আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা, ২০০৭
(পরীক্ষাঃ ২রা জুন, ২০০৭)
সময়ঃ ৪ ঘন্টা, পূর্ণমানঃ ১০০
প্রশ্ন-১। যে কোন ৪ টি দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা করুনঃ ক) আইনানুগ প্রতিনিধি; খ) এক তরফা রায়; গ) মোকদ্দমা উৎপত্তির কারণ; ঘ) আরজি খারিজ; ঙ) বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা; চ) স্থানীয় তদন্ত; ছ) সেট অফ; জ) রিসিভার।
প্রশ্ন-২। ক) আরজি ও জবাব সংশোধন বলতে
আপনি কি বোঝেন?
খ) আরজি ও জবাব সংশোধনের ক্ষেত্রে নিয়ামক বিবেচনাগুলো কি?
গ) মূল আদালত
কর্তৃক মোকদ্দমার রায় ঘোষণার
পর কি আরজি বা জবাব
সংশোধনের কোন সুযোগ আছে?
প্রশ্ন-৩। বাদী হিসেবে X ঢাকার
১ম যুগ্ম
জেলা জজ আদালতে Y এর বিরুদ্ধে মোকদ্দমার ভূমিতে
স্বত্ব ঘোষণাপূর্বক খাস দখলের
প্রার্থনায় এই মর্মে একটি মোকদ্দমা করেন যে কিছু দিন পূর্বে
বিবাদী Y এবং তার লোকজন বলপূর্বক তাকে তার স্বত্বদখলীয় ভূমি থেকে
বেদখল করেছেন। মোকদ্দমার চূড়ান্ত শুনানীর জন্য
ধার্য দিনে
Y হঠাৎ অসুস্থ
হয়ে পড়ে এবং মোকদ্দমার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
পারেনি। ফলে মোকদ্দমাটি X এর অনুকূলে এক-তরফাসূত্রে ডিক্রী হয়। একতরফা রায় বাতিল করার
জন্য Y আপনাকে
এডভোকেট নিযুক্ত করেন।
Y এর পক্ষে সম্ভাব্য যে সব প্রতিকার উন্মুক্ত আছে সে-সব বিস্তারিত আলোচনা করুন। আপনার বিবেচনায় Y এর জন্য একতরফা ডিক্রী
বাতিল করার
জন্য সব থেকে সহজ ও কার্যকর পদক্ষেপ কোনটি?
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭
প্রশ্ন-৪। জলিল ২৬/০৫/১৯৯৮ ইং তারিখে
তার বাবার
মৃত্যুর দিন থেকে ওয়ারিশ সূত্রে
এক খণ্ড
জমির মালিক। স্থানীয় ভূমিদস্যু কামাল ২৬/০৫/২০০৭ ইং তারিখে জলিলকে ঐ জমি থেকে বলপূর্বক বেদখল এই বলে যে, সে জলিলের চাচা হেলাল
উদ্দিনের নিকট
থেকে ঐ জমিটি হালে খরিদ
করে ঐ জমির মালিক হয়েছে।
মোকদ্দমার প্রধান বৈশিষ্টগুলো উল্লেখ করে উপযুক্ত আদালতে দায়েরের জন্য জলিলের
পক্ষে একটি
আরজির মুসাবিদা করুন। এতে সংশ্লিষ্ট আইনের
উল্লেখসহ প্রধান
প্রতিকারের উল্লেখ
থাকতে হবে।
প্রশ্ন-৫। ক) দলিল বলতে
আপনি কি বোঝেন?
খ) কি কি কারণে এবং কে এইরূপ দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে
পারেন?
গ) বিরোধীয় দলিলে
পক্ষ আছেন
এমন কোন ব্যক্তি কি শুধুমাত্র দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে
ঘোষণামূলক ডিক্রীর প্রার্থনায় মামলায়
দায়ের করতে
পারেন?
