আরজির সংজ্ঞা:
নালিশের কারন সম্বলিত আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতি যার ভিত্তিতে যদি কোন প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরর্জি বলা হয়। আইনে আরর্জির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। আরর্জি হল মামলার ভিত্তি যার উপর প্রতিকার প্রাপ্তি নির্ভর করে। আইনের বিধান অনুসরণ করে আরর্জি তৈরী করতে হয়। এর কোন ব্যত্যয় হলে আদালত আরর্জি গ্রহন নাও করতে পারেন।
মামলার কারণ ও বিবরণ একটি আরজিতে লিপিবদ্ধ করে তা আদালতে দায়ের করে মামলা রুজু করতে হয়। ইহার বিধান রয়েছে অর্ডার-৭,রুল-১১ তে। ইহাতে মোকদ্দমার কারণ উল্লেখ না থাকলে মামলা খারিজ হয়।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখপূর্বক প্রতিকার চেয়ে যে দরখাস্তমূলে দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা রুজু করা হয় তাকে আরর্জি বলে।
আরজির বিষয়বস্তু:
৭ আদেশের ১ বিধি অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আরজিতে উল্লেখ করতে হবে:
- ক) যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে আদালতের নাম।
- খ) বাদীর নাম ,পরিচয় ও বাসস্থান।
- গ) বিবাদীর নাম পরিচয় ও বাসস্থান (যতদূর জানা যায়)।
- ঘ) বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা মানসিক বিকারগ্রস্থ হলে সে মর্মে বিবৃতি।
- ঙ) যে ঘটনাবলী মামলার কারণ সমূহের সৃষ্টি করে থাকে এবং যখন এগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- চ) যে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে সে আদালতের যে এই মামলা বিচারের এখতিয়ার রয়েছে সেই মর্মে বিবৃতি।
- ছ) মামলায় বাদীর প্রার্থীত প্রতিকার।
- জ) দাবীর কোন অংশ বর্জন করা হলে সেই মর্মে বিবৃতি।
- ঝ) ঝঁরঃ ঠধষঁধঃরড়হ অপঃ অনুযায়ী মামলার মূল্য এবং ঈড়ঁৎঃ ভববং অপঃ অনুযায়ী দাবীর মূল্য বিষয়ে বিবৃতি।
- ঞ) যদি বাদী প্রতিনিধিত্ব কোন মামলা করে থাকেন সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ের উপর বাদীর স্বার্থ আছে উক্ত বিষয়ের বর্ণনা এবং বাদী মামলা করতে সক্ষম সেই বিষয়েও একটা বর্ণনা।
- ট) যদি মোকদ্দমা কোন অর্থ আদায়ের মোকদ্দমা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে উক্ত অর্থের পরিমান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- ঠ) যদি বাদী কোন সেট অব অনুমোদন করে থাকে বা উহার কোন দাবীর অংশ পরিত্যাগ করে থাকে তাহলে এরুপ অনুমোদিত ও পরিত্যাগকৃত অংশের পরিমান উল্লেখ করতে হবে।
- ড) যদি অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে মামলা করা হয়ে থাকে তবে তার যথাযথমূল্য বা পরিমান।
- ঢ) যদি মোকদ্দমাটি কোন স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সম্পত্তিটি সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত বিবরণ।
- ণ) যদি মোকদ্দমাটি সময় দ্বারা বারিত হয়ে থাকে ,তবে উহা হতে অব্যাহতি পাবার কারণগুলো উল্লেখ করতে হবে।
- ত) সত্য পর্বের স্বাক্ষর ও তারিখ সম্বলিত হতে হবে।
আরজির প্রত্যাখ্যান ও আরজি ফেরত :
নালিশের কারণ সম্বলিত আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতি যার ভিত্তিতে যদি কোন প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরর্জি বলা হয়। আইনে আরর্জির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। আরর্জি হল মামলার ভিত্তি যার উপর প্রতিকার প্রাপ্তি নির্ভর করে। আইনের বিধান অনুসরণ করে আরর্জি তৈরী করতে হয়। এর কোন ব্যত্যয় হলে আদালত আরজি গ্রহন নাও করতে পারেন। কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের অর্ডার ৭ এর ১১ বিধিতে উল্লেখিত কারণে আরজি প্রত্যাখানের আদেশ এবং একই অর্ডারের ১০ বিধিতে আরর্জি ফেরতের ক্ষমতা আদালত প্রয়োগ করতে পারেন। আদালত মামলা বিচারার্থে গ্রহন করে সমন জারির পূর্বে মামলাটি তার আঞ্চলিক,আর্থিক এবং বিষয়বস্তুগত এখতিয়ারের মধ্যে দাখিল হয়েছে কিনা তা নিরুপণ পূর্বক যথাযথ আদালতে বিচারার্থে দাখিলের জন্য যদি কোন আদেশ দেয় তাকে আরর্জি ফেরত বলে এবং কোন মামলা দাখিলের পর আদালত কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১ বিধি অনুযায়ী পাঁচটি কারণের কোন এক বা একাধিক কারণে যদি মামলা বিচারার্থে গ্রহন না করেন তাকে আরর্জি প্রত্যাখ্যান বলে।
নিম্নে উভয বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
আরর্জি প্রত্যাখান:
আরর্জি প্রত্যাখানের সুনির্দিষ্ট কারণসমূহ কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর অর্ডার-৭,রুল-১১ তে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,আরর্জি নি¤œলিখিত কারণে প্রত্যাখান করা যাবে:
- ক) আরর্জিতে মামলার কারণ উল্লেখ না থাকলে;
- খ) আরর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য কম উল্লেখ থাকলে এবং আদালতের নির্দেশমত বাদী নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করতে ব্যর্থ হলে;
