Ads Area

Snow
Maruf Hossen Jewel

তামাদি আইনে বিলম্ব মওকুফ কি?

তামাদি-আইনে-বিলম্ব-মওকুফ-কি?

তামাদি আইন, ১৯০৮ এর বিধানানুসারে, দেওয়ানী মূল মোকদ্দমা, আপীল বা রায়ের পুনঃবিচার বা পুনঃবিবেচনার জন্য দরখাস্ত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে দায়ের করতে হয়। ফলে, সেই নির্দিষ্ট সময়-সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে, উক্ত আইনগত দাবী তামাদির কারণে বাতিল বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধান এর ব্যতিক্রম।

তামাদি আইনে বিলম্ব মওকুফ কি?


তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ৫ ধারায় বলা আছে-


“যেকোন আপীল বা রায় পুনর্বিচার (Review of judgment) বা পুনরীক্ষণ (Revision) এর আবেদন বা আপীল করার অনুমতি প্রার্থনার দরখস্ত বা অন্য কোন আবেদন, যার উপর এই ধারা বর্তমানে বলবৎ কোন আইনের দ্বারা বা অধীনে প্রযোজ্য করা হয়, উহার বিহিত সময়সীমার পরে গ্রহণ করা যেতে পারে, যদি আপীলকারী বা দরখস্তকারী আদালতের প্রতীতি উৎপন্ন করে যে, ঐরূপ সময়সীমার মধ্যে ঐ আপীল না করবার বা ঐ দরখস্ত না করার পর্যাপ্ত কারণ তার ছিল।”


সুতরাং নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও কোন আপীল, রিভিউ, রিভিশন বা অন্যান্য দরখাস্ত দাখিল করা হলে, উপযুক্ত কারণ সাপেক্ষে আদালত তামাদি আইনের ৫ ধারার অধীনে আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন, একেই তামাদি আইনে Condonation of Delay বা বিলম্ব মওকুফ বলে।


 

কোন ধরনের মোকদ্দমায় ৫ ধারা মতে তামাদি সীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা যায়? 

যে সব ধরনের মোকদ্দমায় তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ৫ ধারা মতে তামাদি সীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা যায় তা নিম্নরুপঃ

  • আপীল মামলায়; 
  • আপীল করার অনুমতি প্রার্থনার দরখাস্ত;
  • রায় পুনঃবিবেচনা বা রিভিউ দরখাস্ত; 
  • রিভিশন দরখাস্ত; এবং

অন্য কোন আইনে দরখাস্ত যার উপর তামাদি আইনের ৫ ধারা প্রযোজ্য।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দেওয়ানী মূল মামলার ক্ষেত্রে বিলম্ব মওকুফ প্রযোজ্য নয়। যেমন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৯ ধারার অধীনে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য বেদখল হওয়ায় তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হয়। সুতরাং যদি কোন বেদখলকৃত ব্যক্তি ৬ মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে না পারে, তাহলে তামাদি আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী আদালত মামলাটির আরজি খারিজ করে দিবেন এবং ৫ ধারার অধীনে বিলম্ব মওকুফের আবেদন করা হলেও আদালত সেটা নামঞ্জুর করে মোকদ্দমা খারিজ করে দিতে পারেন। 

তামাদি মওকুফের জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়?

তামাদি আইনের ৫ ধারায় মোকদ্দমার উভয় পক্ষকে তামাদি মওকুফের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আদালত কি কি শর্তে এই মওকুফ মঞ্জুর করতে পারেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয় নি। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ৫ ধারার বিধান এবং বিচারিক নজীর বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, তামাদি মওকুফের জন্য একজন আবেদনকারীকে নিম্নলিখিত শর্তসমূহ পূরণ করতে হবেঃ



 

১. যথেষ্ট কারণ

যদি আবেদনকারী আদালতকে সন্তোষজনকভাবে দেখাতে পারে যে, যথেষ্ট কারণে সে নির্ধারিত সময়ে আবেদন দাখিল করতে পারে নি। যদিও এই আইনের ৫ ধারায় যথেষ্ট কারণের কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নি। এখানে ‘যথেষ্ট কারণ’ অর্থ বলতে সত্য এবং বিশ্বাসযোগ্য কারণকে বুঝায়। 


এছাড়া, Bangladesh Vs. Abdul Wahed and Others মামলায় বলা হয়েছে যে, কোন কোন বিষয়গুলো ‘যথেষ্ট কারণ’ তৈরী করে তা নির্ধারণের কোন বাঁধা-ধরা নিয়ম নাই। এটা প্রত্যেক মামলার ঘটনা এবং প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে।


