আইনের সংজ্ঞাঃ
এই শব্দটিকে বিভিন্ন
আইনবিদগন ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন । সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনবিদগন বলেছেন আইনের ব্যপকতা অনেক বড় তাই আইনের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নাই, তবে বিভিন্ন আইনবিদগন বিভিন্ন ধরনের আইনের সংজ্ঞা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোন আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোন প্রথা বা রীতি।
আবার সংবিধানের ১১১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যে কোন বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধঃস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হইবে। সুতরাং ‘আইন’ মানে আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশের আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোন প্রথা বা রীতি এবং উচ্চ আদালতের রায় ।
আইনের খসড়াকে বিল বলে। মন্ত্রীগণ সরকারি বিল উত্থাপন করেন আর বেসরকারি বিল উত্থাপনকারী হলেন সংসদ সদস্য। বেসরকারি বিলের জন্য ১৫ দিনের নোটিশ প্রয়োজন । সরকারি বিলের জন্য ৭ দিনের নোটিশ প্রয়োজন। ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্টপ্রতি সম্মতি দান করবেন।
আইন কি ? বিখ্যাত মনীষীগণ কি বলে সে আলোকে মনীষীগণের সংজ্ঞাগুলো নিচে দেওয়া হলো:-
৩৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিষ্টটল লিখেছিলেন, “আইনের শাসন যে কোন ব্যক্তি শাসনের চেয়ে ভাল”।
অধ্যাপক হল্যান্ড এর মতে- মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রনবিধি যা সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলবৎ করা হয়।
আইনবিদ স্যামন্ড এর মতে- আইন হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রয়োগকৃত নীতিমালা।
আইন হল (A body of rules of conduct of binding legal force and effect, prescribed, recognized, and controlling authority) কিছু নিয়ম কানুনের সমষ্টি যার মাধ্যমে বাধ্যকর শক্তি রয়েছে এবং যা কোন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা এর ফলাফল বর্ণনা , স্বীকৃত, এবং প্রয়োগ করা যায়।
জন অস্টিন আইনের সংজ্ঞা দিয়েছেন- আইন হল সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ।
তিনি তিনটি বিষয় তুলে ধরেছেন,
– the law is a command issued by the uncommanded commander_the sovereign;
-such commands are backed by threats of sanctions; and
– a sovereign is one who is habitually obeyed
আইনের প্রকার ও কি কি
আইন কত প্রকার:-
একটি দেশের আইনকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়
(১) সরকার সম্পর্কিত (Public Law) এবং
(২) ব্যাক্তি সম্পর্কিত (Private Law)
(১) সরকার সম্পর্কিত
রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের গঠন,কার্যাবলি, ক্ষমতা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন , সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, ও কার্যাবলী এবং রাষ্টের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে তাকে সরকার সম্পর্কিত আইন বলে।
সরকার সম্পর্কিত আইনের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ রয়েছে :-
ক) সাংবিধানিক (Constitutional ) এবং
খ) প্রশাসনিক ( Administrative )
(ক) সাংবিধাািনক আইনঃ সাংবিধানিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বোঝায় যা রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের গঠন,কার্যাবলি, ক্ষমতা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, ও কার্যাবলী এবং রাষ্টের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
(খ) প্রশাসনিক আইনঃ প্রশাসনিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বুঝায় যা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের শুধুমাত্র প্রশাসনিক দিক নিয়ন্ত্রন করে এবং অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব, তাদের মাঝে ক্ষমতার বন্টণ, ব্যক্তি এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাঝে সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
(২) ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন :-
ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্ধারণ করে অর্থাৎ নাগরিকের অধিকারগুলো রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে ব্যক্তি সম্পর্কিত আইন বলে। উদাহরণঃ Law of Contract, Law of Property, Law of Person ইত্যাদি ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন ।
ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন আবার দু’ ভাগে ভাগ করা যায় :-
(১) তত্ত্বগত আইন (Substantive Law ) এবং
(২) পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law)
১। তত্ত্বগত আইন: ব্যক্তির অধিকার সৃষ্টি করে বা সংজ্ঞায়িত করে তাকে তত্ত্বগত আইন বলে। যেমন- চুক্তি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ইত্যাদি।
২। পদ্ধতিগত আইন: অধিকারকে রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে। যেমন- দেওয়ানী কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি ইত্যাদি।
উদাহরণস্বরূপঃ কোন সম্পত্তিতে আমার অধিকার আছে কিনা তা তত্ত্বগত আইনের বিষয় কিন্তু কখন কোন আদালতে আমাকে মামলা করতে হবে তা নির্ধারণ করে পদ্ধতিগত আইন।