আরজির সংজ্ঞা:
নালিশের কারন সম্বলিত আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতি যার ভিত্তিতে যদি কোন প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরর্জি বলা হয়। আইনে আরর্জির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। আরর্জি হল মামলার ভিত্তি যার উপর প্রতিকার প্রাপ্তি নির্ভর করে। আইনের বিধান অনুসরণ করে আরর্জি তৈরী করতে হয়। এর কোন ব্যত্যয় হলে আদালত আরর্জি গ্রহন নাও করতে পারেন।
মামলার কারণ ও বিবরণ একটি আরজিতে লিপিবদ্ধ করে তা আদালতে দায়ের করে মামলা রুজু করতে হয়। ইহার বিধান রয়েছে অর্ডার-৭,রুল-১১ তে। ইহাতে মোকদ্দমার কারণ উল্লেখ না থাকলে মামলা খারিজ হয়।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখপূর্বক প্রতিকার চেয়ে যে দরখাস্তমূলে দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা রুজু করা হয় তাকে আরর্জি বলে।
আরজির বিষয়বস্তু:
৭ আদেশের ১ বিধি অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আরজিতে উল্লেখ করতে হবে:
ক) যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে আদালতের নাম।
খ) বাদীর নাম ,পরিচয় ও বাসস্থান।
গ) বিবাদীর নাম পরিচয় ও বাসস্থান (যতদূর জানা যায়)।
ঘ) বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা মানসিক বিকারগ্রস্থ হলে সে মর্মে বিবৃতি।
ঙ) যে ঘটনাবলী মামলার কারণ সমূহের সৃষ্টি করে থাকে এবং যখন এগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে।
চ) যে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে সে আদালতের যে এই মামলা বিচারের এখতিয়ার রয়েছে সেই মর্মে বিবৃতি।
ছ) মামলায় বাদীর প্রার্থীত প্রতিকার।
জ) দাবীর কোন অংশ বর্জন করা হলে সেই মর্মে বিবৃতি।
ঝ) ঝঁরঃ ঠধষঁধঃরড়হ অপঃ অনুযায়ী মামলার মূল্য এবং ঈড়ঁৎঃ ভববং অপঃ অনুযায়ী দাবীর মূল্য বিষয়ে বিবৃতি।
ঞ) যদি বাদী প্রতিনিধিত্ব কোন মামলা করে থাকেন সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ের উপর বাদীর স্বার্থ আছে উক্ত বিষয়ের বর্ণনা এবং বাদী মামলা করতে সক্ষম সেই বিষয়েও একটা বর্ণনা।
ট) যদি মোকদ্দমা কোন অর্থ আদায়ের মোকদ্দমা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে উক্ত অর্থের পরিমান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
ঠ) যদি বাদী কোন সেট অব অনুমোদন করে থাকে বা উহার কোন দাবীর অংশ পরিত্যাগ করে থাকে তাহলে এরুপ অনুমোদিত ও পরিত্যাগকৃত অংশের পরিমান উল্লেখ করতে হবে।
ড) যদি অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে মামলা করা হয়ে থাকে তবে তার যথাযথমূল্য বা পরিমান।
ঢ) যদি মোকদ্দমাটি কোন স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সম্পত্তিটি সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত বিবরণ।
ণ) যদি মোকদ্দমাটি সময় দ্বারা বারিত হয়ে থাকে ,তবে উহা হতে অব্যাহতি পাবার কারণগুলো উল্লেখ করতে হবে।
ত) সত্য পর্বের স্বাক্ষর ও তারিখ সম্বলিত হতে হবে।
আরজির প্রত্যাখ্যান ও আরজি ফেরত :
