জামিন কি ?যে সকল বিষয় বিবেচনা জামিন দেয়া হয়:
বেশ কয়েক মাস ধরে সারা দেশে চলছে গনহারে গ্রেফতার অভিযান । কারণে-অকারণে , অপরাধে-বিনাঅপরাধে নানানভাবে এই গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন হাজার হাজার নানান বয়সের ব্যক্তি । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে পুলিশ তথা যৌথ বাহিনী সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছেন। তাদের নিকটআত্নীয় স্বজনরা দৌড়েচ্ছেন থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতে। পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিস্টান তথা উপরিমহলে যোগাযোগ । উদ্দেশ্য বেকসুর খালাস বা মুক্তি অথবা জামিন । কিন্তু তা চাইলেই এখন পাওয়া যাচ্ছে না । দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতায় পৌঁছানোর আগে কাউকে মুক্তি দিবে না ,এমনই মনে করেন অনেকেই ।
যাহোক মূল আলোচনায় আসা যাক; জামিন কি ? সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর আদালত তার আইন ও সুবিবেচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটক কোন ব্যক্তিকে আদালতের আদেশমতো নির্দিষ্ট স্থানে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করাকে আইনের চোখে 'জামিন' বলা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, সংশ্লিষ্ট আদালতে সময়মত হাজির হওয়ার শর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি প্রদান করে জামিনদারের নিকট সম্পর্ন করাকে জামিন বলে। মামলার যেকোন পর্যায়ে জামিন মঞ্জুর করা যায়। উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। আদালত জামিন মন্জুরে তার আইন ও সুবিবেচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ বিবেচনায় নেন সাধারণত: আসামী পুরুষ, মহিলা, শিশু ও বয়স্ক কিনা। আসামিকে জামিন দিলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন বা মামলা পরিচালনায় অন্য কোন সমস্যা হবে কিনা? আসামী রোগাক্রান্ত অথবা জখম প্রাপ্ত কিনা। জামিন পেলে আসামী সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাবে কিনা? জামিন দিলে আসামী পলাতক হবে কিনা? জামিন না পেলে আসামীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পরবে কিনা? আনীত অভিযোগ ঘৃন্য বা জঘন্য কিনা? দুর্ধর্ষ বা অভ্যাস গত অপরাধী হিসেবে আসামীর দুর্নাম আছে কিনা? আসামীন বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যুক্তিসংগত মনে হয় কিনা? আসামী হাজতে থাকলে তার পরিবার অনাহারে থাকবে কিনা? আসামীর নাম এজহারে আছে কিনা? আসামী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোকতিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কিনা? আসামী পুলিশ কতৃক ধৃত হয়ে ,নাকি স্বেচ্চায় আত্মসমর্পন করেছে ? আসামী হাতেনাতে ধৃত কিনা, আসামির নিকট হতে কৌন অবৈধ মালামাল উদ্ধার করেছে কিনা? আসামীর হাজত বাস দীর্ঘ সময় ধরে কিনা? মামলাটি পক্ষদ্বয়ের মধে কোন পূর্ব শত্রুতার জের কিনা বা পাল্টাপাল্টি মামলা কিনা? জামিন শুনানিতে পক্ষদ্বয় বিজ্ঞ কৌশলীর উত্থাপিত যুক্তিতর্ক । প্রভৃতি ॥ ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে আসামী মুক্তি পেতে পারে; (ক),জামিন যোগ্য অপরাধঃ ধারা ৪৯৬। জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে, বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেয় তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার নিকট হতে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন। তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোন বিধান ১০৭ ধারার (৪) উপধারা বা ১১৭ ধারার (৩) উপধারার কোন বিধানকে প্রভাবিত করবে বলে গণ্য হবে না। (খ),জামিন-অযোগ্য অপরাধঃ ধারা ৪৯৭।যখন জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাবেঃ
(১) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে উক্তরূপে দেওয়া যাবে নাঃ তবে শর্ত থাকে যে, আদালত এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(২) ক্ষেত্রমতে তদন্ত, ইনকোয়ারী বা বিচারের কোন পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদলতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, আসামী জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই, কিন্তু তার অপরাধ-সম্পর্কে আরও ইনকোয়ারির পর্যাপ্ত হেতু রহয়েছে, তাহলে এইরূপ ইনকোয়ারী সাপেক্ষে আসামীকে জামি অথবা উক্ত অফিসার বা আদলত বা আদালতের ইচ্ছানুযাসারে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
(৩) কোন অফিসার বা আদালত (১) উপধারা বা (২) উপধারা অনুসারে কোনব্যক্তিকে মুক্তি দিলে তার ঐরূপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
(৪) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার সমাপ্ত হবার পর এবং রায় দানের পূর্বে কোন সময় আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী উক্ত অপরাধে দোষী নয় বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, তা হলে আসামী হাজতে থাকলে রায় শ্রবণের উদ্দেশ্যে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদনের পর তাকে মুক্তি দিবেন।
(৫) হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত এবং নিজে মুক্তি দিয়ে থাকলে অন্য কোন আদালত এই ধারা অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে ও তাকে হাজতে প্রেরণ করতে পারবেন।
*** আপনি আমি সবাই জানি দেশে আইন আদালতে কি হচ্ছে । সে হিসেবে একটি বেআইনি পরামর্শ দিচ্ছি ! আর সেটা হল, যদি আপনার আপনজন কাউকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাহলে যেকোনো প্রকারে পুলিশ কিংবা থানা থেকে ছাড়িয়ে নিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায় । অর্থাৎ আদালত হাজির হওয়ার আগে কোনভাবে লবি্, ওপরি মহলের ফোন কল, প্রভাব অথবা টাকা পয়সা দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করা । কারণ আদালত মানেই লম্বা এক আইনি প্রক্রিয়া !