প্রশ্ন-৬। রশিদ গুলশান থানাধীন বাড্ডা মৌজার
৭৬ নং দাগের জমিটির মালিক
দখলকার। বিগত জরিপে ঐ জমিটি ভুলবশত রশিদের
নামে রেকর্ড
না হয়ে তার প্রতিবেশী জামাল
এর নামে
রেকর্ড হয়েছে। নানা কারনে রশিদ এর সাথে জামালের সম্পর্ক বৈরী।
উপযুক্ত আদালতে দায়েরের জন্য রশিদের
পক্ষে একটি
আরজি প্রস্তুত করুন, যাতে
সংশ্লিষ্ট আইনের
উল্লেখসহ মূল প্রার্থনাসমূহ সংযোজিত থাকতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮
প্রশ্ন-৭। ক) প্রাথমিক তথ্য
বিবরণী এবং নালিশী দরখাস্তের প্রধান
বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা
করুন।
খ) প্রাথমিক তথ্য
বিবরণীর ব্যবহার ও গুরুত্ব পর্যালোচনা করুন।
গ) একটি ফৌজদারী মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করুন।
ঘ) তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলী
চার্জশীট গৃহীত
হবার পর পুশিল কি অতিরিক্ত Supplementary চার্জশীট দাখিল
করতে পারেন?
প্রশ্ন-৮। ক) অভিযোগ থেকে
অব্যহতি এবং বেকসুর খালাসের প্রার্থক্য নির্ণয় করুন।
খ) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ২৪১(ক) ধারার বিধান
মতে আসামীকে অব্যহতি দানের
বিষয়ে আদালত
কি কি বিষয় বিবেচনা করে থাকেন?
গ) চূড়ান্ত বিচারের পর বেকসুর
খালাসপ্রাপ্ত আসামীকে কি পুনর্বার একই অপরাধের অভিযোগে বিচার
করা যায়?
প্রশ্ন-৯। ক) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারার
পার্থক্য নির্ণায়ক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা
করুন।
খ) সাক্ষ্য প্রমাণ
গ্রহণের পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি বিবদমান পক্ষগণের মধ্যে
বিরোধীয় ভূমিতে
কার দখল বিদ্যমান তা নির্ণয়ে অসমর্থ হয়, সেক্ষেত্রে তিনি কি আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ
করবেন?
দন্ডবিধি, ১৮৬০
প্রশ্ন-১০। উদাহরণসহ যে কোন চারটি ব্যাখ্যা করুনঃ ক) সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ ইচ্ছা; খ) বেআইনী অন্তরীন ও বেআইনী লাভ; গ) আত্ম-রক্ষার অধিকার; ঘ) অপরাধ সংঘটনে
সহযোগিতা; ঙ) অপরাধজনক অনুপ্রবেশ এবং অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন; ছ) প্রতারণার প্রয়োজনে জালিয়াতি; জ) ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে অপহরণ;
প্রশ্ন-১১। দণ্ডবিধি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ
পূর্বক ‘প্রতারণা’ ও বিশ্বাসভঙ্গজনিত অপরাধ বিশ্লেষণ করুন,
পৃথক উদাহরণসহ।
প্রশ্ন-১২। দশজন ডাকাত মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত
হয়ে ইব্রাহিম মাস্টারের বাড়ীতে
ডাকাতি করে। ডাকাতি করাকালে বাড়ীর মেয়েছেলেদের গায়ে হাত না দেয়ার জন্য
ইব্রাহীম মাস্টার ডাকাতদের বিশেষ
অনুরোধ জানায়। ঐ সময় ডাকাত সর্দার
বন্দুক দিয়ে
ইব্রাহিক মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর ডাকাত দল লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে
চম্পট দেয়। বিচারের সময় আপনি ডাকাতদের বিরুদ্ধে কিভাবে
পৃথক চার্জ
গঠন করবেন। আপনার উত্তরের অনুকূলে কারণ
দর্শাতে হবে।
তামাদি আইন, ১৯০৮
প্রশ্ন-১৩। ক) ‘মামলাটি তামাদিতে বারিত’ বলতে
কি বোঝেন?
