Ads Area

Snow
Maruf Hossen Jewel

১৪৫ ধারা কি ? কোন কোন অবস্থায় ১৪৫ ধারা আদেশ জারি করা যায় বা শর্তসমূহ বা উপাদান কি? ১৪৫ ধারা উদ্দেশ্যঃ? ১৪৫ ধারা কত দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকে:? ১৪৫ ধারা আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার ? ধারা ১৪৪ ও ১৪৫ এর মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর?

১৪৫ ধারাঃ

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার অধীন স্থাবর সম্পত্তি তথা জমি জমা সম্পর্কিত বিরোধ প্রসঙ্গে অস্থায়ী আদেশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । ১৪৫ ধারায় কোন আাদেশ প্রদানের পূর্বে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিবাদরত পক্ষবৃন্দকে তার আদালতে হাজির হওয়ার জন্য এবং বিরোধের বিষয়বস্তুতে প্রকৃত দখল সম্পর্কে তাদের দাবী ও বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য নোটিশ জারী করবেন। এইরূপে স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে শান্তি ভঙ্গ হলে কিংবা শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা সৃষ্টি হলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় আদেশ দান করবেন।

১৪৫ ধারার  বিশ্লেষণঃ

১৪৫ ধারার আদেশ ঘোষণামুলক আদেশ।

(১) যখন কোন মেট্রৌপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট, বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিপোর্ট বা অন্য কোনভাবে সংবাদ পাইয়া এই মর্মে সন্তষ্ট হন যে, তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে জমি বা পানি বা উহার সীমানা সম্পর্কে এমন একটি বিরোধ রহিয়াছে, যাহা শান্তিভঙ্গ ঘটাইতে পারে, তখন তিনি তাহার এইরূপ সন্তষ্ট হইবার কারণ উল্লেখ করিয়া তাহার দ্বারা নিধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে সশরীরে বা কৌসুলীর মাধ্যমে তাহার আদালতে হাজির হইবার এবং বিরোধের বিষয়বস্তুতে প্রকৃত দখল সম্পর্কে তাহাদের নিজ নিজ দাবী সম্পর্কে বিবৃতি পেশ করিবার নির্দেশ দিয়া একটি লিখিত আদেশ দিবেন।

(২) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে “জমি বা পানি” বলিতে দালান, বাজার, মত্‍স্য খামার, ফসল ভূমির আন্যান্য উত্‍পাদিত দ্রব্য বা সম্পত্তির খাজনা বা মুনাফা ও বুঝায়।

(৩) ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে এইরুপ ব্যক্তি বা ব্যক্তিগনের উপর আদেশের একটি কপি সমন জারীর জন্য এই আইনে বর্ণিত পদ্ধতিতে জারী করিতে হইবে এবং অন্তত:পক্ষে একটি কপি নকল সুবিধাজনক স্থানে বা বিরোধের বিষয়বস্তর নিকটে লটকাইয়া প্রকাশ করিতে হইবে।

(৪) দখল সম্পর্কে অনুসন্ধান: অত:পর ম্যাজিস্ট্রেট বিরোধের বিষয়বস্তুতে উক্তপক্ষসমূহের কাহার ও দখলের অধিকার গুণাগুণের বা দাবী প্রসঙ্গে না যাইয়া, পেশকৃত বিবৃতিসমূহ পাঠ করিবেন, পক্ষসমূহের বক্তব্য শ্রবণ করিবেন, তাহারা নিজ নিজ তরফে যে সাক্ষ্য হাজির করেন তাহা গ্রহণ করিবেন, এইরুপ সাক্ষ্যে ফলাফল বিবেচনা করিবেন, তিনি প্রয়োজন মনে করিলে অধিকতর সাক্ষ্য (যদি থাকে) গ্রহণ করিবেন এবং সম্ভব হইলে আদেশের তারিখে কোন পক্ষ উক্ত বিষয়বস্তর দখলে ছিলেন কিনা এবং কোন পক্ষ দখলে ছিলেন তাহা স্থির করিবেন:-

