Ads Area

Snow
Maruf Hossen Jewel

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় জামিন সমস্যা

 ঘটনাচিত্র-১: 

ইয়াসমিন আর ইমরান একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করে। ৩ বছরের দাম্পত্যে তাদের একটি পূত্র শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে দু'জনের সংসারে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হলে, ইয়াছমিন পিত্রালয়ে চলে যায়। ইয়াছমিন তার স্বামীর বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে সালিশ দিলে, সালিশকারের কাছে ইমরান হাজির হয়নি। ইয়াছমিন নিকটস্থ থানায় অভিযোগ দিলে, থানার পুলিশ ইয়াছমিনকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। ইয়াছমিন আদালত এলাকায় গিয়ে একজন আইনজীবীর সাথে আলাপ করে, আইনজীবীর পরামর্শে ইয়াছমিন স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে কয়েক শ' টাকা খরচ করে সিম্পল একটি জখমী সনদ ও কাজী অফিস থেকে কাবিননামার কপি সংগ্রহ করে আবার আইনজীবীর সাথে সাক্ষাৎ করে। ইয়াছমিন বাদী হয়ে স্বামী, বৃদ্ধ শ্বাশুর ও শ্বাশুরী ৩ জন কে আসামী করে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যূনাল'এ এক লক্ষ টাকা যৌতুক দাবীর অভিযোগে নারী ও শিশ নির্যাতন দমন আইন'২০০০(সংশোধিত'২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারায় 'ফৌজদারী দরখাস্ত' (মামলা) দায়ের করলে, বিজ্ঞ বিচারক (নারী জজ) মামলাটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট 'থানার অফিসার ইনচার্জ কে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করার নির্দেশ' দেন। থানার ওসি যথারীতি মামলাটি GR মামলা হিসেবে রুজু করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করে। মামলাটিতে চার্জসীট দাখিলের আগ্ পর্যন্ত স্বামী ইমরান ও তার বৃদ্ধ মা-বাবা ঐ মামলায় (আমলযোগ্য/জি.আর মামলা রুজু হওয়ার থেকেই ) ওয়ারেন্ট হয়ে আত্মগোপনে থেকে বাদী ইয়াছমিনের সাথে আপোষের চেষ্টা করতে থাকে। আপোষের কথাবার্তাও চূড়ান্ত হয়। এর মধ্যে ঐ মামলায় আসামী ইমরান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে, স্ত্রী অর্থাৎ বাদী ছুটে যায় থানায়- থানার ওসি/দারোগা'কে আপোষের কথা বলে, ইমরান কে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও, ওয়ারেন্ট আসামী ছেড়ে দেয়ার সুযোগ না থাকায়, ইমরানকে ইয়াছমিনের দায়েরকৃত মামলা যে আদালতে চলমান, সেই সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। ইমরানের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে, বাদী ইয়াছমিন আইনজীবী আদালতে দাড়িঁয়ে 'আসামীর (স্বামী) সাথে আপোষ হয়ে সুখে দাম্পত্য কাটানোর কথা বলে আসামীর জামিনে অনাপত্তির আবেদন জানায়। উভয়পক্ষের শুনানীক্রমে (ট্রাইব্যূনালে বিচার্জ মামলায় ম্যাজিষ্ট্রেটের জামিন দেয়ার এখতিয়ার না থাকায়) আসামীর জামিন নামঞ্জুর করে, ইমরান কে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপরে ম্যাজিষ্ট্রেটের জামিন নামঞ্জুরের আদেশের সহিমুহুরী নকল কপি নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যূনালে 'বিপি মিচ' মামলা মূলে জামিনের আবেদন করে নিম্ন আদালতের নথি তলব , জামিন শুনানী শেষে দীর্ঘ দেড় মাস পরে আসামী ইমরান কারামুক্তি পায়!,,,,

ঘটনাচিত্র-২:

জুলেখা ও আনোয়ার ভালোবেসে দুই পরিবারের অমতে বিয়ে করেন ২০১০ সালে। সময়ের পরিক্রমায় উভয় পরিবারই বিয়ে মেনে নেয়। সামাজিকভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের নতুন সংসার শুরু হয়। দুজনই উচ্চশিক্ষিত। আনোয়ার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চবেতনে (মাসিক ৮০ হাজার টাকা) চাকরি করেন। সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জুলেখার সঙ্গে তাঁর ননদ, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাশুর ও ভাবির মতানৈক্য হয়। এক বছরের মাথায় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। জুলেখা তাঁর ব্যবহার্য কাপড়চোপড়, অলংকার প্রভৃতি নিয়ে পিত্রালয়ে গমন করেন। আনোয়ার অনেক চেষ্টা করেও জুলেখাকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। জুলেখা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছ থেকে আঘাতসংক্রান্ত সনদ নিয়ে স্বামী, অশীতিপর বৃদ্ধ শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, ভাশুরও ভাবিকে আসামি করে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি এবং মারধরের অভিযোগে স্থানীয় থানায় প্রভাব খাটিয়ে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’-এর ১১(গ) ধারায় মিথ্যা অভিযোগ করেন। পুলিশ গভীর রাতে তাঁদের সবাইকে আটক করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায়। জামিনের আবেদন করা হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচার্য এবং জামিনের আবেদন বিবেচনা করার এখতিয়ার নেই, এ কারণে আবেদন নামঞ্জুর করে সবাইকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ঘটনাচিত্র-৩: 

