জবরদখল:
আইনগত দখলের বিরুদ্ধে যে দখল তাকেই জবর দখল বলে।
কোন আইনগত স্বত্বের বিরুদ্ধে প্রতিকূল দখলকেই বিরুদ্ধ দখল বা জবর দখল বলে। অর্থাৎ যখন কোন বিবাদীর দখল বাদীর প্রতিকূল হয় তখনই জবর দখলের সৃষ্টি হয়। অন্য কথায় ১২ বছরের বেশী সময় ধরে অপরের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে রাখলে এবং উক্ত দখলের মধ্যে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সম্পত্তির প্রকৃত মালিক আদালতে শরনাপন্ন না হলে ঐ সম্পত্তির উপরে জবর দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয় এবং তামাদি আইনের ভাষায় একেই জবর দখল বলে।এই বিষয় সম্পর্কিত বিধান তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বর্ণিত আছে।
জবর দখলের উপাদান:
- ১) জবরদখলকারীকে প্রকৃতপক্ষে জমিতে দখলদার থাকতে হবে প্রকৃত দখল ছাড়া খতিযানের দখল গ্রহনযোগ্য নয়।
- ২) জবর দখলজনিতকারণেই জমিতে বেদখল অনুষ্ঠিত হতে হবে।
- ৩) অবশ্যই দখল নিরবিচ্ছন্ন, প্রকাশ্য এবং প্রকৃত মালিক সহ অন্যান্য সবার বিরুদ্ধে হতে হবে।
- ৪) জবরদখল জনিত কারণেই বেদখর অনুষ্ঠিত হতে হবে। বেআইনিভাবে দখল অথবা জবর দখল অনুষ্ঠিত না হলে জবর দখল প্রতিষ্টিত হবে না।
- ৬) বিবাদীর জবর দখল অবশ্যই বাদীর বিরুদ্ধেই হতে হবে।
- ৭) প্রকৃত মালিকের জ্ঞাতসারে জবরদখল হতে হবে।
- ৮) জবর দখল হবার সময় হতে ১২ বছরের মধ্যে অবশ্যই দখল পুনরুদ্ধারের জন্য বাদীকে মামলা দায়ের করতে হবে। অন্যথায় বিবাদীর সম্পত্তি অর্জিত হবে।
- ৯) জবর দখল পূর্বক সম্পত্তিটি দখলে রাখবার চেষ্টায় বিবাদীকে লিপ্ত থাকতে হবে।
- ১০) জবর দখলকারীকে বাদীর স্বত্ব অস্বীকারে নিজের দাবীতে জমিতে দখলদার থাকতে হবে।
- ১১) জবরদখল অর্থাৎ বিবাদীর দ্বারা জবরদখল জনিত কারণে বাদী সম্পত্তির উপর তার শর্ত হারাবে এবং বিবাদীর অনুকূলে সম্পত্তিতে স্বত্ব অর্জিত হবে।
- ১২) আইনসঙ্গতভাবে প্রথম দখল শুরু হলে পরবর্তীতে জবর দখলের দাবী উত্থাপন করা যাবে না।
কখন জবর দখলকৃত সম্পত্তিতে দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয় এবং প্রকৃত মালিকের স্বত্ব বিলুপ্ত হয়:
তামাদির সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে গেলে অধিকার লংঘনের প্রতিকার ধ্বংস হয়ে যায়, তবে অধিকারটি ধ্বংস হয় না। কিন্তু তামাদি আইনের ২৮ ধারাটি উপরোক্ত বিধানের ব্যতিক্রম। তামাদির সময়সীমা স্বত্বের মামলার জন্য নির্ধারিত রয়েছে ১২ বছর। খাস জমি হতে বাদী বেদখল হলে বেদখলের তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে বিবাদীর বিরুদ্ধে স্বত্বে সাব্যস্তে খাসদখলের মামলা করতে ব্যর্থ হলে বাদীর শুধু প্রতিকারই নষ্ট হয় না। উপরন্ত সম্পত্তিতে বাদীর অধিকার পর্যন্ত বিনষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে এই আইনের ২৬ ধারার বিধানের অলোকে ব্যবহার সিদ্ধ অধিকারের কারণে উক্ত সম্পত্তিতে বিবাদীর অধিকার অর্জিত হয়। উল্লেখ্য যে তামাদি আইনের ২৬ ধারা বিধানকে বলা হয় অর্জনকারী প্রেসক্রিপশন এবং ২৮ ধারা বিধানকে বলা হয় বিলোপকারী প্রেসক্রিপশন।
জবর দখলকৃত সম্পত্তিতে জবর দখলকারী ব্যক্তি কি চুড়ান্ত মালিকানা অর্জন করতে পারে:
তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন সম্পত্তির দখলপ্রাপ্তি জন্য মামলা দায়ের করার ব্যাপারে এই আইনের যে মেয়াদ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে তা উত্তীর্ণ হবার পর উক্ত সম্পত্তিতে দাবীর বিলুপ্তি হয়ে যাবে।
সুতরাং এই আইনের ২৮ ধারা বিধান মোতাবেক কোন বাদী যদি তার খাস জমি হতে বিবাদী কর্তৃক বেদখল হয় , তাহলে সে ক্ষেত্রে বাদীকে অবশ্যই বেদখলের তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে বিবাদীর বিরুদ্ধে স্বত্ব সাব্যস্তে খাস দখরের মামলা করতে হবে। অন্যথায় দাবীকৃত জমিতে বাদীর সর্বপ্রকার অধিকার এবং স্বত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। যে সময় হতে জবর দখলের কারণে বাদীর মালিকানা বিলুপ্তি হয়ে যাবে ঠিক ঐ সময় হতেই জবর দখলকারীর উপর সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা বর্তাবে। আর এভাবেই জবর দখলের মাধ্যমে প্রকৃত মালিক ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির সম্পত্তির উপর বৈধ বা আইনগত স্বত্ব অর্জিত হয়ে থাকে।