- গ) আরর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য যথার্থ উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজন অপেক্ষা কম মূল্যের স্ট্যাম্পে আরজি লেখা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশমত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প সরবরাহে বাদী ব্যর্থ হলে;
- ঘ) আরর্জির বিবৃতি অনুযায়ী মামলা কোন আইনে নিষিদ্ধ বলে প্রতীয়মান হলে এবং
অর্ডার ৭ রুল ৯(১এ) এর কোন একটি বিধান প্রতিপালিত না হলে এবং আদালত কর্তৃক নির্দের্শিত হওয়ার পরেও দেয় সময়ের মধ্যে যদি বাদী তা প্রতিপালনে ব্যর্থ হয়।(আরর্জি প্রত্যাখানের (ই) নং বিধানটি আমাদের বাংলাদেশ কোর্ডে উল্লেখ নাই বা সাধারণ দেওয়ানী কার্যবিধি বই গুলোতে উল্লেখ নাই কিন্তু ২৫/০৭/১৯২৭ ইং তারিখে ১০৮২৮ -জি নং নোটিফিকেশন দ্বারা কলকাতা হাইকোর্ট অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এ সংযোজিত করেন)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত যে কোন একটি কারণে আদালত আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ দিতে পারেন।
নজীর:
সাধু বনাম ধিরেন্দ্র,৫৫ সি ৫৯০ মামলায় ইহা সিন্ধান্ত হয যে, সমন জারির পূর্বে ইহা আদালতের কর্তব্যের মধ্যে পরে যে, আরর্জিতে নালিশের কারণ সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কিনা বিবাদির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে কিনা এবং আরর্জি প্রত্যাখান বা সংশোধনের উহা ফেরত প্রদান উচিত কিনা। ১১ বিধির কারণগুলো আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মেদিনিপুর জমিদারী কোম্পানী বনাম সেক্রেটারি অফ স্ট্রেট ৪৪ সি ৩৫২ মামলায়। আরর্জি প্রত্যাখানের পূর্বে আদালত আরর্জির বক্তব্য এবং আরর্জির সাথে দাখিলী দলিলাদি বিবেচনায় নিবেন কিন্তু বিবাদীর দাখিলী কোন দরখাস্ত বক্তব্য বা দাখিলী জবাবের কোন দাবীকে আদালত বিবেচনায় নিবেন না।
আরর্জি ফেরত:
কোর্ড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের অর্ডার ৭ ,রুল ১০ এ বলা আছে আদালত মামলার যে কোন পর্যায়ে যথাযথ আদালতে দাখিলের জন্য আরজি ফেরত দিতে পারেন এবং ফেরত দেওয়ার সময় মামলা দাখিল এবং ফেরতের তারিখ আরর্জিতে লিখে দাখিলকারী পক্ষের নাম লিখবেন এবং ফেরতের কারণ সংক্ষিপ্তকারে লিখবেন। এভাবে একটি আরর্জি ফেরত দিবেন। এখানে শুধুমাত্র আদালত আরর্জি কখন এবং কিভাবে ফেরত দিবেন তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কথা বলা হয়নি কোন কোন কারণে আরর্জি ফেরত দেওয়া যাবে। অর্থাৎ এই বিধান দ্বারা আদালতকে আরর্জি ফেরতের ক্ষমতাবান করা হয়েছে কিন্তু বলা হয়নি ঠিক কোন অবস্থায় আদালত এই ক্ষমতার প্রযোগ করবেন। আমরা যদি কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর সিভিল কোর্ট এ্যাক্ট,১৮৮৭ এর বিভিন্ন বিধান দেখি তাহলে দেখতে পাব যে আদালতকে এই দুইটি আইনের বিধান থেকে ঠিক করবেন কেন আরর্জি ফেরত দিবেন। আরর্জি ফেরতের আগে আদালতকে কোর্ড অব সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১৫ ধারার বিধানটি বিবেচনায় নিতে হবে যে মামলাটি এখতিয়ার সম্পন্ন সর্বনি¤œ আদালতে দাখিল হয়েছে কিনা।
আরর্জি প্রত্যাখানের তাৎপর্য:
মামলার যে কোন পর্যায়ে আরর্জি প্রত্যাখান হতে পারে তবে অবশ্যই তা রায়ের পূর্বে। আরর্জি আদালত কর্তৃক অর্ডার ৭ রুল ১১ এর যে কোন এক বা একাধিক কারণে প্রত্যাখান হলে একই বিষযে বাদী নতুন করে মামলা করতে পারবেন যদি মামলাটির তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে না যায় বা বাদী প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে আপীলও করতে পারবেন। আবার বিবাদীর আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ মঞ্জুর না হলে বিবাদী সে আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট ডিভিশনে রিভিশন করতে পারবেন।
আরজি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে বাদীর প্রতিকার:
আদালত যদি উপরোক্ত কোন একটি কারণে আরর্জি প্রত্যাখান করেন তাহলে আরর্জি প্রত্যাখান আদেশের দ্বারা সংক্ষুব্ধ বাদি আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে অর্ডার ৭ রুল ১৩ অনুযায়ী আপীল করতে পারবেন বা মামলাটিন তামাদির মেয়াদ শেষ না হলে একই বিষয়ে নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারবেন। বাদি আপিল করতে পারবেন কেননা, আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ কোড অফ সিবিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ২(২) ধারা অনুযায়ী ডিক্রি বলে গন্য হয় এবং একই আইনের ৯৬ ধারা অনুসারে যে কোন ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা যায় সে জন্য আরর্জির প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।
আপীলের সময় কি আরর্জি সংশোধন করা যায়:
আপীলের সময়ও আরর্জি সংশোধন করা যায়।(১২ ডিএলআর পেজ ৭০৪)
।