উত্তরাধিকার সনদ বা সাকসেশন সার্টিফিকেট কি?
উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে
এমন একটি সনদপত্র বা প্রমানপত্র যা মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশগণ তার
রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশহারে বর্ণনা করে।
সাকসেশন সার্টিফিকেট
হচ্ছে মৃত ব্যাক্তির ব্যাংকে জমানো টাকা, কোম্পানীর শেয়ার, ডিবেঞ্চার, রয়্যালটির
সর্বোপরি মৃত ব্যাক্তির সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার প্রমান করার প্রমাণপত্র।
সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫ এর ধারা ৩৭০-৩৮৯ এ সাকসেশন সার্টিফিকেট এর ব্যপারে বলা আছে।
আইনে সাকসেশন সার্টিফিকেট গ্রহনের জন্য আবেদনের কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট করা নেই।
সাকসেশন সার্টিফিকেট
পাবার জন্য জেলা জজ এর আদালতে যথাযথ কাগজপত্র সহ আবেদন করতে হয়। এ আবেদনে অবশ্যই
মৃত ব্যাক্তির মৃত্যুর সময়, বাসস্থান, সব বৈধ উত্তরাধিকার, ঋণ এবং সম্পত্তি যে
জন্য সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে তার সস্পূর্ণ বিবরণ থাকতে হবে।
সাকসেশন সার্টিফিকেট এর জন্য প্রয়োজনীয়
কাগজপত্র?
মৃত ব্যাক্তির
মৃত্যুর সনদপত্র ( ডেথ সার্টিফিকেট),
ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনার প্রদত্ত পরিচয়পত্র বা নাগরিকতব সনদ,শেয়ার
সার্টিফিকেট, রয়্যালটির প্রমাণপত্র বা ব্যাংক টাকা জমার স্লিপ ইত্যাদি।
যদি উত্তরাধিকারদের
মধ্যে কেউ নাবালক থাকে তবে একই আদালত থেকে আবেদনের মধ্যমে তার আইনানুগ অভিভাবক
নির্ধারণ করা যায়।
উত্তরাধিকার সনদের জন্য কীভাবে আবেদন
করতে হয়?
উত্তরাধিকার সনদ
তুলতে হয় জেলা জজ আদালত থেকে। মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ
আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে
হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির
এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাঁদের
পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাঁকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে হলফনামা দিতে হবে, যাতে উল্লেখ থাকবে—
১। তিনি মৃত
ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন
২। মৃত ব্যক্তির এ
টাকা কাউকে দান বা উইল করে যাননি
৩। উইলের জন্য কোনো
প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যাননি
৪। তাঁকে অন্য
উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের
বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হবে।
৫। সিটি করপোরেশন,
পৌরসভা বা চেয়ারম্যান অফিস বা কমিশনারের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর
প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে
মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র।
৬। মৃত ব্যক্তি যদি
কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ
করে জমা দিতে হবে।
৭। মৃত ব্যক্তি কোন
ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি সনদ (ব্যালান্স কনফারমেশন
লেটার) ওঠাতে হবে এবং আদালতে জমা দিতে হবে।
৮। আদালতে আবেদন
করার পর আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সততা যাচাই করবেন। পরবর্তী সময়ে
আদালতে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন। কোর্ট ফি জমা দেওয়া হলে
পরে সনদ জারি করবেন।
কোর্ট ফি কত লাগবে?
২০ হাজার টাকা
পর্যন্ত কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ১
শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যেকোনো পরিমাণ অর্থের ওপর ২
শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।
■ জেনে রাখুন-
সাধারণত উত্তরাধিকার
সনদ পেতে দুই থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ
টাকার জন্য ব্যাংকে কোনো নমিনি করে দিয়ে থাকেন, তাহলে ওই নমিনির টাকা তোলার জন্য
উত্তরাধিকার সনদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু অনেক ব্যাংকে এ টাকা তোলার জন্য
জমা দেওয়া লাগতে পারে। কোনো কারণে আবেদন খারিজ হলে জেলা জজ আদালতের আদেশের
বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য যে,
উত্তরাধিকারী সনদ শুধুমাত্র বাংলাদেশে ব্যবহারের উপযোগী। তবে বিদেশে কার্যকারিতার
ক্ষেত্রে কোর্ট ফি আইন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোর্ট প্রদান সাপেক্ষে নির্দিষ্ট
ফরম-এ সনদ গ্রহণ করতে হবে।
বি.দ্রঃ নিজে জানুন
এবং শেয়ার করে অন্যদেরও জানতে সহায়তা করুন।