মামলার তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
দেওয়ানী মামলা কি?
কোন বিষয়ে অধিকারের দাবি বা ক্ষতিপূরণের দাবির জন্য যে মামলা করা হয় তাকে দেওয়ানী মামলা বলে।
নিচের মামলাগুলি দেওয়ানী মামলাঃ
- পারিবারিক মামলা: যেমন : দেনমোহর, ভরণপোষণ, বিবাহ বিচ্ছেদ/তালাক(ডিভোর্স), পারিবারিক সম্পর্কের পুনরুদ্ধার, দত্তক, উত্তরাধিকার, সন্তানের হেফাজত ইত্যাদি;
- চুক্তি নিয়ে মামলা; যেমন : টাকা পাওয়ার মামলা, চুক্তির শর্ত মানার মামলা ইত্যাদি
- সম্পত্তি দখল বা অধিকার নিয়ে মামলা
- স্থায়ী বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার (ইনজাংশন) মামলা
- দলিল সংশোধন (ভুল থাকলে ঠিক করা) ও বাতিল করার মামলা
- জমি-জমা নিযে আরও মামলা; যেমন : নামজারি (মিউটেশন), নামখারিজ ইত্যাদি
দেওয়ানী মামলা কোথায় ও কিভাবে দায়ের করা যায় ?
দেওয়ানী মামলাগুলো ধরণ বুঝে বিভিন্ন আদালতে করতে হয়। যে মামলা যে আদালতে করার নিয়ম আছে, সেই আদালতের কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে মামলাটি করা যায়। জমি-জমা সম্পর্কিত মামলাগুলো সাধারণত জেলা জজ আদালতের সহকারী জজ আদালত অথবা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হয়। পারিবারিক বিরোধের মামলা পারিবারিক আদালতে দায়ের করতে হয়। যিনি মামলা করার আবেদন করেন তিনি বাদী, আর যার বিপক্ষে মামলা করেন তিনি বিবাদী। বাদীর আবেদনের পর আদালত সমন দেন। সমনের পর বিবাদী লিখিত জবাব দেন। এরপর আদালত বাদী এবং বিবাদী দুই পক্ষকে আদালতে ডেকে তাদের অভিযোগ এবং জবাব শোনেন। সবশেষে আদালত তার রায় বা মামলার ফলাফল জানান।
একটি দেওয়ানী মামলায় সাধারণত কি কি দলিলপত্র প্রয়োজন হয় ?
- জমির ক্রয়-বিক্রয় মূল দলিলসহ বায়া-দলিলসমূহ ( মালিকানার প্রমাণস্বরূপ)
- সি.এস/এস.এ/আর.এস/বি.এস(মহানগর) খতিয়ান/পর্চা
- নামজারি হয়ে যাওয়ার পর রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া নকল
- সর্বশেষ পরিশোধকৃত খাজনার রশিদ [দখলের প্রমাণ হিসেবে]
- আইনগত অবস্থা/মর্যাদার অধিকার সংক্রান্ত মামলায় দাবির স্বপক্ষে কাগজপত্র ( নিয়োগপত্র, রেজুলেশন, অফিস আদেশ-এর নকল)
- পারিবারিক মামলায় কাবিননামা, জন্ম সনদ (বার্থ সার্টিফিকেট), ডেথ সার্টিফিকেট (উত্তরাধিকার মামলায়, নামজারি ও নাম খারিজ)
দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে কি কি সহায়তা বিনামূল্যে পাওয়া যায় ?