তবে শর্ত থাকে যে, ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত আদেশের তারিখের অব্যাহিত পূববর্তী দুই মাসের মধ্যে কোন পক্ষকে বলপূবর্ক ও অন্যায়ভাবে বেদখল করা হইয়াছে, তাহা হইলে তিনি এইরুপ দখলচ্যুত পক্ষকে উক্ত তারিখে দখলকার ছিলেন বলিয়া বিবেচনা করিতে পারিবেন:

আর ও শর্ত থাকে যে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি ঘটনাটিকে জরুরী বলিয়া মনে করেন তাহা হইলে এই ধারার অধীন সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে যে কোন সময় বিরোধের বিষয়বস্ত ক্রোক করিতে পারিবেন।

(৫) এই ধারায় যাহাই থাকুক না কেন উক্তরুপে হাজির হইবার নিদের্শপ্রাপ্ত কোন পক্ষ বা অন্য কোন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কারন দেখাইতে পারিবেন যে,পূবোর্ক্ত কোন বিরোধের অস্তিত্ব বর্তমানে নাই বা ছিল না; এবং এইরুপ ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট তাহার উক্ত আদেশ বাতিল করিবেন এবং পরবর্তী সমস্ত প্রক্রিয়া স্থগিত হইয়া যাইবে, তবে এইরুপ বাতিল সাপেক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক (১) উপধারায় অধীন প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে।

(৬) আইনসংগতভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পযর্ন্ত দখলে থাকা পক্ষ দখল বহাল রাখিবে: ম্যাজিস্ট্রেট যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, পক্ষ সমূহের মধ্যে একপক্ষ বিরোধীয় বিষয়বস্তর দখলে ছিলেন বা (৪) উপ-ধারার প্রথম অনুশর্তের অধীন তাহাকে উক্ত বিসয়বস্তুতে দখলকার বলিয়া গন্য করা উচিত, তাহা হইলে যথাযথ আইনগত পদ্ধতির দ্বারা উচ্ছেদ না হওয়া পযর্ন্ত তিনি এই পক্ষ দখলের অধিকারী মর্মে ঘোষণা করিয়া এবং এইরুপ উচ্ছেদ না হওয়া পযর্ন্ত উক্ত দখলের প্রতি সকল ব্যাঘাত ঘটানো নিষিদ্ধ করিয়া একটি আদেশ দিবেন, এবং তিনি যখন (৪) উপ-ধারায় অনুশত অনুসারে অগ্রসর হন, তখন তিনি বলপূবর্ক বা অন্যায়ভাবে বেদখল হওয়া পক্ষকে দখলে পুনবর্হাল করিতে পারিবেন।

(৭) এইরুপ কোন প্রসিডিংস এর কোন পক্ষ যখন মারা যায় তখন ম্যাজিস্ট্রেট মৃত পক্ষের বৈধ প্রতিনিধিকে প্রসিডিংস এর পক্ষ করাইতে পারিবেন এবং অত:পর তিনি অনুসস্ধান চালাইয়া যাইবেন এবং এইরুপ প্রসিডিংস এর উদ্দেশ্য কে মৃত পক্ষের বৈধ প্রতিনিধি তত্‍সম্পর্কে যদি এইরুপ প্রশ্ন উথাপিত হয় তাহা হইলে মৃতপক্ষের প্রতিনিধি বলিয়া দাবীকারী সকল ব্যক্তিকে পক্ষ করিতে হইবে।

