারা ও ২২ ধারার বিধানসমূহ সেই পরিমাণ প্রযােজ্য হবে, যে পরিমাণ তা উক্ত বিশেষ আইনের স্পষ্ট বহির্ভূত না। কিন্তু এই আইনের অবশিষ্ট বিধানসমূহ প্রযােজ্য হবে না। সুতরাং ২৯(২) ধারা অনুযায়ী তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধান প্রযােজ্য না।।
কতিপয় ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযােজ্য নহে
যথা:-
বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারা প্রযােজ্য নহে; চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ২৫ ধারার ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযােজ্য নহে;
বিবাহ বিচ্ছেদ আইন (১৯৬৯ সালের ৪নং আইন) মােতাবেক আনীত মামলার ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযােজ্য নহে; এবং এ সুখাধিকার আইন, ১৮৮২ এর আওতাভূক্ত এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলার ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ২৬ ও ২৭ ধারা এবং ২ ধারায় বর্ণিত ‘সুখাধিকার’ এর সংজ্ঞা প্রযােজ্য হবে না। তামাদি আইন মুল ফৌজদারী মামলা প্রযােজ্য নয়; তবে আপীলের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।