যাদের বাৎসরিক আয় ১০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকার বেশি নয় তারা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে সরকারি খরচে যেসব সহায়তা পাবেন-
- সরকারি সহায়তায় প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে মোকাদ্দমা পরিচালনা
- লিগ্যাল এইড অফিসারের নিকট থেকে আইনগত পরামর্শ
- প্যানেল আইনজীবীর নিকট থেকে দলিল-পত্র পরীক্ষা ও দায়েরযোগ্য মামলায় আইনগত সহায়তা
- দরকারি নকল পাওয়া
- মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি
- আইনগত তথ্য সেবা
- ডি.এন.এ.টেস্টের খরচ
দেওয়ানী মামলার ধাপসমূহ :
- মামলা দায়ের
- সমন ফেরত
- জবাব দাখিল
- আপোষ মিমাংসা/বিচার্য বিষয় গঠন
- শুনানীর তারিখ নির্ধারণ/প্রাথমিক শুনানী
- চূড়ান্ত শুনানী
- যুক্তি তর্ক
- রায় ও ডিগ্রী
দেওয়ানী মামলার জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র :
দলিলের নাম | বিবরণ | যেখানে পাওয়া যাবে |
মূল দলিল | জমি কেনার সময়ে যে দলিল সম্পাদিত হয় | সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস |
বায়া দলিল | মালিকানার ধারাবাহিকতা প্রমাণের জন্য পূর্বের দলিলসমূহ | সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস |
সি.এস. পর্চা/খতিয়ান | ১৮৯০ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ভূমি জরিপের মাধ্যমে যে খতিয়ান প্রস্তুত হয়েছিল। জেলা ভিত্তিক এই জরিপ সম্পন্ন (১৮৯০-১৯৪০) হয়েছিল বলে এই খাতিয়ান কে ডি.এস.খতিয়ানও বলা হয়। | ডেপুটি কালেক্টরের অফিস |
আর.এস পর্চা/খতিয়ান | সি.এস.জরিপে (১৮৯০-১৯৪০) তৈরী করা রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশার অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ দীর্ঘ সময়ে ভোগ দখলের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয় তার হালনাগাদকরণের লক্ষ্যে এ সংশোধন কার্যক্রম গৃহীত হয়। | ডেপুটি কালেক্টরের অফিস |
এস.এ.পর্চা খতিয়ান | ১৯৫৬ সাল হতে ১৯৬২ সাল এই সমযের পরিসরে একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এই জরিপেকে এস.এ.জরিপ বলা হয়। এ জরিপে মালিক জামিদারের নাম, জমির বিবরণ সম্বলিত তালিকা প্রণয়ন এবং সকল মালিকের নামে হাতে লেখা খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। | ডেপুটি কালেক্টরের অফিস |
বি.এস.পর্চা/খতিয়ান | বর্তমানে খতিয়ান হালনাগাদ করার জন্য যে জরিপ চলছে | ডেপুটি কালেক্টরের অফিস |
নামজারি খতিয়ান | জমির মালিকানা পরিবর্তনের পর দাবীকারির নামে যে খতিয়ান সম্পাদিত হয়। | সহকারী কমিশনার (ভুমি) অফিস |
ডি.সি.আর | নামজারি হয়ে যাওয়ার পর যে ডকুমেন্ট দেওয়া হয়। | সহকারী কমিশনার (ভুমি) অফিস |
কাবিননামা | বিবাহ রেজিস্ট্রির দলিল | কাজী অফিস |
ফৌজদারী মামলা
ফৌজদারী মামলা কি?
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্ত-শৃঙ্খলা নষ্ট করার ফলে যে মামলা হয় সেগুলো ফৌজদারী মামলা।
ফৌজদারী মামলা সমুহ:
- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই;
- অপহরণ;
- ধর্ষণ;
- মানহানি;
- এসিড নিক্ষেপ;
- যৌতুক দাবী, যৌতুকের জন্য নির্যাতন;
- অবৈধ অস্ত্র সংক্রান্ত অপরাধ;
- মারপিট বা যে কোন শারীরিক আঘাত;
- মানব পাচার
- হত্যা
- আত্নহত্যায় প্র্ররোচনা
- প্রতারণা, জালিয়াতি
- মাদক সংক্রান্ত অপরাধ
- পর্নৌগ্রাফি;
ফৌজদারী মামলা কোথায় ও কিভাবে করতে হয়?
আপনি বা আপনার প্রতিবেশীর সাথে ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হলে যা করতে পারেন-
- ফৌজদারী মামলা করতে চাইলে ঘটনাস্থল যে থানার সীমানার মধ্যে অবস্থিত সেই থানায় এজাহার দাখিল করুন।
- থানায় এজাহার না নিলে কোর্টে নালিশী দরখাস্ত দাখিল করুন।
- মারপিট, জখম, ধর্ষণ বা আঘাতের মামলা দায়েরের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন।
- কেউ হুমকি দিলে বা কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হলে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরী বা জি.ডি.এন্ট্রি’র জন্য দরখাস্ত করুন। ক্ষেত্রবিশেষ জি.ডি থেকে মামলা হয়।
- মামলা দায়ের হলে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশীট অথবা ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে।
- পুলিশ চার্জশিট দিলে বিচারিক কোর্ট অভিযোগ গ্রহণ করে বিচার কাজ শুরু করেন।
- মামলার যে কোন পর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনের দরখাস্ত করে জামিন পেতে পারেন।
- বিচার শেষে বিচারিক কোর্ট খালাস অথবা শাস্তির আদেশ দেন।
ফৌজদারী মামলার ধাপ সমুহঃ
১. এজাহার বা নালিশ দায়ের;
২. ম্যাজিষ্ট্রেট এর কাছে উপস্থাপন;
৩. তদন্ত;
৪. ফাইনাল রিপোর্ট বা চার্জশীট;
৫. নারাজী দরখাস্ত/চার্জ শুনানী;
৬. অব্যাহতি/চার্জ গঠন;
৭. দোষ স্বীকার এবং শাস্তি
৭ (ক). শুনানী, স্বাক্ষগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক;
৮. খালাস/শাস্তি
ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সরকারি খরচে কি কি সহায়তা প্রদান করে?