(৮) ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে, এই ধারার অধীন তাহার বিবেচনাধীন কোন প্রসিডিং- এর বিষয়বস্ত কোন সম্পত্তির ফসল বা অন্য কোন উত্‍পন্ন দ্রব্য দ্রুত প্রাকিতিকভাবে নষ্ট হইতে পারে, তাহা হইলে তিনি উক্ত সম্পত্তি যথাযথ হেফাজত বা বিক্রয়ের আদেশ দিতে পারিবেন, এবং অনুসস্ধান সমাপ্ত হইবার পর উক্ত সম্পত্তি বা উহার বিক্রয়লব্ধ অথ বিলি বন্টনের জন্য তিনি যেরুপ উপযুক্ত বিবেচনা করেন সেইরুপ আদেশ দিবেন।

(৯) ম্যাজিস্ট্রেট উপযুক্ত মনে করিলে এই ধারার অধীন গৃহীত কোন প্রসিডিংসে এর যে কোন পযায়ে যে কোন পক্ষের আবেদনক্রমে কোন সাক্ষীকে হাজির হইবার বা কোন দলিল বা বস্তু হাজির করিবার নিদের্শ দিয়া সমন প্রদান করিতে পারিবেন।

(১০) এই ধারার কোন কিছুই তাহা ম্যাজিস্ট্রেটের ১০৭ ধারার অধীন অগ্রসর হইবার ক্ষমতা ব্যাহত করিবে বলিয়া গণ্য করা যাইবে না।

১৪৫ ধারার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে উপজেলা ম্যাজিস্টেট দ্বারা প্রয়োগ করতে হবে। স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত বিরোধ হতে উদ্ভুত শান্তি ভঙ্গ প্রতিরোধকল্পে ১৪৫ ধারা দখলরত যে কোন একপক্ষকে দখল বজায় রাখার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিকারের বিধান করেছে। এই ধারার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধীয় সম্পত্তির দখলে হস্তক্ষেপ করে উক্ত দখল সম্পর্কে অস্থায়ী আদেশ দিতে ম্যাজিষ্ট্রেটকে ক্ষমতা দেয়া এবং উক্ত আদেশের কাযর্কারিতা উপযুক্ত কোন আদালতের দ্বারা যে কোন একপক্ষে প্রকৃত অধিকার নিষ্পত্তি না হওয়া পযর্ন্ত বলবত্‍ থাকে।


কে ১৪৫ ধারা আদেশ জারি করিতে পারেন:

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৪৫ (১) মোতাবেক আদেশ জারি করিতে পারেন যথা:

  • ১) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
  • ২) সরকার বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়োগকৃত বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

কোন কোন অবস্থায় ১৪৫ ধারা আদেশ জারি করা যায় বা শর্তসমূহ বা উপাদানঃ

এই ধারার অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হলে নিম্নোক্ত উপাদানগুলি থাকতে হবে-

  • ১)অবৈধভাবে বেদখল (Wrongfully dispossessed) হওয়ার ২ মাস এর মধ্যে মামলা দায়ের করা।
  • ২) বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
  • ৩) শান্তি-শৃংখলার অবনতির আশংকা।
  • ৪) মারামারি ,ঝগড়া-বিবাদ রক্তারক্তির আশংকা বিদ্যমান থাকা।
  • ৫) নিরংকুশ মালিকানা স্বত্ব বিদ্যমান থাকা।
  • ৬) বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে একটি বিরোধের অস্তিত্ব থাকতে হবে।
  • ৭) বিরোধটি অবশ্যই ভূমি এবং জলের দখল সম্পর্কিত হতে হবে। তবে দালান , বাজার,মৎস খামার, ফসল, ভূমির অন্যান্য উৎপাদিত দ্রব্য বা খাজনার মুনাফাও এই ধারার অধীনে ব্যবহ্ত, জমি বা পানি কথাটির অন্তর্ভূক্ত হবে ।
  • ৮) এই ভূমির দখল সম্পর্কের বিরোধের বিষয়টি শান্তি ভঙ্গ করে এইরকম সংবাদ সম্পর্কে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ অথবা অন্য কোন মাধ্যমে অবহিত হবেন।
  • ৯) ১৪৫ এর অধীন কোন অস্থায়ী আদেশ প্রদানের মূল শর্ত হলো বিরোধীয় সম্পত্তির কারণে শান্তি ভঙ্গ হয়েছে বা হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
  • ১০) ম্যজিষ্ট্রেট এই মর্মে সন্তুষ্টি লাভ করবেন যে, এ ধরনের বিরোধের কারনে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা বা সমুহ সম্ভাবনা রহিয়াছে।