নালিশের কারণ সম্বলিত আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতি যার ভিত্তিতে যদি কোন প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরর্জি বলা হয়। আইনে আরর্জির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। আরর্জি হল মামলার ভিত্তি যার উপর প্রতিকার প্রাপ্তি নির্ভর করে। আইনের বিধান অনুসরণ করে আরর্জি তৈরী করতে হয়। এর কোন ব্যত্যয় হলে আদালত আরজি গ্রহন নাও করতে পারেন। কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের অর্ডার ৭ এর ১১ বিধিতে উল্লেখিত কারণে আরজি প্রত্যাখানের আদেশ এবং একই অর্ডারের ১০ বিধিতে আরর্জি ফেরতের ক্ষমতা আদালত প্রয়োগ করতে পারেন। আদালত মামলা বিচারার্থে গ্রহন করে সমন জারির পূর্বে মামলাটি তার আঞ্চলিক,আর্থিক এবং বিষয়বস্তুগত এখতিয়ারের মধ্যে দাখিল হয়েছে কিনা তা নিরুপণ পূর্বক যথাযথ আদালতে বিচারার্থে দাখিলের জন্য যদি কোন আদেশ দেয় তাকে আরর্জি ফেরত বলে এবং কোন মামলা দাখিলের পর আদালত কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১ বিধি অনুযায়ী পাঁচটি কারণের কোন এক বা একাধিক কারণে যদি মামলা বিচারার্থে গ্রহন না করেন তাকে আরর্জি প্রত্যাখ্যান বলে।
নিম্নে উভয বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
আরর্জি প্রত্যাখান:
আরর্জি প্রত্যাখানের সুনির্দিষ্ট কারণসমূহ কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর অর্ডার-৭,রুল-১১ তে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,আরর্জি নি¤Œলিখিত কারণে প্রত্যাখান করা যাবে:
ক) আরর্জিতে মামলার কারণ উল্লেখ না থাকলে;
খ) আরর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য কম উল্লেখ থাকলে এবং আদালতের নির্দেশমত বাদী নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করতে ব্যর্থ হলে;
গ) আরর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য যথার্থ উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজন অপেক্ষা কম মূল্যের স্ট্যাম্পে আরজি লেখা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশমত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প সরবরাহে বাদী ব্যর্থ হলে;
ঘ) আরর্জির বিবৃতি অনুযায়ী মামলা কোন আইনে নিষিদ্ধ বলে প্রতীয়মান হলে এবং
অর্ডার ৭ রুল ৯(১এ) এর কোন একটি বিধান প্রতিপালিত না হলে এবং আদালত কর্তৃক নির্দের্শিত হওয়ার পরেও দেয় সময়ের মধ্যে যদি বাদী তা প্রতিপালনে ব্যর্থ হয়।(আরর্জি প্রত্যাখানের (ই) নং বিধানটি আমাদের বাংলাদেশ কোর্ডে উল্লেখ নাই বা সাধারণ দেওয়ানী কার্যবিধি বই গুলোতে উল্লেখ নাই কিন্তু ২৫/০৭/১৯২৭ ইং তারিখে ১০৮২৮ -জি নং নোটিফিকেশন দ্বারা কলকাতা হাইকোর্ট অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এ সংযোজিত করেন)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত যে কোন একটি কারণে আদালত আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ দিতে পারেন।
নজীর:
সাধু বনাম ধিরেন্দ্র,৫৫ সি ৫৯০ মামলায় ইহা সিন্ধান্ত হয যে, সমন জারির পূর্বে ইহা আদালতের কর্তব্যের মধ্যে পরে যে, আরর্জিতে নালিশের কারণ সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কিনা বিবাদির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে কিনা এবং আরর্জি প্রত্যাখান বা সংশোধনের উহা ফেরত প্রদান উচিত কিনা। ১১ বিধির কারণগুলো আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মেদিনিপুর জমিদারী কোম্পানী বনাম সেক্রেটারি অফ স্ট্রেট ৪৪ সি ৩৫২ মামলায়। আরর্জি প্রত্যাখানের পূর্বে আদালত আরর্জির বক্তব্য এবং আরর্জির সাথে দাখিলী দলিলাদি বিবেচনায় নিবেন কিন্তু বিবাদীর দাখিলী কোন দরখাস্ত বক্তব্য বা দাখিলী জবাবের কোন দাবীকে আদালত বিবেচনায় নিবেন না।