অন্যদিকে, Imam Uddin Sheikh and Others Vs. Deputy Commissioner, Bagerhat মামলায় বলা হয়েছে, ‘যথেষ্ট কারণ’ হলো কোন কোন আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণের বাইরের ঘটনা। এমন কি এইক্ষেত্রে অবহেলা অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু মারাত্মক অবহেলা যথেষ্ট কারণের অন্তর্ভুক্ত করে না।


২. মোকদ্দমা দায়েরে বিলম্বের জন্য গুরুতর অবহেলা ছিল না

যে পক্ষ তামাদি আইনের ৫ ধারায় সুবিধা গ্রহণ করতে চায়, সে পক্ষ আদালতকে অবশ্যই সন্তুষ্ট করবে যে, মামলা পরিচালনায় তার কোন অবহেলা ছিলনা এবং সে অত্যন্ত সচেতনভাবে মামলা পরিচালনা করে আসছে। তামাদি মওকুফ করা হবে কিনা সেটা আদালতকে দরখাস্তকারীর কার্যাবলী থেকে বিবেচনা করতে হবে। যেক্ষেত্রে দরখাস্তকারীর অবহেলা আছে এবং দরখাস্তকারী উদাসীন, সেক্ষেত্রে তামাদির সময় বাড়ানোর কোন সুযোগ নাই। 


East Pakistan Vs. Subrata Kumar Das মামলায় সরকার পক্ষ ২২১ দিন বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করেছিল। আপিল দায়েরে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসাবে সরকার পক্ষ উল্লেখ করেছিল যে, সরকারী উকিল (P. P) তার ব্যক্তিগত কাজে ঢাকাতে গিয়েছিলেন এবং তার অনুপস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক আদেশসমূহের নকল পাওয়া সম্ভব ছিল না এবং ডেপুটি কমিশনার সময়মত পদক্ষেপ নিতে পারে নি। আদালত এই মর্মে বিলম্ব মওকুফ করেন যে, যেহেতু রাষ্ট্রীয় কাজ অনেক ব্যক্তির সমন্বয়ে করতে হয় এবং সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি জড়িত থাকে, তাই অতি অল্প সময়ে প্রতিকারের জন্য আদালতে আসা সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু অন্য একটি মামলায় মামলার নথি হারানোর গুরুতর অবহেলা, বিধায় আদালত বিলম্ব মওকুফ করেন নি।


৩. বিলম্বের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা

Mohammad Ishaq vs. Ruhul Amin and Others মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ মত দিয়েছে যে, যদি দরখাস্তকারী বিলম্ব বিষয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারে এবং উক্ত বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারে, তাহলে আদালত উপযুক্ত মামলায় বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন। এটা আইনের মীমাংসিত নীতি যে, প্রত্যেক দিনের বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। তবে প্রত্যেক দিনের বিলম্বের ব্যাখ্যা করার বিষয়টি সহজাতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।


৪. সরল বিশ্বাসে বিলম্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা

যদি আদালত বিলম্বের কারণ এবং ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন। তবে Rafiqul Islam Vs. Bangladesh মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ মন্তব্য করেন যে, বিলম্ব মওকুফ আদালতের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। কোন বিলম্বের আবেদন মওকুফ করার ক্ষেত্রে, কতদিন বিলম্ব হয়েছে সেটা প্রশ্ন নয়; কিভাবে এবং সরল বিশ্বাসে বিলম্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিনা সেটা মূলতঃ বিবেচ্য বিষয়। যদি বিলম্বের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক এবং সরল বিশ্বাসে করা হয়, তাহলে আদালত বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন।


এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে, আইনজীবী কর্তৃক ভূল উপদেশ প্রদান করাকেও ‘যথেষ্ট কারণ’ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

তামাদি আইনে বিলম্ব মওকুফের বিবেচ্য কারণ কী কী?