১৪৫ ধারা উদ্দেশ্যঃ

  • ১) বিরোধীয় সম্পত্তিতে মালিকানা নিরধারণ

  • ২) বিরোধীয় সম্পত্তিতে কে দখলের অধিকারী ব্যক্তি।

  • ৩) বিরোধীয় সম্পত্তিতে আইনগত দখলকার ব্যক্তি।

১৪৫ ধারা কত দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকে:

১৪৫ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত আদেশ স্থাবর সম্পত্তির আইনগত স্বত্ত্বাধিকারী বা দখলদার নির্ণীত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

যে সকল কারনে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলার প্রতিকার পাওয়া যায় না:

  • () দীর্ঘ সময় বেদখল থাকার পর

  • () বেদখল শান্তিশৃংখলা বিঘ্নের সম্ভাবনা না থাকলে

  • () সম্পত্তির যৌথ মালিকানা থাকলে

  • ()সম্পত্তি দখলে না থাকলে

তবে মনে রাখা উচিত যে দীর্ঘদিন বেদখলে থাকলে এবং সম্পত্তি দখলে না থাকলে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলা করা যায় না সেক্ষেত্রে Declaration suit রে Tittle প্রতিষ্ঠিত করতে হয়

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সহজে বুঝানো যায়। ধরুন, একটি পুকুরের মালিক। তার প্রতিবেশী লোকজন জোরপূর্বক পুকুরে মাছ ধরতে আসে। বাধা দিলে তারা ভয়ভীতি হুমকি দিয়ে চলে যায়। তারা জনবলে বলিয়ান। যে কোন মুহুর্তে তারা জোরপূর্বক পুকুরের মাছ ধরতে পারে। মি. বাধা দিলে রক্তারক্তি হবে। আইনী ভাবে তাদের প্রতিহত করার জন্য তড়িৎ প্রতিকারের জন্য একটি কার্যবিধি ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করবেন

১৪৫ ধারা কি আদেশ দিবেনঃ

১. কোন পক্ষ দখলের অধিকারী তাহা ঘোষণ দিবেন।

২. কোন পক্ষ দখলে না থাকিলে ক্রোক করিবেন্।

১৪৫ ধারা আদেশ ভঙ্গের শাস্তি কি:

১৪৫ ধারা আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার:

১৪৫ ধারা আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে ৪৩৫ ও ৪৩৯ ক ধারা মোতাবেক রিভিশন দায়ের করিতে হইবে।

১৪৫ ধারার ঐ ধরনের প্রসিডিং এ সাক্ষ্য পরীক্ষান্তে যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন যে কোন পক্ষই দখলে নাই বা কোন পক্ষ বিরোধীয় সম্পত্তিতে দখলে আছেন, তাহা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কি করিবেন

১৪৬(১) ধারা মোতাবেক উক্ত সম্পত্তি ক্রোক করিবেন।

১৪৬ (২) ধারা মোতাবেক রিসিভার নিয়োগ করিবেন।

বিরোধীয় বস্তু যদি দ্রুত স্বাভাবিক নিয়মে পচন যোগ্য হয় তবে তা জিম্মা বা বিক্রির জন্য আদেশ দিতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান শেষে উক্ত টাকা পয়সা সম্পর্কে তিনি যেরুপ উপযুক্ত মনে করেন সে রুপ আদেশ দিবেন।

সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনার পর ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব যদি দেখতে পান যে, বর্তমানে মামলার ভূমি নিয়ে শান্তিভঙ্গের কোন আশঙ্কা নেই, তাহলে তিনি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন

সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনার পর ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব যদি দেখতে পান যে, বর্তমানে মামলার ভূমি নিয়ে শান্তিভঙ্গের কোন আশঙ্কা নেই, তাহলে তিনি ১৪৬(১) ধারা মোতাবেক উক্ত সম্পত্তি ক্রোক আদেশ প্রত্যাহার করিবেন।

যদি সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনা করে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দেখতে পান যে, প্রসিডিং রুজু করার ৬০ দিনের মধ্যে বিরোধীয় ভূমিতে প্রথম পক্ষের কোন দখল ছিল না, তাহলে প্রসিডিং এর পরিণতি কি হবেঃ

যদি সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনা করে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দেখতে পান যে, প্রসিডিং রুজু করার ৬০ দিনের মধ্যে বিরোধীয় ভূমিতে প্রথম পক্ষের কোন দখল ছিল না, তাহলে ম্যজিষ্ট্রেট ঘোষণা দিবেন যে, প্রথম পক্ষ উক্ত সম্পত্তি দখলের অধিকারী নন।

ম্যাজিস্ট্রেট যদি স্থির করেন যে পক্ষদের কেউই তখন বিরোধীয় সম্পত্তির দখলে ছিলেন না বা তখন কে দখলে ছিল তা নির্নয় করা যাচ্ছেনা, তাহলে তিনি ১৪৬ ধারা অনুযায়ী বিরোধীয় সম্পত্তি ক্রোক করতে পারেন এবং পক্ষদ্বয়কে যথাযথ দেওয়ানী আদালতে প্রতিকার গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেবেন।

বিরোধীয় সম্পত্তিতে কারো দাবি বা যোগ্যতার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দখল সম্পর্কে তিনি বক্তব্য শুনবেন, প্রয়োজনে সাক্ষীদের বক্তব্য ও শুনবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, তার আদেশের পুর্ববর্তী দুই মাসের মধ্যে কোন পক্ষ বলপুর্বক অন্যায় ভাবে দখলচ্যুত হয়েছে, তবে এরুপ দখলচ্যুত পক্ষকে উক্ত তারিখে দখল কার ছিলেন মর্মে পরিগণিত করতে পারবেন।

১৪৫ ধারার বিধান হচ্ছে যে সময় পর্যন্ত চূড়ান্ত আদেশ না দেওয়া হয় ঐ সময় পর্যন্ত শান্তিভঙ্গের অব্যাহত আশংকা বিদ্যমান থাকতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা বিশ্লেষণ করে এই উপসংহারে আসা যায়, যে পর্যন্ত কোন ভূমির দখল সংক্রান্ত বিবাদ শান্তিভঙ্গ করে অথবা শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা সৃষ্টি করে সে পর্যন্ত ক্ষমতাবান ম্যাজিস্ট্রেট অস্থায়ী আদেশের মাধ্যমে বিরোধীয় ভূমিতে রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন অথবা বিরোধের বিষয়বস্তু ক্রোক করতে পারেন।

ধারা ১৪৪ ও ১৪৫ এর মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর?
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা দুটিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা যথার্থ ক্ষমতাসম্পন্ন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোন ঘটনার দ্বারা শান্তিভঙ্গের আশংকা সৃষ্টি হলে অস্থায়ী আদেশ জারী করতে পারেন । এই অস্থায়ী আদেশের অন্তর্ভূক্ত বিষয় হলো , আদিষ্ট ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট কাজ অথবা কোন নির্দিষ্ট স্থানে গমনাগমন করা হতে বিরত রাখা বা বিরোধীয় ভূুমিতে রিসিভার নিয়োগ করা বা সম্পত্তি ক্রোক করা। তা সত্ত্বেও কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা দুটির মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১৪৪ ধারা

১৪৫ ধারা

গণ উৎপাত বা আসন্ন বিপদ, জরুরী ক্ষেত্রে  ১৪৪ ধারার আদেশ দেওয়া হয়।

স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দিলে ১৪৫ ধারার আদেশ দেওয়া হয়।