আরর্জি ফেরত: কোর্ড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের অর্ডার ৭ ,রুল ১০ এ বলা আছে আদালত মামলার যে কোন পর্যায়ে যথাযথ আদালতে দাখিলের জন্য আরজি ফেরত দিতে পারেন এবং ফেরত দেওয়ার সময় মামলা দাখিল এবং ফেরতের তারিখ আরর্জিতে লিখে দাখিলকারী পক্ষের নাম লিখবেন এবং ফেরতের কারণ সংক্ষিপ্তকারে লিখবেন। এভাবে একটি আরর্জি ফেরত দিবেন। এখানে শুধুমাত্র আদালত আরর্জি কখন এবং কিভাবে ফেরত দিবেন তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কথা বলা হয়নি কোন কোন কারণে আরর্জি ফেরত দেওয়া যাবে। অর্থাৎ এই বিধান দ্বারা আদালতকে আরর্জি ফেরতের ক্ষমতাবান করা হয়েছে কিন্তু বলা হয়নি ঠিক কোন অবস্থায় আদালত এই ক্ষমতার প্রযোগ করবেন। আমরা যদি কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর সিভিল কোর্ট এ্যাক্ট,১৮৮৭ এর বিভিন্ন বিধান দেখি তাহলে দেখতে পাব যে আদালতকে এই দুইটি আইনের বিধান থেকে ঠিক করবেন কেন আরর্জি ফেরত দিবেন। আরর্জি ফেরতের আগে আদালতকে কোর্ড অব সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১৫ ধারার বিধানটি বিবেচনায় নিতে হবে যে মামলাটি এখতিয়ার সম্পন্ন সর্বনি¤Œ আদালতে দাখিল হয়েছে কিনা।
আরর্জি প্রত্যাখানের তাৎপর্য:
মামলার যে কোন পর্যায়ে আরর্জি প্রত্যাখান হতে পারে তবে অবশ্যই তা রায়ের পূর্বে। আরর্জি আদালত কর্তৃক অর্ডার ৭ রুল ১১ এর যে কোন এক বা একাধিক কারণে প্রত্যাখান হলে একই বিষযে বাদী নতুন করে মামলা করতে পারবেন যদি মামলাটির তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে না যায় বা বাদী প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে আপীলও করতে পারবেন। আবার বিবাদীর আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ মঞ্জুর না হলে বিবাদী সে আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট ডিভিশনে রিভিশন করতে পারবেন।
আরজি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে বাদীর প্রতিকার:
আদালত যদি উপরোক্ত কোন একটি কারণে আরর্জি প্রত্যাখান করেন তাহলে আরর্জি প্রত্যাখান আদেশের দ্বারা সংক্ষুব্ধ বাদি আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে অর্ডার ৭ রুল ১৩ অনুযায়ী আপীল করতে পারবেন বা মামলাটিন তামাদির মেয়াদ শেষ না হলে একই বিষয়ে নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারবেন। বাদি আপিল করতে পারবেন কেননা, আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ কোড অফ সিবিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ২(২) ধারা অনুযায়ী ডিক্রি বলে গন্য হয় এবং একই আইনের ৯৬ ধারা অনুসারে যে কোন ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা যায় সে জন্য আরর্জির প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।
আপীলের সময় কি আরর্জি সংশোধন করা যায়:
আপীলের সময়ও আরর্জি সংশোধন করা যায়।(১২ ডিএলআর পেজ ৭০৪)
প্রশ্ন-২ প্লীডিংস বলতে কি বুঝ? প্লীডিংস এর উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর। আরর্জি ও প্লীডিংস এর মধ্যে পার্থক্য লেখ। কোন অবস্থায় মামলার প্লীডিংস সংশোধনের আবেদন মঞ্জুর অথবা অগ্রাহ্য হতে পারে? প্লীডিংস সংক্রান্ত মৌলিক নিয়মাবলী ব্যাখ্যা কর। আপীল আদালত কি এরুপ সংশোধন করা যায়?
