বাংলাদেশের অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রায় ৬০% ফৌজদারী মামলার উদ্ভব হয় ভুমি সংক্রান্ত ঘটনা বা ঘটনার জের থেকে। ভুমি নিয়ে সাধারন জনগনের অজ্ঞতা, কিছু প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজস ও অন্যায় লাভে ভুয়া কাগজ-পত্র সৃষ্টি এবং সম্পদলোভী অপরাধীচক্রের অপকর্মের কারনে এসব অপরাধ প্রায়সই ঘটে থাকে। ভুমি সংক্রান্ত সাধারন কিছু তথ্য বা শব্দাবলি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি কিন্তু তার সঠিক ইতিহাস অনেকের জানা নেই। আসুন জেনে নেই এমন কিছু শব্দের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ব্যবহার।
C.S(Cadestral survey)-
১৮৮৮ খ্রিঃ সাল থেকে ১৯৪০ খ্রিঃ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের তত্ববধানে বাংলায় একটি ভুমি জরিপ হয় যাহাকে সিএস জরিপ বলে। রামু থানা থেকে শুরু হয়ে দিনাজপুরে এ জরিপ শেষ হয়। এটাই ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ভুমি জরিপ। এই জরিপে কৃত নক্সাকে সিএস নক্সা, খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলে।
R.S(Revision survey)-
১৯৪০ খ্রিঃ সাল থেকে ১৯৫২ খ্রিঃ সাল পর্যন্ত সিএস জরিপের সংশোধনী জরিপকে আরএস জরিপ বলে। ফরিদপুর, খুলনা ও বাকেরগঞ্জে এ জরিপ চলাকালে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বাংলা থেকে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করেন। এই জরিপে কৃত নক্সাকে আর,এস নক্সা, খতিয়ানকে আর,এস খতিয়ান বলে।
S.A(State aquisition)-
জমিদারী উচ্ছেদ হবার পর ১৯৫৬ খ্রিঃ সাল থেকে ১৯৬৩ খ্রিঃ সাল পর্যন্ত জমিদারদের নিকট থেকে অধিগ্রহণকৃত ভু-সম্পত্তির হিসাব নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ করা হয় তাকে এস,এ জরিপ বলে। এই জরিপে কৃত নক্সাকে এস,এ নক্সা, খতিয়ানকে এস,এ খতিয়ান বলে।
R.S(Revision survey)-
এস,এ জরিপের পর ১৯৬৫ সালে রাজশাহী হতে শুরু হয় ২য় আর,এস। এটি তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানব্যপি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা শহর জরিপে এসে আইনী জটিলতার কারনে এ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এই জরিপে কৃত নক্সাকে আর,এস নক্সা, খতিয়ানকে আর,এস খতিয়ান বলে।
D.C.R(Duplicate carbon receipt)-
উন্নয়ন কর বহির্ভুত সরকারী আয়ের জন্য দেয় যা দাখিলা নয় তাই ডিসিআর। যেমন হাট, বাজার, জলাশয়, জলমহাল ইত্যাদির ইজারা বা বন্দোবস্ত প্রদানের রশিদ।
B.S(Bangladesh survey)-
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জরিপের কাজ সমাপ্ত হলেও কিছু কিছু এলাকায় আইনী জটিলতায় এখনো এই জরিপ শেষ হয় নাই। সেমতে এটি এখন চলমান জরিপ।
Mutition বা জমা খারিজ-
জমিন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সাম্প্রতিক মালিকের নামে হালনাগাদ করাকে মিউটেশন বা জমা খারিজ বলে। ক্রয়কৃত ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে করা হয়।
খতিয়ান ও পরচা-
ভুমির হিসাব যখন সরকারের রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত থাকে তখন তাকে খতিয়ান এবং ব্যক্তির নিকট থাকে তখন পরচা বলে। উভয় ক্ষেত্রে একই বিষয় উল্লেখ থাকে। খতিয়ানের নকলই পরচা।
দাখিলা-
ভুমির খাজনা পরিশোধপত্রকে দাখিলা বলে। ১৯৭২ সাল থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভুমি মালিকানার খাজনা মওকুফ হলে ভুমির দখল স্বত্ব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ১৯৮২ সালে এক সামরিক ফরমান বলে খাজনার পরিবর্তে একই হারে ভুমি উন্নয়ন কর ধার্য করা হয়। উন্নয়ন কর পরিশেধের রশিদের নাম দাখিলা।
সায়রাত মহাল-
যে যে ভুমির জন্য ডিসিআর প্রদেয় তা সায়রাত মহাল। যেমন- বাজার, ঘাট, জলমহাল, বালুমহাল ইত্যাদি।