খ) যে ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য, সেক্ষেত্রে তামাদি
মওকুফের বিধানটি বিশ্লেষণ করুন।
গ) আবেদনকারীর মারাত্মক গাফিলতির জন্য
বহুদিনের তামাদি
আদালত মানবিক
কারণের আবরনে
মওকুফ করতে
পারেন কি?
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
প্রশ্ন-১৪। ক) স্বীকৃতি ও অপরাধ স্বীকারের মধ্যে
পার্থক্য নির্ণয়
করুন।
খ) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারামতে কোন আসামীর
অপরাধের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার
সময় যে সব আইনী আনুষ্ঠানিকতা একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের পালন করা প্রয়োজন, তা আলোচনা
করুন।
প্রশ্ন-১৫। ক) সাক্ষ্য আইনের
সংশ্লিষ্ট ধারার
আলোকে “এস্টোপেল” এবং “ওয়েভার”
মতবাদ বিশ্লেষণ করুন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ, ১৯৭২
প্রশ্ন-১৬। ক) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গঠন এবং কার্যাবলী পর্যালোচনা করুন।
খ) বার কাউন্সিলকে কি আইনজীবী সম্প্রদায়ের অভিভাবক বলা যেতে
পারে?
প্রশ্ন-১৭। পেশাগত আচরন ও সদাচরনের আলোকে একজন
এডভোকেটের প্রতি,
মক্কেলের প্রতি,
সহ-আইনজীবী এবং জনসাধারনের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব পর্যালোচনা করুন।
প্রশ্ন-১৮। মানিকগঞ্জের দায়রা জজ ‘এ’ এবং ‘বি’ কে দণ্ডবিধি আইনের
৩২০/৩৪ ধারামতে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে দশ হাজার
টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও দুই বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
আসামী ‘এ’ এবং ‘বি’ এর আত্মীয়
স্বজন উক্ত
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে
আপীল দায়ের
করার জন্য
হাইকোর্টে প্র্যাকটিসরত আইনজীবী এডভোকেট X এর কাছে
আসেন। এডভোকেট X এর সাথে চুক্তি হয় যে, ঐ বৈঠকেই এডভোকেট X আসামীদের আত্মীয়দের নিকট থেকে
নগদ ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার)
টাকা গ্রহণ
এবং আপীলের
যাবতীয় দায়িত্ব বুঝে নেন এবং সপ্তাহ খানেক
পরে এ ব্যাপারে খোজ নেয়ার
জন্য মক্কেলদের পরামর্শ দেন। এই সঙ্গেই বিরোধীয় রায়ের
জাবেদা নকল এবং নিম্ন আদালতের আইনজীবীর তৈরীকৃত হাত নথি এডভোকেট X সাহেবকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সাত দিন পর আসামীদের আত্মীয় স্বজন
আপীলের ফলাফল
জানার জন্য
এডভোকেট X এর চেম্বারে আসেন। ঐ সময় এডভোকেট X প্রকাশ করেন
যে, মামলাটি অত্যন্ত জটিল,
তাই তাকে
এজন্য আরও ১,৫০,০০ (দেড় লক্ষ) টাকা
দিতে হবে,
নইলে তিনি
আপীল দায়ের
করবেন না এবং কোন টাকাও
ফেরৎ দেবেন
না। ফলে উভয় পক্ষের
মধ্যে তর্কাতর্কি আরম্ভ হয়।
এক পর্যায়ে এডভোকেট X অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন
এবং আপীলের
কাগজ-পত্র
সব রাস্তায় ছুড়ে ফেলে
দেন এবং কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করে মক্কেলদেরকে ধাক্কা মেরে
তার চেম্বার থেকে বের করে দেন। বিষয়টির প্রধান প্রধান
বৈশিষ্টগুলো তুলে
ধরে বার কাউন্সিলের এডভোকেট X এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ
দায়ের করে তার উপযুক্ত শাস্তির প্রার্থনায় একটি
আবেদন পত্রের
মুসাবিদা প্রস্তুত করুন।