দেওয়ানী কাযবিধি আইনের ৬ আদেশের ১ নং বিধিতে প্লীডিংস এর সংজ্ঞা, ২ নং বিধিতে প্লীডিংস এর মৌলিক নিয়মকানুন এবং ৩ নং থেকে ১৩ নং বিধিতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্লীডিংস এ অতিরিক্ত সংযোজনের বিষয়ে বলা হয়েছে।
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কাযবিধি আইনের প্রথম তফসিলের ৬ আদেশের ১ নং বিধিতে প্লীডিংস সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,
Pleadings Shall Mean Plaint Or Written Statement অর্থাৎ আরর্জি বা লিখিত বিবৃতিকে প্লিডিংস বলা হয়।
বাদী কর্তক দাখিলীয় আরজি এবং বিবাদী কর্তৃক দাখিলীয় লিখিত বিবৃতিকে একত্রে প্লিডিংস(আরজি জবাব) বলা হয়।
বাদীর প্লীডিংস বলতে বুঝায় বাদীর মামলায় দাখিল করা আরজি বা লিখিত বর্ণনা এবং বিবাদীর প্লীডিংস বলতে বুঝায় বিবাদী কর্তৃক দাখিল করা জবাব বা লিখিত বর্ণনা।
আইন বিদ মোখার
একটি মামলায় প্রত্যেক পক্ষগন কর্তৃক লিখিত আকারে দাখিলকৃত বর্ণনাই হল প্লীডিংস। যেখানে বিচারে প্রত্যেক পক্ষের বাদানবাদ উল্লেখ করা হয় এবং ঐ পক্ষের প্রতিপক্ষ কর্তৃক জবাব প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয়াদির বিবরণ দেয়া থাকে।
বাদীর আরর্জিতে নালিশের কারণ এবং প্রার্থিত প্রতিকারের বিষয় উল্লেখ থাকে। পক্ষান্তরে, বিবাদীর লিখিত বর্ণনায় বাদীর দাবীকে আইনত প্রতিহত করার যাবতীয় তথ্যাদি বিবৃত থাকে। একটি মামলায় আরর্জি ও লিখিত জবাবের বিষয় বস্তুকে যথাক্রমে বাদী ও বিবাদীর প্লীডিংস বলা হয়।
প্লীডিংস এর উদ্দেশ্য:
প্লিডিংস এর উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরুপ:
১)বিচার্য বিষয় প্রণয়ন করা
২)তর্কিত বিষয় নির্ধারণ করা
৩) ঘটনা বর্ণনা করা আইন উল্লেখ না করা
৪) বাদীর প্রতিকার প্রার্থনা করা
৫) বিবাদীর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা
৬) অন্তবর্তীকালীন প্রতিকার প্রার্থনা করা
৭) ওহংঢ়বপঃরড়হ ও উদঘাটন করা।
*প্লীডিংস এর মৌলিক নিয়মাবলী:
৬ আদেশের ১৪ ও ১৫ বিধিতে প্লিডিংস এর নিয়মাবলা বিবৃত হয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির ৬ আদেশের ১৪ বিধি অনুযায়ী প্লিডিংস সংশ্রিষ্ট পক্ষ তার এ্যাভোকেট (যদি থাক) কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে। কোন কারণে পক্ষগনের স্বাক্ষ না দেয়া হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে পরেও স্বাক্ষর দেয়া যাবে। স্বাক্ষর না থাকার কারেণে প্লিডিং প্রত্যাখ্যা হয না।
দেওযয়ানী কার্যবিধির ৬ আদেশের ১৫ বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক প্লিডিংএর শেষে পক্ষগন সত্রপাঠে স্বাক্ষর করবেন।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন আদালতের সিন্ধান্তের মাধ্যমে নি¤Œলিখিত বিধিগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে:
১) প্লীডিংস এ ঘটনার উল্লেখ থাকবে কিন্তু আইনের উল্লেখ থাকে না।
২) উল্লেখিত ঘটনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হতে হবে।
৩) প্লীডিংস এ সাক্ষ্যের কোন উল্লেখ থাকবে না।
৪) ঘটনাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করতে হবে।
৫) আইনগত ওজর আপত্তি যেমন- নিবৃত্তির নিিত,তামাদি ,রেস জুডিকাটা ইত্যাতির বিষয় পিইডঙ এ উত্থাপন করা যাবে।
৬) যেখানে কোন পক্ষ ভুল বিবরণ,জালিযাতি,বিশ্বাসভঙ্গ,অবৈধ প্রভাব ইত্যাতির উপর নির্ভও করেছে সেখানে তার বিশদ বিবরণ প্লিডিংস এ থাকতে হবে এব্যাপাওে শুধুমাত্র অভিযোগ উত্থাপন করলেই হবে না।
*কখন প্লীডিংস এর সংশোধনের আবেদন অগ্রাহ্য হতে পারে:
নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে প্লিডিংস সংশোধনের আদেশ দেয়া যায় না:
১) যেক্ষেত্রে অত্যাধিক বিলম্বে সংশোধনের আবেদন করা হয়।
২) যে ক্ষেত্রে দসংশোধনের জন্য আবেদনকারীর অসৎ উদ্দেশ্য থাকে।
