বিচারপতি মােহাম্মদ গােলাম রাব্বানী (১৯৩৭)। আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬০ সালে এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০০২ সালে অবসর নেন। মুসলিম ব্যক্তিক আইনের বেশ কিছু সময়ােপযােগী ব্যাখ্যা এসেছে তার দেয়া কয়েকটি রায়ে । ফতােয়াসংক্রান্ত তার দেয়া রায়টি জনস্বার্থে অনেক বড় অর্জন ধরা হয়। রায়টিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত দেন যে, আদালত ছাড়া কোনাে ব্যক্তি মুসলিম আইনের ব্যাখ্যা কিংবা সিদ্ধান্ত—যা ফতােয়া নামে পরিচিত—দেয়ার অধিকারী নন।
আমি হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হওয়ার পরে বােধকরি সর্বপ্রথম উল্লেখযােগ্য যে রায় দেই তার শিরােনাম হচ্ছে হেফজুর রহমান বনাম শামশুন নাহার। রায়টি ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশনস’-এর ১৫ খণ্ডের ৩৪ পৃষ্ঠায় ও ‘ঢাকা ল’ রিপাের্টস’-এর ৪৭ খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়। হেফজুর রহমানের সঙ্গে শামশুন নাহারের ১৯৮৫ সালে বিয়ে হয় এবং ১৯৮৭ সালে এই দম্পতিদের একটি পুত্র সন্তান হয়। হেফজুর রহমান ১৯৮৮ সালে শামশুন নাহারকে তালাক দেয়। তিন মাস পরে শামশুন নাহার দেনমােহর, ইদ্দতকালীন ভরণপােষণ ও পুত্রের ভরণপােষণ আদায়ের প্রার্থনায় হেফজুর রহমানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সহকারী জজ আদালতে মােকদ্দমা করে এবং নিজ অনুকূলে ডিক্রি পায়। ডিক্রির বিরুদ্ধে হেফজুর রহমান জেলা জজ আদালতে আপিল করে এবং আপিল আদালত কর্তৃক ডিক্রির টাকা হ্রাস হয়, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে হেফজুর রহমান হাইকোর্ট বিভাগে দেওয়ানি রিভিশন করে। অতঃপর সিভিল রিভিশনটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য আমাদের বেঞ্চে উপস্থাপিত হয়। আমরা সুয়ােমুটু বা স্বউদ্যোগে একটি বিচার্য বিষয় স্থির করি যে শামশুন নাহার কি ইদ্দতকালের অধিক ভরণপােষণ দাবি করতে পারে? এবং শামশুন নাহারে পক্ষে কুরআনের এই আয়াতটির উদ্ধৃতি দেই : “ওয়া লিমুল্লাকৃতি মাতাউ’ বিল্ মারূাফি, হাক্বক্বান আলাল মুত্তাক্বীন” (২:২৪১) এবং আয়াতটির শব্দগুলাের আভিধানিক অর্থ দেই। যথা, মুত্বাল্লাক্কাত-তালাকপ্রাপ্তা মহিলা; মাতাউন-ভরণপােষণ এবং মা'রূফ-ন্যায়সংগত। সুতরাং আয়াতটির অর্থ হচ্ছে : “আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য ন্যায়সংগত ভরণপােষণ দেয়া ন্যায়নিষ্ঠদের কর্তব্য।”
অতঃপর লাহাের হাইকোর্টের একটি রায় (যা ১৯৬০ সালের ‘পাকিস্তান লিগ্যাল ডিসিশনস’-এর লাহাের খণ্ডের ১১৪২ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত) থেকে উদ্ধৃতি দেই যার আংশিক উদ্ধৃতি এখন দিচ্ছি : “যদি তেরশ বা বারশ বছর আগে জীবিত ভাষ্যকারগণের প্রদত্ত পবিত্র কুরআনের ভাষ্যকে চূড়ান্ত বিবেচনা করা হয় তবে ইসলামি সমাজ একটি লৌহপিঞ্জরে রুদ্ধ থাকবে এবং যদি সময়ের সঙ্গে ইসলামের ক্রমবিকাশকে বন্ধ করা হয় তাহলে ইসলাম আর বিশ্বজনীন ধর্ম থাকবে না এবং সে বিগত আবির্ভূতকালে ও স্থানে আবদ্ধ থাকবে।” সর্বশেষে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত.....?
অতঃপর লাহাের হাইকোর্টের একটি রায় (যা ১৯৬০ সালের ‘পাকিস্তান লিগ্যাল ডিসিশনস’-এর লাহাের খণ্ডের ১১৪২ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত) থেকে উদ্ধৃতি দেই যার আংশিক উদ্ধৃতি এখন দিচ্ছি : “যদি তেরশ বা বারশ বছর আগে জীবিত ভাষ্যকারগণের প্রদত্ত পবিত্র কুরআনের ভাষ্যকে চূড়ান্ত বিবেচনা করা হয় তবে ইসলামি সমাজ একটি লৌহপিঞ্জরে রুদ্ধ থাকবে এবং যদি সময়ের সঙ্গে ইসলামের ক্রমবিকাশকে বন্ধ করা হয় তাহলে ইসলাম আর বিশ্বজনীন ধর্ম থাকবে না এবং সে বিগত আবির্ভূতকালে ও স্থানে আবদ্ধ থাকবে।” সর্বশেষে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত.....?
বিচারপতি রাব্বানীর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: মুনাজাত মঞ্জুষা (খােশরােজ কিতাব মহল), Journey Within Islam (UPL), 7771016-17 দুঃখের বিচার (মাওলা ব্রাদার্স), স্বাধীনতা (প্যাপিরাস), বাংলার যে মুখ আজীবন দেখিলাম (গণপ্রকাশনী), ছহি মুক্তিযুদ্ধনামা (মাওলা ব্রাদার্স), The Code of Civil Procedure: Concept, Comment & Case (DLR), 799/67702 বাংলাদেশের সংবিধান : সহজ পাঠ (উন্নয়ন সমন্বয়)।