১৪৪ ধারার আদেশ নিষেধমুলক আদেশ।

১৪৫ ধারার আদেশ ঘোষণামুলক আদেশ।

১৪৪ ধারার অস্থাবর সম্পত্তি

১৪৫ ধারার স্থাবর সম্পত্তি

১৪৪ ধারায় গণউৎপাত বা আসন্ন বিপদের দ্বারা শান্তি ভঙ্গ হলে তৎক্ষণাৎ অস্থায়ী আদেশ জারী করা যেতে পারে।

১৪৫ ধারা প্রয়োগ করতে হলে পক্ষদ্বয়ের শুনানী অনুষ্ঠিত হতে হয়।

কার্যবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে অস্থায়ী আদেশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রদান করতে পারে। কিন্তু মহানগর এলাকায় এ ক্ষমতা পুলিশ কমেশনার প্রয়োগ করতে পারেন।

১৪৫ ধারার অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ কেবলমাত্র জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃকই হতে পারে; অন্য কোন কর্মকর্তা দ্বারা নয়।

১৪৪ ধারার আদেশ মহানগর এলাকায় প্রযোজ্য নহে।

১৪৫ ধারার আদেশ মহানগর এলাকায় প্রযোজ্য ।

১৪৪ ধারা প্রয়োগের বিষয়ে জনগণের শান্তিশৃঙ্খলায় ব্যাঘাত সৃষ্টিতে ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ অথবা মিছিল অথবা অন্য যেকোন রূপে হতে পারে কিন্তু বিরোধের বিষয় হবে মানুষকেন্দ্রিক।

১৪৫ ধারা প্রয়োগ করতে হলে দেখতে হবে যে পক্ষসমূহের মধ্যে বিরোধের বিষয় হলো ভূমি বা পানিকেন্দ্রিক।

১৪৪ ধারার প্রয়োগ ম্যাজিস্ট্রেটের স্বেচ্ছাধীন।

১৪৫ এর কোন বিরোধের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে বাধ্য ।

ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারায় কোন আদেশ দিলে তা ২ মাস পর অকার্যকর হয় ।

১৪৫ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত আদেশ স্থাবর সম্পত্তির আইনগত স্বত্ত্বাধিকারী বা দখলদার নির্ণীত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

১৪৪ ধারায় অস্থায়ী আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটকে যাদের বরাবর আদেশ প্রদান করা হবে তাদের নিকট নোটিশ পাঠাতে হয় । জরুরী হলে ব্যক্তিগতভাবে নোটিশ না পাঠিয়ে উপযুক্ত স্থানে লটকিয়ে দিলেও আদেশ কার্যকর হয়।

১৪৫ ধারা অনুযায়ী পক্ষসমূহের বক্তব্য না শুনে কোন আদেশ প্রদান করা যাবে না।

১৪৪ ধারায় যেহেতু বিরোধীয় বিষয়বস্তু ‍হিসেবে কোন ভূমি বা পানির অস্তিত্ব থাকে না সেহেতু এ ধারাধীনে ক্রোক বা রিসিভার নিয়োগের বিধান নেই।

১৪৫ ধারানুসারে ম্যাজিস্ট্রেট কোন সম্পত্তির দখল চূড়ান্তভাবে নির্ণীত হবার পূর্বে সম্পত্তি ক্রোক বা রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিতে পারেন।

১৪৪ ধারা আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে ৪৩৫ ও ৪৩৯ ক ধারা মোতাবেক রিভিশন দায়ের করিতে হইবে।

১৪৫ ধারা আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে ৪৩৫ ও ৪৩৯ ক ধারা মোতাবেক রিভিশন দায়ের করিতে হইবে।

 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Snow
Maeuf Hossen Jewel

Below Post Ad

Snow
Maruf Hossen Jewel

Ads Area

Snow
Maruf Hossen Jewel