যখন আরজি-জবাব সংশোধন করা যায়ঃ
The Code of Civil Procedure , 1908 এর অর্ডার ৬ রুল ১৭ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, মামলার যে কোন পর্যায়ে আদালত কোন পক্ষকে আরজি জবাবের ন্যায়সঙ্গত সংশোধনের অনুমতি দিতে পারেন। কাজেই বিচারিক আদালতের রায়ের পর সংক্রুদ্ধ পক্ষ আপিল আদালতেও আরজি জবাব সংশোধন করতে পারবে।
গরাম হাফিজ বনাম খাদেম কালী, ২৯ ডিএলআর (এসসি) ৩১১ মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিচারিক আদালত রায় ঘোষনার পরও প্লিডিংস সংশোধন করতে পারবেন। প্লিডিংস সংশোধনের দরখাস্ত মামলার যে কোন পর্যায়ে মঞ্জুর করা যেত পারে যদি তা অপর পক্ষের কোন কোন ক্ষতির কারণ না হয়ে থাকে।
কাজল দাস বনাম মনোয়ারা, ৮ বিএলসি ৪১৪ মামলায় বলা হয়, প্লিডিংস সংশোধনের দরখাস্ত বিচারের পূর্বে, সময়ে অথবা বিচারের পরে অথবা আপিলে অথবা রিভিশনে অথবা আপিলেট ডিভিশনে, এমনকি জারী কার্যক্রমের সংশোধন করা যায়। একই ধরনের সিদ্ধান্ত আসে গুরু মিয়া বনাম শামসুল ইসলাম, ৯ এমএলআর, ৩৩৮ মামলায়।
হানিফ কালী বনাম হাজেরা, ৫৫ ডিএলআর ১৭ মামলার রায়ে বলা হয়, বাটোয়ারা মামলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ডিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বাটোয়ারার একটি মামলা বিচারাধীন থাকে এবং প্রিলিমিনারি ডিক্রি হওয়ার পরেও আরজি সংশোধন করা যায়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বিচারিক আদালত রায় ঘােষনার পরেও প্লিডিংস সংশোধন করতে পারেন।
যখন সংশােধনের আবেদন মঞ্জুর করা যায়:
বিরোধীয় বিষয়ে উভয় পক্ষের দাখিলীয় বক্তব্যে কখনো কখনো কিছু ভুলভ্রান্তি দেখা দেয়। এ সকল ভুলভ্রান্তি সংশোধন না করলে ফলপ্রসূ প্রতিকার বাদী বা বিবাদী লাভ করতে পারে না। তাই প্লিডিংস (আরজি-জবাব) সংশোধন করা একান্ত প্রয়োজন হয়। প্লিডিংস সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের কিছু কিছু বিষয় সতর্কতার সাথে বিবেচনায় নিতে হয়। এ সকল বিষয়গুলি নিচে দেওয়া হল-
- (ক) প্রস্তাবিত সংশোধনটি প্রকৃত বিরোধ নির্ণয়ে আবশ্যক।
- (খ) সংশোধনটি অপর পক্ষের ক্ষতির কারণ হবে না।
- (গ) সংশোধনের ফলে বিবাদী পক্ষের অনুকূলে জন্মানো কোন আইনগত অধিকার নষ্ট হবে না।
- (ঘ) সংশোধনের ফলে মামলার প্রকৃতি ও চরিত্র পরিবর্তিত হবে না।
- (ঙ) সংশোধনের ফলে নতুন ও অসামঞ্জস্য মামলার আবতারণা হবে না।
- (চ) সংশোধনীটি সরল বিশ্বাসে বিলম্ব না ঘটানোর উদ্দেশ্যে আনীত হয়েছে।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে বা কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্লিডিংস (আরজি-জবাব) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন।
যখন সংশোধনের আবেদন নামঞ্জুর করা যায়:
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্লিডিংস সংশোধনের আদেশ দেয়া যায় না-
- (১) যেক্ষেত্রে অত্যাধিক বিলম্বে সংশোধনের আবেদন করা হয়।
- (২) যে ক্ষেত্রে সংশোধনের জন্য আবেদনকারীর অসৎ উদ্দেশ্য থাকে।
- (৩) যে ক্ষেত্রে মামলার প্রকৃত কারণ বা প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
- (৪) যে ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হতে পারে ।
- (৫) যেক্ষেত্রে সংশোধন গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় না।
তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত অপর পক্ষের সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে মামলার যে কোন পর্যায়ে প্লিডিংস সংশােধন করতে পারেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যতদূর সম্ভব নমনীয় মনােভাব গ্রহন করা বাঞ্জনীয় বলে সুপ্রীম কোর্ট বিভিন্ন মামলায় অভিমত ব্যক্ত করেছেন।