আদালতের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, উক্ত পক্ষকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে ‘প্রত্যর্পণ’ নীতিটি মূলতঃ প্রয়োগ করা হয়। এটি নতুন কোন ধারণা নয়, শুধুমাত্র দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে এই নীতিকে সংবিধিবদ্ধ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
নিম্নে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় বর্ণিত ‘প্রত্যর্পণ’ নীতি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা হলো।
What is Restitution under CPC / দেওয়ানী আইনে প্রত্যর্পণ কাকে বলে?
আদি এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত প্রত্যর্পণের আদেশ দিতে পারেন। অথবা বলা যায়, যে আদালত কোন দেওয়ানী মোকদ্দমার ডিক্রী প্রদান করেন, সেই আদালত ডিক্রী পরিবর্তন জনিত কারণে প্রত্যর্পণের আদেশ দিতে পারেন। আদালত যে শুধু কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির দখল বা মালিকানা প্রত্যর্পণ করতে পারেন তা নয়; বরং যেকোন ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকারসম্পন্ন ডিক্রীর পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যর্পণের আদেশ দিতে পারেন।
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১৪৪ ধারায় প্রত্যর্পণ সম্পর্কে বিধান আছে। দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১৪৪(১) ধারায় বলা হয়েছে-
“যেক্ষেত্রে কোন ডিক্রীর যতদূর পরিবর্তন বা রদ করা হয় সেক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ বা অন্য কোনভাবে আদালত কর্তৃক যেরূপ প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা প্রদত্ত না হলে পক্ষগণ যে অবস্থায় থাকতেন, সেই অবস্থায় স্থাপন করবেন এবং এই উদ্দেশ্যে আদালতে মামলার ব্যয় প্রদান এবং মুনাফা, খেসারত ও ক্ষতিপূরণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন মুনাফা পরিশোধের আদেশসহ এরূপ পরিবর্তন বা রদের কারণে উপযুক্ত আদেশ দিতে পারেন।”
এছাড়া, ১৪৪(২) ধারানুসারে, আবেদন করে প্রত্যর্পণ বা অন্য কোন প্রতিকার পাওয়া গেলে এই উদ্দেশ্যে কোন মামলা দায়ের করা চলবে না।
অতএব, দেওয়ানী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা নতুন কোন মৌলিক অধিকার সৃষ্টি করে নি; বরং এটি শুধুমাত্র এই লক্ষ্যে (প্রত্যর্পণ) আদালতের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এটি আদালতের দায়িত্ব যে, যদি কোন পক্ষ আদালতের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সে পক্ষ ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবার পূর্বে যে অবস্থায় ছিল আদালত সে অবস্থাতে ফিরিয়ে দেবেন।
সুতরাং যদি কোন ডিক্রী পরিবর্তন হয় অথবা বাতিল করা হয়, তাহলে আদি আদালত (ডিক্রী প্রদানকারী আদালত) প্রত্যর্পণের আদেশ দিতে পারবেন।
প্রত্যর্পনের উদ্দেশ্য
প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্য একটি ল্যাটিন প্রবাদের মধ্যে নিহিত আছে। প্রবাদটি হলো- “Actus Curiae Neminem Gravabit” অর্থাৎ আদালতের কাজ (সিদ্ধান্ত) কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে না।
সুতরাং এ কথা বলা যেতে পারে যে, প্রত্যর্পণের মতবাদটি ন্যায়পরায়ণতা নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ ভুল ডিক্রী জারীর কারণে মামলার কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ডিক্রী পরিবর্তন বা রদের ফলে ক্ষতিগ্রস্তপক্ষ ডিক্রী জারীর পূর্বের অবস্থা (Status) এমনভাবে ফিরে পাবে যেন কোন ভুল ডিক্রী জারীই করা হয় নি।
উদাহরণঃ
ধরা যাক, রহিম এবং করিমের মধ্যে একটি মোকদ্দমায় আদালত ভুলভাবে রহিমের পক্ষে একটি ডিক্রী জারি করেছে যাতে বলা হয়েছে যে, তাদের যৌথ ব্যবসার ২০ লক্ষ টাকা রহিম পাবে। পরে চূড়ান্তভাবে দেখা গেল যে, টাকাটি আসলে করিমের পাওনা। ডিক্রী জারি হওয়ার আগেও টাকাটি করিমের কাছেই ছিল এবং সে উক্ত টাকা দাবী করছিল।
এক্ষেত্রে, আদালতে উক্ত পরিমাণ টাকা করিমকে প্রত্যর্পণ করবেন।
প্রত্যপর্ণের শতসমূহ
প্রত্যর্পণের আদেশ প্রদানের পূর্বে আদালতের নিকট নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রতীয়মান হবে। যথাঃ
- যে ডিক্রী বা আদেশ পরিবর্তিত বা রদ হয়েছে তার বিপরীতে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন করা হয়েছে;
- প্রত্যর্পণের জন্য আবেদনকারী পক্ষ রদকৃত বা পরিবর্তিত ডিক্রীর ফলশ্রুতিতে কোন সুবিধার অধিকারী হয়েছে; এবং
- প্রার্থিত প্রত্যর্পণ (Restitution) অবশ্যই বাতিলকৃত বা পরিবর্তিত ডিক্রীর ফলে হয়েছে।
Banchanidhi Vs. Vanu Sahni মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো প্রত্যর্পণের আবেদন করতে হলে-
- অবশ্যই একটি ভুল রায়ের অস্তিত্ব থাকবে;
- একপক্ষ কর্তৃক ভ্রান্ত রায়ের ফলে সুবিধাপ্রাপ্ত হবে; এবং
- ক্রটিপূর্ণ রায়ে পরিবর্তিত হবে।
প্রত্যর্পণের আবেদন করার যোগ্যতা
মামলার বাদী (Plaintiff) এবং বিবাদী (Defendant) যেকোন পক্ষ প্রত্যর্পনের জন্য আদালতের নিকট আবেদন করতে পারেন। অর্থাৎ যে পক্ষ আদালতের ক্রটিপূর্ণ রায়ের কারণে বিশেষ সুবিধার অধিকারী হন।