সাধারণত পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐপণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন কিংবা একই
পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে
পরিমাণে কম পাওয়া যায়। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলেমানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।
মুদ্রাস্ফীতি কেন হয়?
মুদ্রাস্ফীতির প্রধানত দুটি কারণে হয়ে থাকে: ১) চাহিদাজনিত এবং ২) মূল্য জনিত।
কোন দেশের অর্থনীতিতে মূল্যবৃদ্ধির জন্যসমানভাবেই দায়ী, তবে ভিন্নভাবে কাজ করে। যখন কোনপণ্যের চাহিদা গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়ে তখন "চাহিদাজনিত" কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে পণ্যের সরবরাহব্যয় বেড়ে গেলে মূল্য জনিত মূল্যবৃদ্ধি হয়।
চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি
চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের
সবচেয়ে বড় কারণ। চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি তখনই ঘটে
যখন পণ্য বা পরিষেবার জন্য ভোক্তার চাহিদা এত বেশি
বেড়ে যায় যে এটি সরবরাহের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যে সমস্ত
পরিস্থিতি চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে -
যখন মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে এবং এরফলে তার চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
কালোবাজারি যত হবে জিনিসের দাম তত বাড়ে।বাংলাদেশ এবং ভারতে প্রায়ই খাদ্যশস্যের মুদ্রাস্ফীতিদেখা যায়, এর অন্যতম কারণ কালোবাজারি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
সরকারের খরচ বৃদ্ধি। এরফলে সেই টাকাটাজনগণের পকেটে আসে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত "ফিসকাল স্টিমুলাস" বাঅর্থনৈতিক ভর্তুকি দিলে জিনিসের দাম বাড়ে।
সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্যিক ঋণ বাড়লে।
মুদ্রাস্ফীতি মানে অনেক টাকা বাজারে ঘুরছে। সেক্ষেত্রে(ডলারের সাপেক্ষে) টাকার দাম কমবে।
সুতরাং, গ্রাহকরা যখন অতিরিক্ত ব্যয়যোগ্য অর্থ আয়
করেন তখন চাহিদা জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। মানুষের হাতে ব্যয় করার জন্য অতিরিক্ত অর্থের যোগান থাকলে তখন
মানুষ আরও পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয় করতে চায় এবং তাদের সেই ক্ষমতা থাকে।
মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতি
বাজারে যখন কোন পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদার সৃষ্টি হয়এবং তার সঙ্গে যৌথভাবে পণ্যের সরবরাহে প্রভূত ঘাটতিদেখা দেয়, তখন সেই পরিস্থিতিতে প্রস্তুতকারককে পণ্য বাপরিষেবার দাম বাড়ানোর একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়এবং মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। তবে মূল কারণ হলো- যখন কোনো জিনিস তৈরি করতে যে সামগ্রীগুলো লাগেতার দামের যখন বৃদ্ধি পায়, তখন সামগ্রিকভাবে দ্রব্যটিরমূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে প্রধানত চারটি বস্তু লাগে, যথা- Land, Labour, Capital and Entrepreneur. একে আমরা বলি "ফ্যাক্টর অব প্রডাকশন"। এই সবমিলিয়ে যে খরচটা হয়, সেটাকে বলে " ফ্যাক্টর কস্ট"।ফলে এখানে যদি কোনো কিছুর দাম বাড়ে, তাহলে ওইফ্যাক্টর কস্টও বাড়বে। পাশাপাশি সেই দ্রব্যটি যখনবাজারে আসে তখন তার ওপর সরকার চাপায় অপ্রত্যক্ষকর। তারপর সেটার বাজারি মূল্য("মার্কেট প্রাইস") ঠিকহয়। এবার যদি সরকার ট্যাক্স বাড়ায় তাহলেও জিনিসেরদাম বাড়বে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ তেলেরদাম বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ হতে পারে। খনিজ তেলের দামবাড়া মানেই ট্রান্সপোর্ট বা পরিবহনের দাম বেড়ে যাওয়া।পাশাপাশি মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতিতে অবদানকারী আরোকিছু কারণগুলি হল:
১। মজুরি মূল্যবৃদ্ধি যা বেতন বৃদ্ধি করে।
২। একচেটিয়া বাজার তৈরির ক্ষমতাও মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতির কারণ।৩। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উৎপাদনের পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ করে সাময়িক ভাবে মূল্য জনিত মূল্যস্ফীতি তৈরি করে।
৪। ক্রমাগত প্রাকৃতিক সম্পদের সংস্থান হ্রাসও মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান কারণ।
৫। তাছাড়া, যখন কোনও দেশ তার মুদ্রার বিনিময় হার কমায়, তখন তা আমদানিতে মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করে।অর্থাৎ, সরবরাহ হ্রাস পেলে বাজারে তা একটি ঘাটতি সৃষ্টি করে এবং ফলে মূল্য জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। উৎপাদকরা তাদের পণ্য বা পরিষেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দাম বাড়ায়।