হাসিনা কলেজপড়ুয়া ছাত্রী। কলেজে প্রায়ই একটি ছাত্রসংগঠনের সভাপতি রিয়াজুল ও তাঁর সহযোগীরা হাসিনা কে উত্ত্যক্ত করতেন। অতিষ্ঠ হয়ে হাসিনা কলেজের অধ্যক্ষ ও অভিভাবকদের বিষয়টি জানান। হাসিনার পরিবার থানায় জিডি করে। অধ্যক্ষ ও অভিভাবকেরা রিয়াজুলকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন। এতে ক্ষিপ্ত রিয়াজুল কলেজ শেষে ফেরার পথে এক দিন বর্ষাকে অপহরণ করেন এবং সহযোগীরাসহ হাসিনা কে ধর্ষণ করেন। উপর্যুপরি ধর্ষণের কারণে ঘটনাস্থলেই হাসিনা মারা যান। স্থানীয় এক খাল থেকে পরদিন ভোরে বিবস্ত্র হাসিনার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। শোকে স্তব্ধ হাসিনার বাবা থানায় মামলা করেন। পুলিশ রিয়াজুল ও তাঁর সহযোগীদের আটক করে এবং বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট সব অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের আবেদন নাকচ করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওপরের ৩ টি ঘটনা কল্পিত কোনো বিষয় নয়।

প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালে এর চেয়েও নৃশংস, করুণ ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে। 

৩য় ঘটনায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা ন্যায়বিচারের জন্যই প্রয়োজনীয়। কারণ, সংঘটিত অপরাধটি নৃশংস এবং ঘৃণ্য প্রকৃতির। বিচারকার্য সম্পন্ন হওয়ার পুরো সময়ই তাঁদের জেলহাজতে রাখা উচিত। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় জামিন পেলে তাঁরা অবশ্যই মামলার গতি-প্রকৃতি ভিন্ন পথে প্রবাহিত করতে বা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে বাধা দিতে পারেন।

কিন্তু ১ম ও ২য় মামলা দু'টিতে সবাইকে জেলহাজতে প্রেরণ নিঃসন্দেহে অবিচার। শুধু ভুল বুঝাবুঝি থেকে ১ম মামলাটি ও হয়রানি করার ২য় মামলাটি করা হয়েছে, তা মামলার ঘটনা এবং ঘটনা ও সংযুক্ত কাগজপত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। ২য় মামলায় যে ব্যক্তি মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতন পান, তিনি কখনোই শুধু এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করবেন না। উপরন্তু, সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক প্রদানকৃত কোনো সনদ নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের আইনানুযায়ী এ ক্ষেত্রে কোনো কিছু করার নেই। কারণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ম্যাজিস্ট্রেটকে জামিন প্রদানের কোনো ক্ষমতাদেওয়া হয়নি। করা হয়েছে বিজ্ঞ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল’কে। অথচ থানায় দায়ের হওয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে প্রতিটি মামলা পুলিশ রিপোর্ট (অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দাখিল করার আগপর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থাকে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর জামিনের বিধানসংক্রান্ত ১৯(২) ধারাটি নিম্নরূপ:

‘উপধারা (৩)-এর বিধান সাপেক্ষে, এ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটনে জড়িত মূল এবং প্রত্যক্ষভাবে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হইবে না, যদি—

  • ক. তাঁহাকে মুক্তি দেওয়ার আবেদনের ওপর অভিযোগকারী পক্ষকে শুনানির সুযোগ দেওয়া না হয়; এবং
  • খ. তাঁহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ রহিয়াছে মর্মে আদালত সন্তুষ্ট হন;

অথবা

(৩) উপধারা (২)-এ উল্লিখিত কোনো ব্যক্তি নারী বা শিশু হইলে কিংবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হইলে, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার কারণে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হইবে না মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হইলে তাঁহাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাইবে।

(৪) উপধারা (২)-এ উল্লিখিত ব্যক্তি ব্যতীত এ আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্ত অন্য কোনো ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া ন্যায়সংগত হইবে মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হইলে তৎমর্মে কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনাল জামিনে মুক্তি দিতে পারিবে।’

