সংবিধান কি বা কাকে বলে?|| সংবিধানের সংজ্ঞা কি
আমরা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে বাস করি ।এই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। এই নিয়মাবলির সমষ্টিকে শাসনতন্ত্র বা সংবিধান বলে।এই শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।শাসনতন্ত্র বা সংবিধানকে বলা হয় রাষ্ট্রের দর্পণ বা আয়না স্বরূপ। শাসনতন্ত্রে একজন সুনাগরিকের কর্তব্য ও অধিকার, শাসকের ক্ষমতা এবং নাগরিক ও শাসকের সম্পর্কের ধরন কিরূপ হবে তা সুস্পষ্টভাবে লিখা থাকে। কাজেই সুনাগরিক হতে গেলে অবশ্যই সংবিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
সংবিধান কি বা কাকে বলে
একটি রাষ্ট্র চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের আইন থাকে।কোন একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনকে সেই রাষ্ট্রের সংবিধান বলে। সংবিধান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে constitution.
এখানে আমাদের জানতে হবে যে ,বর্তমান বিশ্বের যে কোন ধরনের সংগঠন, রাষ্ট্র বা দেশ পরিচালনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শাসনতন্ত্র বা সংবিধান। বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টোটল বলেছেন যে,"জীবন ও রাষ্ট্র তার নিজস্ব প্রয়োজনে শাসনতন্ত্র বা সংবিধানকে বেছে নিয়েছে"। মূলকথা হলো, সংবিধানের মধ্যেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বা যে কোন সংগঠনের মূলনীতি বা নিয়মকানুনগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় সংবিধানকে বলা হয় রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল।
শাসনতন্ত্র বা সংবিধান হল একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত কতগুলো নিয়ম কানুনের দলিল। এই শাসনতন্ত বা সংবিধানের মধ্যেই লেখা থাকে একটি রাষ্ট্রের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ কিভাবে গঠিত হবে, এই তিনটি বিভাগের ক্ষমতা কি হবে , জনগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে কি কি সুবিধা ভোগ করবে এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হবে।
সংবিধান কত প্রকার ও কি কি?
উপরে আমরা সংবিধান কি তা জেনেছি।এখন আমরা সংবিধানের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব।
লিপিবদ্ধকরণ বা লেখার ভিত্তিতে সংবিধানের প্রকারভেদ:
লিপিবদ্ধকরণের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র বার সংবিধানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
ক) লিখিত সংবিধান বা শাসনতন্ত্র
খ) অলিখিত সংবিধান বা শাসনতন্ত্র
লিখিত সংবিধান বা শাসনতন্ত্র:
লিখিত সংবিধান মানে হচ্ছে যেখানে নিয়মকানুন গুলো স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। অর্থাৎ লিখিত সংবিধানের অধিকাংশ বিষয়ে দলিল লিপিবদ্ধ থাকে ।উদাহরণ:ভারত,বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানগুলো লিখিত সংবিধান।
অলিখিত সংবিধান বা শাসনতন্ত্র
অলিখিত সংবিধানের অধিকাংশ নিয়মকানুনগুলো কোন দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না। এ ধরনের শাসন তন্ত্র প্রথা এবং রীতিনীতি ভিত্তিক হয়ে থাকে। চিরাচরিত নিয়ম ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর এ ধরনের সংবিধান গড়ে ওঠে। যেমন- যুক্তরাজ্যের সংবিধান হলো অলিখিত সংবিধান।
মূল কথা হলো ,যে সংবিধানে অধিকাংশ বিষয়ে লিখিত থাকে, তাকে বলে লিখিত সংবিধান। আরজে সংবিধানের অধিকাংশ কিছু অলিখিত থাকে তাকে অলিখিত সংবিধান বলে। কোন শাসনতন্ত্রই পুরোপুরি লিখিত বা অলিখিত নয়। কোনটি বেশি লিখিত আবার কোনোটি কম লিখিত।
সংশোধন পদ্ধতি অনুসারে সংবিধান কত প্রকার ও কি কি
সংশোধনের উপর নির্ভর করে সংবিধানের প্রকারভেদ:
সংশোধনের ভিত্তিতে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।যথা:
ক) সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বা শাসনতন্ত্র
খ) দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বা শাসনতন
সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বা শাসনতন্ত্র:
সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের কোন ধারা সহজেই পরিবর্তন ও সংশোধন করা যায়। এরূপ কাজ করতে গিয়ে কোন জটিলতা প্রয়োজন হয় না। সাধারণ গরিষ্ঠতায় আইনসভা এর যে কোন অংশ পরিবর্তন করতে পারে। একটি সুপরিবর্তনীয় সংবিধান এর উদাহরণ হল ব্রিটিশ সংবিধান।
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বা শাসনতন্ত্র:
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংবিধানের কোন ধারা সহজে সংশোধন করা যায় না। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের কোন ধারা সংশোধন করতে হলে জটিল পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সম্মেলন, ওভোটাভুটির। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংবিধানের একটি চমৎকার উদাহরণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।