১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৫ ধারায় বিলম্ব মওকুফের কারণ হিসাবে নিম্নে লিখিত কারণগুলি বর্ণনা করা হয়েছে। উপমহাদেশের রায়ে যে কারণ বিবেচনা করা হয় তা নিম্নরুপ-


১. আবেদনকারীর অসুস্থতা

যদি কোন আবেদনকারী এই মর্মে সন্তুষ্ট করতে পারে যে, সে অসুস্থতা বশতঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপীল, রিভিউ বা রিভিশনের দরখাস্ত দাখিল করতে পারে নি। তাহলে তার অসুস্থততা আদালতের কাছে ‘যথেষ্ট কারণ’ বলে বিবেচিত হবে এবং আদালত এ ক্ষেত্রে তামাদি মার্জনা করে আবেদনটি গ্রহণ করতে পারেন।



 

২.দরখস্তকারীর কারারুদ্ধ অবস্থা

দরখস্তকারী যদি অন্য কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী হয়ে বা অন্য কোন কারণে কারারূদ্ধ থাকে, তাহলে আদালত তা স্বীয় বিবেচনায় নিয়ে বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন । অসুস্থতা বা কারারূদ্ধ অবস্থা প্রসঙ্গে ভারতীয় আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো- আবেদনকারীর অসুস্থতা, কারারূদ্ধ থাকা, সরল বিশ্বাসে ভূল পদ্ধতি অনুসরণ করা, যোগ্যতা সম্পন্ন নয় এমন আদালতে দরখস্ত দাখিল করা প্রভৃতি অত্র ধারা মোতাবেক যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হবে। Pannalal Vs. Shyam Sundar 2001, CLJ 91


৩. আইনজীবীর ভূল পরামর্শ 

আইনজীবীর ভূল পরামর্শের কারণে দরখস্তকারী যদি ভূল কার্যক্রম অনুসরণ করে এবং দরখস্তকারী যদি এই মর্মে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাহলে এইরূপ ভূল পরামর্শ জনিত ভ্রান্তি যথেষ্ট কারণ বলে পরিগণিত হয় । যেমন, Naresh Sharma Vs. Ramesh Chand AIR 2000 HP 6 মামলায় দেখা যায় যে, আবেদনকারীর আপীলের অধিকার রয়েছে। কিন্তু আইনজীবীর পরামর্শে তিনি রিভিশন আবেদন দাখিল করেন। পরে তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এইরূপ কারণ উল্লেখ যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হয় এবং আদালত বিলম্ব মওকুফ করে আপীল গ্রহণ করেন । 


৪. আদালতের ক্রটিপূর্ণ কাজ

যে ক্ষেত্রে আাদালতের ক্রটিপূর্ণ পদক্ষেপ কিংবা কাজের কারণে আপীলকারীর বা দরখাস্তকারীর তামাদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এই কারণ যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হবে। Keramat Ali Bhuiyan Vs. Ramzan Ahmed Bhuiyan 43 DLR (AD) 58 মামলায় আপিল বিভাগের রায় হলো- যে ক্ষেত্রে আদালতের অফিসার কর্তৃক কোন ভূলের কারণে পক্ষদ্বয়ের আইনজীবীদের পরবর্তীতে নির্দিষ্ট তারিখে দলিলাদি ফেরতের বিষয়ে অবহিত করা হয় না। সে ক্ষেত্রে তামাদি উত্থাপনই অবান্তর। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আদালতের ভূল পদক্ষেপ যথেষ্ট কারণ হিসেবে গণ্য হবে।


৫. ভূল আদালতে দরখাস্ত দাখিল এবং শুনানী 

দরখস্তকারী যদি সরল বিশ্বাসে উপযুক্ত আদালতে না গিয়ে অন্য কোন আদালতে দরখস্ত উপস্থাপন করে এবং ঐ মামলা শুনানী করে, তাহলেও সেটা বিলম্ব মওকুফের যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হবে ।


৬. দরখস্তকারীর আইন বিষয়ে অজ্ঞতা

যে ক্ষেত্রে দরখস্তকারীর সরল বিশ্বাসের কোন অভাব বা ত্রুটি নেই সেই ক্ষেত্রে দরখস্তকারীর আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা বিলম্ব মওকুফের যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হতে পারে। Victory Wall Development Ltd. Vs. Islami Bank Bangladesh Ltd. 48 DLR 409

৭. জনস্বার্থে 

যদি সরকার এমন আপীল দায়ের করতে তামাদি দ্বারা বারিত হয় যে আপিল নিষ্পত্তি না হলে জনগণের ক্ষতি সাধিত হবে, আদালত এরূপ আপীল বা দরখস্ত বিলম্ব মওকুফ করে দরখস্তটি গ্রহণ করবেন। Union of India v. KD Kisan AIR 1999 (DEL) 349 মামলায় দিল্লী হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ হলো- সরকার কর্তৃক রুজুকৃত আপীল তামাদি দোষে দুষ্ট হবার ফলাফল প্রকট । তামাদি মওকুফ না করলে জনসাধারণর ক্ষতি সাধন হবে। তাই জনস্বার্থে তামাদি মার্জনা বা বিলম্ব মওকুফ করা যায়। তবে সরকারের যেকোন দরখস্ত কোন বিশেষ সুবিধা পাবে না । Sonar Bangla Service Station Vs. Government of the People's Republic of Bangladesh (Civil) 59 DLR 2007