এই ধারা থেকে সুস্পষ্ট, আইনপ্রণেতারা আইনটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে ক্রমবর্ধমান নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাকে হ্রাস করার লক্ষ্যেই ‘জামিন’ এবং ‘অপরাধ আমলে নেওয়ার’ বা ‘তদন্তের নির্দেশ’ দেওয়ার ক্ষমতাকে ‘ট্রাইব্যুনাল’-এর কাছে অর্পণ করেছেন। কিন্তু আইনপ্রণেতাদের এই সদিচ্ছার অনেকটাই চাপা পড়েছে অসৎ এবং ধুরন্ধর ব্যক্তি কর্তৃক ক্রমাগত আইনটির অপব্যবহারের জন্য। আইনটি যতখানি ভালো, ঠিক ততখানিই কঠোর। এই আইনে মিথ্যা মামলা করার জন্য সাজার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই আইনে মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ করার জন্য কোনো অভিযোগকারী বা এজাহারকারীর সাজা হয়েছে, এমন উদাহরণ অপ্রতুল। আইনটি অনেকটা হয়ে পড়েছে আতঙ্কের। এখন কেউ কাউকে হুমকি দিতে হলেও বলে, ‘নারী-শিশু মামলা দিয়ে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াব।’ প্রথম ঘটনায় মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে অবশ্যই অভিযোগকারীকে সাজাদেওয়া উচিত। কিন্তু অভিযোগকারী মহিলা হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য স্বাভাবিকভাবেই সাজা দেবেন না। কিন্তু মিথ্যা মামলায় একটি পরিবারের সদস্যরা যে জেলহাজতে ঘুরে এলেন, অবর্ণনীয় মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণার শিকার হলেন, সামাজিকভাবে হেয় হলেন; সর্বোপরি, মিথ্যা মামলাকারী অভিযোগকারীর অভিপ্রায় পূরণ হলো আদালত এবং আইনের জাঁতাকলের মাধ্যমে, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? কখনো কি এর আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব? বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণকালেও ম্যাজিস্ট্রেটদের বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে জামিন প্রদান না করতে। জামিনের আবেদন যদি ‘নামঞ্জুর’ করা যায়, তবে ম্যাজিস্ট্রেট কেন প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ‘মঞ্জুর’ করতে পারবেন না বা তাহলে প্রাথমিকভাবে নিরপরাধ বলে প্রতীয়মান হওয়া কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির জেলহাজতে যাওয়াই অমোঘ নিয়তি কি না, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মেলেনি। আদালতে আইন অনুযায়ীই ক্ষমতাহীন হয়ে থাকা সম্ভবত সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব। নির্মম পরিহাস হলো, এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ কৌঁসুলি, আসামি, প্রসিকিউশন—সবাই জানেন, আবেদন নামঞ্জুর হবে। তবু অহেতুক শুনানি নামের পরিহাস ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মঞ্চস্থ হয়ে থাকে।


একজন ব্যক্তি যখন আদালতে অভিযুক্ত হয়ে আসেন, প্রথম আশঙ্কাটির উদ্ভব হয় ‘জামিন’ নিয়ে। কারণ বিষয়টি সামাজিক, আর্থিক, মানসিক, শারীরিক, সর্বোপরি ব্যক্তিস্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত। এ জন্যই জামিনের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। স্পষ্টত, জামিনসংক্রান্ত এই বিধান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর একটি অন্তর্নিহিত দুর্বলতা।

ঢাকা ভিন্ন বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় ‘ম্যাজিস্ট্রেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীনে জামিন প্রদান করবেন না’—এ নীতি অনুসরণ করা হয়। অনেক সময় ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারকেরা এ আইনে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জামিন প্রদানকে তাঁদের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে মনে করেন। অনেক সময় ম্যাজিস্ট্রেটদের মৌখিকভাবে সরাসরি নিষেধও করা হয়। এমনকি এ আইনের অধীনে জামিন দেওয়ার কারণে ম্যাজিস্ট্রেটকে কারণও দর্শাতে বলা হয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে, সশরীরে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে। বিষয়টি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য নিঃসন্দেহে হতাশাজনক, বিব্রতকর এবং অপমানজনক। প্রতিটি আদালত আইন অনুযায়ী সৃষ্ট এবং আইন প্রয়োগ করে থাকেন। শুধু আইন অনুযায়ী, তথ্য-উপাত্ত এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক ঘোষিত জামিনসংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করেই ম্যাজিস্ট্রেট জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি করে থাকেন। ফজলুর রহমান বনাম রাষ্ট্র মামলার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিঃসন্দেহে এ আইনে ভিকটিম, এজাহারকারী ও প্রসিকিউশনকে শুনানির যুুক্তিসংগত সময় দিয়ে এবং শুনানি করে যদি অভিযুক্ত অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ার পর্যাপ্ত উপাদান নেই বলে মনে করেন, তবে অবশ্যই জামিন দিতে পারেন।

কঠোর আইন অনেক সময়ই কঠোরতার জন্ম দিয়ে থাকে। মানুষের মঙ্গলের এবং নিষ্কলুষ সমাজের সুরক্ষার জন্যই আইন করা হয়ে থাকে। আইন-আদালতের জাঁতাকলে যেন অপরাধীই পিষ্ট হয়, যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয়। একটি ভালো আইন সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা সেই ভালোরই প্রত্যাশা করি।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Snow
Maeuf Hossen Jewel

Below Post Ad

Snow
Maruf Hossen Jewel

Ads Area

Snow
Maruf Hossen Jewel