রেস সাব-জুডিস
যখন একই এখতিয়ারভূক্ত দুইটি বা একই আদালতে একই পক্ষদের মধ্যে একই বিষয়বস্তু নিয়ে দুইটি মামলা বিচারাধীন থাকে তখন সেই বিরােধিয় বিষয়কে রেস সাবজুডিস বলে। The Code of Civil Procedure, 1908 এর ১০ ধারায় রেস সাবজুডিস নীতির অবতারনা করা হয়েছে এজন্য যে, যাতে একই বিষয় নিয়ে একই পক্ষদের মধ্যে দুই মামলা চলতে না। পারে। কেননা, এতে একই আদালত হতে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসার সুযােগ আছে এবং পক্ষগন অযথা হয়রানির শিকার হতে পারেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোন আদালতই একই পক্ষদের মধ্যে দাখিলী একটি মামলার বিচার চালাবেন না যদি তার বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষভাবে এবং কার্যত পর্বে তাদের মধ্যে দাখিলি আর একটি মামলার বিচার্য বিষয়ের সাথে একই হয় অথবা তাদের মাধ্যমে স্বত্বের দাবিদার এক বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যদি এরূপ দুইটি মামলা থাকে যেখানে তা সব কতৃত্ব সম্পন্ন একই আদালতে বা বাংলাদেশের যেকোন আদালতে যার বা যাদের একই ধরণের প্রতিকার দেওয়ার ক্ষমতা আছে বা বাংলাদেশের বাইরে স্থাপিত সম কর্তৃত্ব সম্পন্ন কোন আদালত বা বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বিচারাধীন থাকে। অর্থাৎ এই ধারা অনুযায়ী, পূর্বে দায়েরকৃত মামলার পক্ষসমূহ ও বিষয়বস্তু এবং পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামলার পক্ষসমূহও বিষয়বস্তু একই হলে আদালত পরবর্তী মামলার বিচার করবে না। পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন।
রেস সাব জুডিস এর ক্ষেত্রে দুইটি মামলার মধ্যে কোনটি দাখিলের তারিখের দিক থেকে আগে সে বিষযটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দাখিলের তারিখ থেকে যেটি পরে আদালত তা স্থগিত করে দিবেন এ কারণে যে একই বিচার্য বিষয নিয়ে সম কর্তৃত্ব সম্পন্ন একই বা ভিন্ন দুইটি আদালতে একই পক্ষদের মধ্যে আরও একটি মামলা বিচারধীন আছে।
হিরে বনাম ধিরে ৬২ সি ১১১৫ মামলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০ ধারায় দাখিলের তারিখ বলতে আরর্জি দাখিলের তারিখ, মামলা গ্রহণের তারিখ নয়। মােছাঃ আরিফা বেগম বনাম খালেক মুহাম্মদ নাকভি ২১ ডিএলআর ২০৯ মামলায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ১০ ধারার অধীন শুধু পরবর্তী মামলাটি (সাবসিকোয়েন্ট স্যুট) স্থগিত করা যাবে পূর্ববর্তী মামলা নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে একই বিচার্য বিষয় নিয়ে একই পক্ষদের মধ্যে একই আদালত থেকে পরস্পর বিরােধী ডিক্রি হওয়ার মত অবস্থা পরিহার করার নীতিকে রেস সাবজুডিস বলে ।
Res Sub-judice এর শর্তাবলী:
Res Sub-judice এর শর্তাবলী নিম্নরূপ-
- ১) উভয় মামলার বিচার্য বিষয়ের অভিন্নতা;
- ২) উভয় মামলার পক্ষদ্বয়ের অভিন্নতা;
- ৩) আদালতের এখতিয়ার;
- ৪) পূর্ববর্তী মামলাটি বিচারাধীন থাকবে;
- ৫) পূর্ববর্তী মামলাটির উপস্থিতি।
রেস-জুডিকাটা
রেস জুডিকাটার নীতি হল একটি মামলায় কর্তৃত্ব সম্পন্ন আদালতের চূড়ান্ত বিচারিক সিদ্ধান্ত যা পরবর্তীতে একই বিষয়ে উক্ত পক্ষদের মধ্যে দাখিলি মামলার বিচারের বাধা স্বরূপ। অন্য কথায় রেস জুডিকেটার অর্থ হল দোবারা দোষ” অর্থাৎং যার বিচার একবার হয়ে গেছে তা পুনরায় আপত্তি উত্থাপন করা যাবে না। The Code of Civil Procedure, 1908 এর ১১ ধারা মতে, কোন আদালত এমন কোন মামলার বিচার করবেন না যার বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষভাবে এবং কার্যত পূর্ববর্তী কোন মামলায় একই পক্ষগণ বা তাদের মাধ্যমে স্বত্বের দাবীদার যে কোন ব্যক্তির মধ্যে সম এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে বিচারে চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয়েছে পূর্বেও মামলাটি এমন একটি আদালতে বিচারে নিস্পত্তি হয়েছে যে আদালত পরবর্তী মামলাটিরও বিচার করার এখতিয়ার সম্পন্ন। “একবার যে বিষয় বিচারে নিস্পত্তি হয় তা নিয়ে পুনরায় আর কোন প্রশ্ন তােলা যায় না”- এটিই হল রেস-জুডিকেটা নীতি। সুতরাং পক্ষগণের মধ্যে আদালত নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের পুনরায় মামলা না করতে পারার নীতিকে বলা হয় রেস জুডিকাটা।
কাজেমালি বনাম কুরেমভয় ৩৬ বি ২১৪ মামলায় বলা হয়েছে, রেস জুডিকেটা শুধু একটি মামলার বিচারই বন্ধ করে না এমনকি ইতােমধ্যে নিস্পত্তিকৃত একটি বিচার্য বিষয়ের পুনঃবিচারর প্রতিরােধ করে।
সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের ক্ষেত্রে রেস-জুডিকেটার নীতি:
সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যেও রেস-জুডিকেটার নীতি প্রয়ােজ্য হবে। এ সংক্রান্ত দুইটি মামলা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন-মনি বনাম ত্রিলােক, ৩৫ সিএনডাব্লিউ ৬৬১ পিসি মামলা এবং সচি লাল দাস বনাম হৃদয় রঞ্জন দাস ৪০ ডিএলআর (এডি) ৫৬ মামলা।
সচি লাল দাস বনাম হৃদয় রঞ্জন দাস ৪০ ডিএলআর (এডি) ৫৬ মামলায় আপীল বিভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন যে, সহ- বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যেও রেস-জুড়িকেটার নীতি প্রয়ােজ্য হবে। তবে এই নীতি সহ-বাদী বা সহ-বিবাদীদের মধ্যে
প্রযােজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তগুলাে পালন হওয়া আবশ্যক-
- ১. একটি মামলায় সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থের বিরােধ থাকতে হবে;
- ২. সহ-বাদী বা সহ-বিবাদীদেরকে মামলায় প্রতিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিরােধ নিস্পত্তি করেই কেবল
- প্রার্থিত প্রতিকার দেওয়া সম্ভব:
- ৩. সহ-বিবাদীকে মামলায় প্রয়ােজনীয় পক্ষ হতে হবে; এবং
- ৪. সহ-বাদীদের মধ্যে বা সহ-বিবাদীদের মধ্যে বিরােধীয় বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হতে হবে।
একতরফা ডিক্রির ক্ষেত্রে রেস জুডিকেটা
একটি মামলা বা তার কোন বিচার্য বিষয় যখন চূড়ান্তবাবে নিস্পত্তি হয় তা যদি একতরফা ডিক্রির মাধ্যমেও হয় তবে তা রেস জুডিকেটা হিসেবে প্রযােজ্য হবে। কেননা, তা একতরফাভাবে নিস্পত্তি হলেও এটি একটি আইনানুগ ডিক্রি এবং আরজিতে উল্লেখিত বিষয়গুলাে আদালত চূড়ান্তভাবে সাক্ষ্য প্রমান নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। একতরফা রায় বা কোন আদেশ রেস জুডিকেটা হিসেবে কাজ করার জন্য আরজিতে বর্ণিত ঘটনা এমন হতে হবে যা থেকে বিবাদী পক্ষ স্পষ্টত বুঝতে পারে মামলায় কোন বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে এবং তৎবিষয় কি নির্ধারিত হবে। প্রতারণা বা অন্য কোন অনিয়মের অভিযােগ না থাকলে একতরফা ডিক্রি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ডিক্রির মতই রেস জুডিকেটা হিসেবে কার্যকর হবে।
রেস সাব-জুডিস ও রেস-জুডিকেটর মধ্যে পার্থক্য
The Code of Civil Procedure, 1908 এর ১০ ধারায় রেস সাবজুডিস এবং ১১ ধারায় রেস জুডিকেটা সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। এ সকল আলােচনা পর্যালােচনা করলে রেস সাজুডিস এবং রেস জুডিকেটার মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে রেস সাবজুডিস এবং রেসজুডিকেটার মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলাে
- ১. রেস সাব-জুডিস এ দুইটি মামলা বিচারাধীন থাকে যার মধ্যে একটি পূর্ববর্তী এবং আরেকটি পরবর্তী দায়েরকৃত। কিন্তু রেস-জুডিকেটায় একটি মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই শেষ কথা অর্থাৎ একটি মামলা একটি সিদ্ধান্ত।
- ২. রেস সাব-জুডিস হল বিচারাধীন দুই মামলার মধ্যে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামরার বিচার স্থগিত করা। অপরদিকে রেস-জুডিকেটার অর্থ হল বিচারাধীন দুইটি মামলার মধ্যে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামলাটির বিচার বন্ধ করা।
- ৩. রেস সাব-জুডিস এর ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুটি মামলাই বিচারাধীন থাকে। কিন্তু রেস জুডিকেটার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মামলাটি বিচারে চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয়ে যায়।
- ৪. রেস সাব-জুডিস এর ক্ষেত্রে উভয় মামলার বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষভাবে এবং কার্যত একই থাকে যার একটি নিষ্পত্তি করলে আর অপরটির নিষ্পত্তি দরকার হয় না বা অপরটি নিষ্পত্তি করতে গলে একই বিষয়ে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অপরদিকে রেস জুডিকেটার ক্ষেত্রে পরবর্তী মামলাটি নিষ্পত্তি করাই যাবে না। কেননা ঐ মামলা বা বিচার্য বিষয়ে ইতােমধ্যে একই বা সম কর্তৃত্ব সম্পন্ন আদালত থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে।
- ৫. রেস সাব-জুডিস হল বিচারাধীন একই বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসার মত জটিলতা পরিহার করা। পক্ষান্তরে, রেস-জুডিকেটা হল নিস্পত্তিকৃত কোন বিষয়ে পরবর্তীতে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে না দেওয়া।
- ৬. রেস সাব-জুডিস দুইটি বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে প্রয়ােজ্য। অপরদিকে রেস-জুডিকেটা নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।
- ৭. রেস সাব-জুডিস এর নীতি দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১০ ধারায় এবং রেস-জুডিকেটার নীতি ১১ ধারায় প্রবর্তিত হয়েছে।