উপরোক্ত কারণ ছাড়াও আরও নানাবিধ কারণে আাদালত কোন দরখস্তকারীর দরখস্ত দাখিল সম্পর্কিত তামাদির মেয়াদ অতিক্রান্ত হবার পরেও বিলম্ব মওকুফ করে দরখস্ত গ্রহণ করতে পারেন । যেমনঃ

আপীল গ্রহণ বিষয়ে আদালত পূর্বতন কোন রীতি পক্ষগণকে অবহিত বা জ্ঞাত না করে পরিবর্তন করলে; 

আপীলের কপি বা রায়ের কপি যদি সকল রকমের সতর্কতা সত্ত্বেও দৈবক্রমে হারিয়ে যায়; 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দেশব্যাপী দীর্ঘ স্থায়ী বিশৃঙ্খলা বিরাজ করলে, ইত্যাদি। 

আদালত কি তামাদি মওকুফের আবেদন মঞ্জুর করতে বাধ্য?

তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ৫ ধারার অধীন তামাদি মওকুফের দরখস্ত মঞ্জুর করতে আদালত বাধ্য না। যদিও এই সম্পর্কে ৫ ধারায় কিছু বলা হয় নি। কিন্তু ৫ ধারায় তামাদি মওকুফের আবেদন বা প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা।


এইক্ষেত্রে Rafiqul Islam Vs. Bangladesh মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ বলেছে যে, বিলম্ব মওকুফ আদালতের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। যদি আদালত বিলম্বের কারণ এবং ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হন, তাহলে বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন। তবে কোন বিলম্ব মওকুফের দরখস্ত মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে কতদিন বিলম্ব হয়েছে সেটা প্রশ্ন নয়, কিভাবে এবং সরল বিশ্বাসে বিলম্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিনা সেটাই মূলত বিবেচ্য বিষয়। যদি বিলম্বের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয় এবং সরল বিশ্বাসে করা হয়, তাহলে আদালত বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন।


Mohammad Ishaq Vs. Ruhul Amin and others মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ বলেছে যে, যদি দরখাস্তকারী বিলম্ব বিষয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারে এবং উক্ত বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারে, তাহলে আদালত উপযুক্ত মামলায় বিলম্ব মওকুফ করতে পারে। এটা আইনের মীমাংসিত নীতি যে, প্রত্যেক দিনের বিলম্বের ব্যাখ্যা করতে হবে। তবে প্রত্যেক দিনের বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করার বিষয়টি সহজাতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।


Bangladesh Vs. Solomon Biwa এই মামলায় দরখাস্তকারী ২৯৯ দিনের বিলম্বের কারণের মধ্যে মাত্র ২৭ দিন বিলম্ব হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছিল। আদালত মত প্রকাশ করে যে, যেহেতু প্রত্যেক দিনের ব্যাখ্যা দেয়া হয় নি। তাই এটা তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা বলে গণ্য করা যায় না। ফলে, আদালত বিলম্ব মওকুফের দরখস্তটি খারিজ করে দেন। সুতরাং বিচারিক নজীর বিশ্লেষণ করে বলা যায়, তামাদি আইনের ৫ ধারার অধীন বিলম্ব মওকুফের বিষয়টি আদালতের বিবেচনা এবং সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে; বিলম্ব মওকুফের আবেদন মঞ্জুর করতে আদালত বাধ্য নয়।


পরিশেষে, তামাদি আইনের ৫ ধারা এবং বিচারিক নজীর বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, আপনার অসুস্থতা রিভিউ আবেদন বিলম্ব হওয়ার জন্য ‘যথেষ্ট কারণ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সুতরাং আপনি রিভিউ আবেদন করার জন্য বিলম্ব মওকুফ বা তামাদির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তামাদি আইনের ৫ ধারায় দরখাস্ত দায়ের করতে পারবেন। তবে বিলম্ব মওকুফ মঞ্জুর হওয়া না হওয়া আদালতের বিবেচনাধী ব্যাপার। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Snow
Maeuf Hossen Jewel

Below Post Ad

Snow
Maruf Hossen Jewel

Ads Area

Snow
Maruf Hossen Jewel