৩) যে ক্ষেত্রে মামরার প্রকৃত কারণ বা চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
৪) যে ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার বিঘিœত হতে পারে।
৫)যেক্ষেত্রে সংশোধন গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় না।
তবে ন্যায় বিচারের স্ভার্থে আদালত অপর পক্ষের সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে মামলার যে কোন পর্যাযে প্লিডিংস সংশোধন করতে পারেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যতদূর সম্ভব নমনীয় মনোভাব গ্রহন করা বাঞ্জনীয় বলে উপমহাদেশের বিভিন্ন হাইকোর্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এইভাবে,উল্লেখিত বিধান সাপেক্ষে প্লিডিং সংশোধন বা সংশোধন মঞ্জুর করা যায়।
আরজির জবাব সংশোধন করা যায় কি:
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কাযবিধি আইনের প্রথম তফসিলের ৬ আদেশের ১ নং বিধিতে প্লীডিংস সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বরা হয়েছে যে,
Pleadings Shall Mean Plaint Or Written Statement অর্থাৎ আরর্জি বা লিখিত বিবৃতিকে প্লিডিংস বলা হয়।
বাদী কর্তক দাখিলীয় আরজি এবং বিবাদী কর্তৃক দাখিলীয় লিখিত বিবৃতিকে একত্রে প্লিডিংস(আরজি জবাব)বলা হয়।
বিরোধীয় বিষয়ে উভয় পক্ষের দাখিলীয় বক্তব্যে কখনো কখনো কিছু ভুলভ্রান্তি দেখা দেয়,এ সকল ভুলভ্রান্তি সংশোধন না করলে ফলপ্রসূ প্রতিকার বাদী বা বিবাদী লাভ করতে পারে না। তাই প্লিডিংস(আরজি জবাব) সংশোধন করা একান্ত প্রয়োজন হয়।
প্লিডিংস সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের কিছু কিছু বিষয় সতর্কতার সহিত বিবেচনায় নিতে হয। এ সকল বিষয়গুলি নিচে দেওযা হল-
ক) প্রস্তাবিত সংশোধনটি প্রকৃত বিরোধ নির্নয়ে আবশ্যক।
খ) সংশোধনটি অপর পক্ষের ক্ষতির কারন হবে না।
গ) সংশোধনের ফলে বিবাদী পক্ষের অনুকূলে জন্মানো কোন আইনগত অধিকার নষ্ট হবে না।
ঘ) সংশোধনের ফলে মামলার প্রকৃতি ও চরিত্র পরিবর্তিত হবে না।
ঙ) সংশোধনের ফলে নতুন ও অসামজ্ঞস্য মামলার আবতারণা হবে না।
চ) সংশোধনটি সরল বিশ্বাসে বিরম্ব না ঘটানোর উদ্দেশ্যে আনীত হয়েছে।
উপরোক্ত এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে বা কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্লিডিংস(আরজি জবাব) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন।
আদেশ ৬ বিধি ১৭
দেওয়ানী কার্যবিধির অর্ডার ৬ রুল ১৭ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে মামলার যে কোন পর্যায়ে আদালত কোন পক্ষকে আরজি জবাবের ন্যায় সঙ্গত সংশোধনের অনুমতি দিতে পারেন। কাজেই বিচারিক আদালতের রায়ের পর সংক্ষুদ্ধ পক্ষ আপীল আদালতেও আরজি ও জবাব সংশোধন করতে পারবে।
নজির:
বিচারিক আদালত রায় ঘোষনার পর প্লিডিংস সংশোধন করতে পারবেন। প্লিডিংস সংশোধনের দরখাস্ত মামলার যে কোন পর্যায়ে মঞ্জুর করা যেতে পারে যদি তা অপর পক্ষের কোন কোন ক্ষতির কারণ না হয়ে থাকে (গেরাম হাফিজ বনাম খাদেম আলী ২৯ ডিএল আর,এসসি,৩১১)। প্লিডিংস সংশোধনের দরখাস্ত বিচারের পূর্বে,বিচারের সময়ে অথবা বিচারের পরে অথবা আপীলে অথবা রিভিশনে (কাজল দাস বনাম মনোয়ারা,৮ বিএলসি ৪১৪,গুরু মিয়া বনাম শামসুল ইসলাম,৯ এম এলআর,৩৩৮), অথবা আপীলেট ডিভিশনে এমনকি জারী কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও সংশোধন করা যায়। বাটোয়ারা মামলার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত ডিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বটোয়ারার একটি মামলা বিচারাধীন থাকে এবং হানিফ আলী বনাম হাজেরা ,৫৫ ডিএলআর পৃষ্ঠা ১৭ মামরায় ইহা সিন্ধান্ত হয যে, প্লিলিমিনারী ডিক্রি হওয়ার পরেও আরর্জি সংশোধন করা যায়। তাই ইহা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বিচারিক আদালত রায় ঘোষনার পরেও প্লিডিংস সংশোধন করতে পারেন।