যাদের বাৎসরিক আয় ১০০,০০০/- ( এক লক্ষ ) টাকার বেশি নয় তারা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে বিনামূল্যে যেসব সহায়তা পাবেন-
- জেলা লিগ্যাল এইড অফিস হতে আইনগত তথ্য ও পরামর্শ;
- প্যানেল আইনজীবীর নিকট হতে আইনগত পরামর্শ;
- সরকারি সহায়তায় ফরিয়াদি/অভিযোগকারী/অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে নিয়োগের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা;
- আসামী হাজিরার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ;
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ( যেমন: মেডিকেল সার্টিফিকেট) সংগ্রহ করার বিষয়ে পরামর্শ ও তথ্য প্রাপ্তি;
- কারাগারের আবেদনকারীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নকল পেতে সহায়তা;
- ডি.এন.এ. টেস্ট এর খরচ।
কারাগারে আটক ব্যক্তিদের জন্য সরকারি আইন সহায়তা পাওয়ার উপায় কি?
কারাগারে আটক ব্যক্তিগণের জন্য জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইন সহায়তার আবেদন করতে হয়।
- যে কোন ধরণের ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত হাজতী ব্যক্তি জেলা কারাগারের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন;
- কারাগার কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, হাজতী নম্বর, মামলার নম্বর এবং কোন আইনের অধীন ও কোন আদালতে মামলা এ সকল তথ্য লিগ্যাল এইড অফিসে প্রেরণ করেন;
- প্যানেল আইনজীবী লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তায় এজাহার/নালিশী দরখাস্তের নকল, চালান(ফরোয়াডিং)প্রতিবেদন, পুলিশ রিপোর্ট (খসড়া মানচিত্র, সুচিপত্র, জব্দ তালিকা), মেডিকেল সার্টিফিকেট, পূর্বেকার আদেশের কপি ( মিসকেস এর ক্ষেত্রে) সংগ্রহ করতে পারবেন;
- আটক ব্যক্তির আত্নীয় স্বজন মামলার তদবিরকারী হিসাবে লিগ্যাল এইড অফিস ও প্যানেল আইনজীবীর নিকট থেকে মামলার তথ্য নিতে পারবেন;
ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
মামলার ধরণ | প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | কোথায় পাওয়া যাবে |
ধর্ষণ | মেডিকেল সার্টিফিকেট | সরকার অনুমোদিত ডাক্তার/হাসপাতাল |
মারপিট | মেডিকেল সার্টিফিকেট | সরকার অনুমোদিত ডাক্তার/হাসপাতাল |
প্রতারণা | জাল দলিল, সনদ, কোন অবৈধ অঙ্গীকার/বায়নানামা | - |
মানহানি | প্রকাশনা, যেমন: পত্রিকা, সি.ডি, পোস্টার | - |
যৌতুক | কাবিননামা | কাজী অফিস |
যৌতুকের জন্য নির্যাতন | মেডিকেল সার্টিফিকেট | সরকার অনুমোদিত ডাক্তার/হাসপাতাল |
খুন, আঘাত, ধর্ষণ, আত্নহত্যার চেষ্টা | ফরেনসিক রিপোর্ট, ময়না তদন্তের রিপোর্ট, সুরতহাল রিপোর্ট | - |
কারাগারে আটক ব্যক্তিদের মামলার ক্ষেত্রে | এজাহার/নালিশী দরখাস্তের নকল, চালান(ফরোয়াডিং)প্রতিবেদন, পুলিশ রিপোর্ট (খসড়া মানচিত্র, সুচিপত্র, জব্দ তালিকা), মেডিকেল সার্টিফিকেট, পূর্বেকার আদেশের কপি ( মিসকেস এর ক্ষেত্রে) | যে কোর্টে মামলা, জি.আর.ও.সেকশন |
সরকারি খরচে আইনী সহায়তা প্রার্থীদের জন্য যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজনঃ
জমি-জমা সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রঃ
- সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ডের কাগজপত্র
- খাজনার দাখিলা
- DCR (Duplicate Carbon Recite)
- দলিলের কপি (মূল/জাবেদা)
- নাম খারিজের কাগজ
- ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন সনদ
পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রঃ
- কাবিন নামা
- তালাক নামা (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)
- ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন সনদ
- বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন কার্ড (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)
- ২য় বিবাহের কাবিন নামা (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)
ফৌজদারী/ নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রঃ
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- অন্যান্য কাগজপত্র
- ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন সনদ